নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে রয়েল রিসোর্টে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করার ঘটনায় সোনারগাঁও এলাকা থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। দিনভর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে উত্তেজনা বিরাজ করেছে। মামুনুল হকের ওপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে রোববার দুপুরে মাওলানা মামুনুল হকের পক্ষে সোনারগাঁও থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ঢাকা ১০ আসনের হেফাজত নেতা মুফতি ফয়সাল মাহমুদ হাবিবী।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোনারগাঁওয়ে তিন শতাধিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। হেফাজত ইসলাম ও মাদরাসা ছাত্ররা ছোট ছোট পিকআপভ্যানে মহড়া দিচ্ছেন। কর্মীরা মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন। এদিকে আওয়ামী লীগ কার্যালয় ও যুবলীগ ছাত্রলীগ নেতাদের বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গাড়ি ভাংচুরের ঘটনার পর রোববার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল কায়সার, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও স্বাচিপের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা: আবু জাফর চৌধুরী বিরুসহ নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তারা ভাংচুরের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন।
অন্যদিকে সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাংচুরের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। রোববার বিকেলে মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা এলাকায় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে এ প্রতিবাদ সভায় নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত শহীদ মো: বাদল, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল কায়সার, যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম, সদস্য ডা: আবু জাফর চৌধুরী বিরুসহ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। তারা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান।
এর আগে মামুনুল হককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে গত শনিবার রাতেই সোনারগাঁয়ের মোগরাপাড়া চৌরাস্তায় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে অবস্থান নেয় হেফাজতের কয়েক শ’ কর্মী-সমর্থক। তারা উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালায়। সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া সংবাদকর্মীদের ধাওয়া দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। রাতে সোনারগাঁয়ে মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা এলাকা ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়েছে।
জানা যায়, হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক শনিবার বিকেলে তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে সোনারগাঁওয়ের রয়েল রিসোর্টে যান। এ খবরে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মামুনুল হককে আটক করে অবরুদ্ধ করে তার সাথে খারাপ আচরণের অভিযোগ উঠে।এ ঘটনাটি ফেসবুকে ভাইরাল হলে সন্ধ্যায়
হেফাজতের কয়েক শ’ কর্মী-সমর্থকরা রয়েল রিসোর্টে হামলা ও ভাংচুর করে মামুনুল হককে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়।
রাতে মোগরাপাড়া চৌরাস্তা জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মহিউদ্দিন খান ও মাওলানা ইকবালের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নেমে আসে। প্রতিবাদে তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। তাদের ইট-পাটকেল নিক্ষেপে পথচারী ও সংবাদকর্মীসহ ১৫ জন আহত হন। রাতে সড়কে টায়ার ফেলে তাতে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে। ভাঙচুর চালানো হয়েছে যুবলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম নান্নুর রেস্তরাঁ, বাড়ি, ছাত্রলীগ নেতা সোহাগ রনির বাড়ি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়সহ আরো কয়েকটি দোকানে।
সংবাদ সংগ্রহের জন্য গেলে সংবাদকর্মীদেরও ধাওয়া করেন হেফাজতের উত্তেজিত কর্মী-সমর্থকরা। অরক্ষিত হয়ে পড়েছে উপজেলা পরিষদ ও থানা এলাকা। হামলা এড়াতে উপজেলা পরিষদ ও থানা ঘেরাও করে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়াও শনিবার রাতে সোনারগাঁয়ের মোগরাপাড়া চৌরাস্তা, উদ্ভবগঞ্জ, দীঘিরপাড় এলাকায় লাঠি হাতে মিছিল করতে দেখা গেছে হেফাজতেরকর্মীদের। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে ফাঁকা গুলি ছুড়তে দেখা গেছে। এদিকে রাত সাড়ে ১০টার দিকে লাঠিসোটা নিয়ে তারা আবারো রয়েল রিসোর্টের দিকে মিছিল নিয়ে যায়।
এ সময় র্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের বাধা দেয়। বাধার মুখে তারা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। উভয়পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা রাবার বুলেট ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে। রাত সোয়া ১১টার দিকে হেফাজতকর্মীদের পিছু হটতে দেখা যায়। অন্যদিকে এ ঘটনায় রোববার সকাল থেকে সোনারগাঁওয়ে রয়েল রিসোর্ট ও এর আশপাশ এলাকা, মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এলাকার লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক দেখা গেছে।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোনারগাঁওয়ে ৩ শতাধিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। হেফাজত ইসলাম ও মাদরাসাছাত্ররা ছোট ছোট পিকআপভ্যানে মহড়া দিচ্ছেন। কর্মীরা মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। রয়েল রিসোর্টের জিএম লাল মিয়া বলেন, মাওলানা মামুনুল হক ও আমিনা তৈয়বা নিজেদের স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে হোটেলে ওঠেন। কিন্তু যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হোটেলে এলে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। আর এর জেরে হেফাজতকর্মীরা হোটেলে ভাঙচুর করেন। মিছিল নিয়ে হোটেলের মূল ফটকে অবস্থান নেন।
এ ঘটনায় রয়েল রিসোর্টে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঢাকা ১০ আসনের হেফাজত নেতা মুফতি ফয়সাল মাহমুদ হাবিবী বলেন, হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আল্লামা মামুনুল হক রয়েল রির্সোটে বিশ্রামের জন্য সস্ত্রীক হোটেলে অবস্থান নেন। তিনি হোটেলের সম্পূর্ণ নিয়ম-কানুন মেনে অবস্থান করছিলেন। হোটেল মালিক সাইদুর রহমান, ম্যানেজার ও কর্মচারীরা আল্লামা মামুনুল হকের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি বলেন, সোনারগাঁও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু ও নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি হাজী শাহ মো: সোহাগ রনির নেতৃত্বে কতিপয় লোক আল্লামা মামুনুল হকের ওপর হামলা চালিয়ে জামার কলার ছিড়ে ফেলে, দাড়ি মোবারক ধরে টান দেয় এবং শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত করে।
অশ্লীল ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং তার গাড়ির চাবি ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ডা: আবু জাফর চৌধুরী বিরু জানান, আওয়ামী লীগ কার্যালয়, নেতাকর্মীর বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাংচুরের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। সোনারগাঁও থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তিন শতাধিক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। হেফাজত নেতা একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। এছাড়া ভাঙচুরের ঘটনায় আর কেউ অভিযোগ দায়ের করেনি। সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আতিকুল ইসলাম জানান, হেফাজত নেতাকর্মীদের বিষয়ে প্রশাসন সর্তক অবস্থানে রয়েছে। সোনারগাঁওয়ে র্যাব, পুলিশ, বিজিবি বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে।
One comment