Breaking News

ভিন্নমতের কারণে চাকরিচ্যুত হলেন ঢাবি অধ্যাপক ড. মোর্শেদ

শুধু ভিন্নমতের কারণে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান। বুধবার সিন্ডিকেট সভায় ড. মোর্শেদকে চাকুরি থেকে অব্যাহতি প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিধি-বহির্ভূত ও অন্যায়ভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে মর্মে তা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে ঢাবি সাদাদলের শতাধিক শিক্ষক।

জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) পরিচালিত হয় এর স্ট্যাটিউট ও ১৯৭৩ সালের আদেশ (ঢাকা ইউনিভার্সিটি অর্ডার ১৯৭৩) দ্বারা। এই আদেশের কোনো ধারায় লেখা নেই যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তারা ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ গ্রহণ করতে পারবে না। বরং স্বাধীন রাজনৈতিক মতাদর্শ লালন, অনুসরণ ও চর্চার অধিকার রয়েছে। এমনকি কর্মরত শিক্ষকদের রাজনৈতিক দল, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপূর্ণ পদ গ্রহণেও আইনগত বাধা নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্স্ট স্ট্যাটিউটের ৪৫(২) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৩’র আদেশ ৩৮ পৃষ্ঠার ৫৬(২) উপধারায় শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়োগ ও চাকুরিবিধি সংক্রান্ত বিধান রয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কর্মপরিধি এবং অধিকার ও দায়িত্ব কর্তব্যের সীমারেখাও নির্দেশিত রয়েছে।

তবুও ভিন্নমত প্রকাশের কারণে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হলেন অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান। ২০১৮ সালের মার্চে একটি জাতীয় দৈনিকে নিবন্ধ লিখে সেখানে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে ‘আপত্তিজনক’ মন্তব্য লেখা হয় বলে একটি চক্রান্তকারী মহল অভিযোগ তুলে। পরে বিষয়টি রাজনৈতিক পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে। অবশ্য নিবন্ধটি প্রকাশের সাথে সাথেই দু:খ প্রকাশ করে বিবৃতি দেন ড. মোর্শেদ হাসান খান।

এরপরও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে অ্যাকাডেমিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে তদন্ত কমিটি ও ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি নিয়ে কোনো আলোচনা না হলেও ফের একটি চক্রান্তকারী মহল এ নিয়ে তৎপর হয়ে ওঠে। সপ্তাহখানেক আগে ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’ নামের একটি সংগঠনকে মাঠে নামিয়ে চক্রটি ড. মোর্শেদের চাকরিচ্যুতি ঘটাতে নানা ষড়যন্ত্র ও অপকৌশলের আশ্রয় নেয়।

তাদের এই আন্দোলন বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অথচ অনেক গুরুতর নৈতিক স্থখলনজনিত অপরাধে অভিযুক্ত হওয়া সত্বেও (ছাত্রীদের যৌন হয়রানি, যৌন কেলেঙ্কারি, পরীক্ষা সংক্রান্ত গুরুতর অনিয়ম, প্লেজারিজম ইত্যাদি) সরকার ও প্রশাসন সমর্থক দলীয় শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয় না। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এরুপ বৈষম্যমূলক ও পক্ষপাতমূলক আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয় বলে বহু শিক্ষক মন্তব্য করেন।

কয়েকজন শিক্ষক জানান, কি অপরাধে কোনো শিক্ষক বা কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা যাবে সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্স্ট স্ট্যাটিউটের ৪৫(৩)(৪) উপধারায় এবং বিশ্ববিদ্যালয় ৭৩’র আদেশের ৫৬(৩) উপধারায় স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া আছে। সেখানে বলা আছে- ‘নৈতিক স্খলন, অদক্ষতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও চাকুরিবিধি পরিপন্থী’ কাজের সাথে যুক্ত থাকার অপরাধে কোনো শিক্ষক বা কর্মকর্তাকে টার্মিনেট করা যেতে পারে।

কিন্তু ড. মোর্শেদের নিবন্ধ লেখার বিষয়টি উল্লিখিত অপরাধের কোনোটিতেই পড়ে না। তারপরও কেবল ভিন্ন মতাবলম্বী হওয়ার কারণে ড. মোর্শেদকে বেআইনিভাবে চাকুরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হলো বলে অভিযোগ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদাদলের শিক্ষকেরা। জানতে চাইলে ঢাবি ভিসি অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান ও প্রোভিসি ড. এএসএম মাকসুদ কামাল মোবাইল রিসিভ করেননি।

ঢাবি সাদা দলের বক্তব্য: এদিকে ড. মোর্শেদ হাসান খানকে কারো দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে তিনি যেন ন্যায় বিচার পান সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে ঢাবি ভিসিকে দুইবার চিঠি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দল। তবুও ড. মোর্শেদকে চাকুরিচ্যুতির ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে সাদাদল। সংগঠনের আহ্বায়ক অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম বিবৃতিতে বলা হয়- ড. মোর্শেদকে চাকুরি থেকে অব্যাহতি দেয়ার ঘটনায় আমরা ক্ষুব্ধ ও হতাশ হয়েছি।

একটি জাতীয় দৈনিকে লিখিত নিবন্ধে কিছু অনাকাক্সিক্ষত বক্তব্যের কারণে নিবন্ধটি প্রত্যাহার, দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা সত্ত্বেও তাকে চাকুরি থেকে অব্যাহতি প্রদান করার ঘটনা নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত। শুধু ভিন্ন রাজনৈতিক দল ও মতের অনুসারী হওয়ায় সম্পূর্ণ বিধি-বর্হিভুতভাবে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আমরা এ ধরনের নজিরবিহীন ও ন্যাক্কারজনক সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

বিবৃতিতে বলা হয়- ১৯৭৩ বিশ্ববিদ্যালয় আদেশের ৫৬(৩) উপধারা এবং ১ম স্ট্যাটিউটের ৪৫(৩) উপধারা অনুযায়ী নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধ এবং অদক্ষতা প্রমাণিত হলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে চাকুরি থেকে অব্যাহতি প্রদান করা যায়। ড. মোর্শেদ হাসান খান উপর্যুক্ত কোনো অভিযোগে অভিযুক্ত নন।

১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় আদেশের ৫৬(২) উপধারা অনুযায়ী বিশ^বিদ্যালয়ের যে কোনো শিক্ষক বা কর্মকর্তা রাজনীতি করার তথা স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকার রাখেন। অথচ একটি নিবন্ধে কিছু অনাকাক্সিক্ষত বক্তব্যের কারণেই তাকে চাকুরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত চাকুরিবিধিরও সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আমরা এ সিদ্ধান্ত বাতিল করে তাকে চাকুরিতে পুনর্বহাল করার জোর দাবি জানাচ্ছি।

উল্লেখ্য যে, ২০১৮ সালের ২৬ মার্চ ‘জ্যোতির্ময় জিয়া’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ লেখেন ড. মোর্শেদ। যেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে ‘আপত্তিজনক’ মন্তব্য লেখা হয় বলে একটি মহল অভিযোগ তোলে। তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষমা ও দু:খ প্রকাশ এবং নিবন্ধটি প্রত্যাহার করে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেন ড. মোর্শেদ হাসান খান।

Check Also

অধ্যাপক গোলাম আযম একটি নাম, একটি ইতিহাস

অধ্যাপক গোলাম আযম একটি নাম, একটি ইতিহাস। তিনি বিশ্বনন্দিত ইসলামী চিন্তাবিদ, ভাষা আন্দোলনের নেতা, ডাকসুর …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *