মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া মূল আসামি কারাগারে আছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
তিনি বলেন, সিনহা হত্যা হল, সারা দেশ উত্তাল হল। গ্রেফতার হল, সব কিছু হল। কিন্তু মূল আসামি কি এখন কারাগারে আছে? একটু খোঁজ-খবর নেন, কারাগারে আছে কিনা। হয়তো পরবর্তী তারিখে বোঝা যাবে আদালতে হাজির করতে পারে কিনা কারা কর্তৃপক্ষ। তাহলে আমরা কোথায় আছি? একি দেশের স্বাধীনতা?
বুধবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ নাগরিক অধিকার আন্দোলনের উদ্যোগে ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে এই সভা হয়।
গয়েশ্বর বলেন, আজকে সীমান্তে প্রতিদিন আমরা লাশ রিসিভ করি, প্রতিদিন গুলির আওয়াজ হয় একদিক থেকে, আমাদের দিক থেকে গুলি করা হয় না। আমাদের সিদ্ধান্ত আমরা গুলি করব না। আমাদের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী এখন গুলি ছুড়ে না। তাহলে বিদেশ থেকে এত অস্ত্রশস্ত্র কিনে কেন? সীমান্তে আমাদের নাগরিকদের মারছে, বর্ডার কিলিং হচ্ছে, প্রতিবাদ নাই।
বাংলাদেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পোস্টিং ‘ভিন দেশের’ কথার বাইরে হয় না বলে অভিযোগ করেন বিএনপির সর্বোচ্চ নির্ধারণী ফোরামের এই নেতা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ পোস্টিং সেটা সচিবালয়ই হোক বা কোনো ব্যাংকে হোক যেখানেই হোক না কেন, তা ভিন্ন দেশের কথার বাইরে হয় না।
৩ নভেম্বর চার নেতার হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে গয়েশ্বর বলেন, ৩ নভেম্বর জেলখানার হত্যাকাণ্ড। তারিখ বলে, তখন তো জিয়াউর রহমান বন্দি, ২ তারিখ ভোর বেলা থেকেই। তখন খালেদ মোশাররফ ক্ষমতায়। তাহলে খালেদ মোশাররফ পরিকল্পনায় বা খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে আলোচনা করে জেলখানায় হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করা হয়- এই কথা বুঝতে কি কষ্ট হয়? কারণ তার (খালেদ মোশাররফ) ভয় ছিল? তার ভয় ছিল রাজনৈতিক নেতৃত্ব। শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর এই চার নেতাকে হত্যা করলে হয়ত এই তরফ থেকে ক্ষমতার অংশীদারিত্ব করার সুযোগ থাকবে না। খালেদ মোশাররফের মাথায় তো ছিল না যে, শেখ হাসিনা দেশে আসবেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, সেই কারণেই আজকে কন্যা হিসেবে পিতার হত্যার বিচার, প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা থাকতেই পারে। কিন্তু আমি তো দেখছি না। আমি দেখছি শেখ হাসিনা তার পিতার হত্যার সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ জড়িত পরিকল্পনাকারীদের একের পর এক ঘুষ দিচ্ছেন, যাতে তার দশা এরকম না হয়। তাদেরকে সন্তুষ্ট রাখছেন, যাতে ঘর থেকে আবার ক্যু’টা না হয়।
জামায়াতে ইসলামী প্রসঙ্গে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আজকে আওয়ামী লীগ জামায়াত জামায়াত বলে। জামায়াত যদি দেশের গণতন্ত্রের পরিপন্থী হয় তাহলে তারা (সরকার) জামায়াতকে ব্যানড (নিষিদ্ধ) করে না কেন? ভারতেও তো জামায়াত আছে, তারা ব্যানড করে না কেন? আসলে এটা শুধু একটা পলিটিক্যাল চাল। এটা সবাইকে বুঝতে হবে।
আয়োজক সংগঠনের উপদেষ্টা সাঈদ আহমেদ আসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের পরিচালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন- বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) আহসান হাবিব লিংকন, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরী, মহানগর বিএনপির ফরিদ উদ্দিন, তাঁতী দলের কাজী মুনিরুজ্জামান মুনির, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ওবায়দুর রহমান টিপু প্রমুখ।