এম সি এ এর মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হচ্ছে ইসলামের প্রচার ও প্রসার, মুসলমানদের পারস্পরিক ঐক্য ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি এবং মানবতার কল্যাণে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। উপরিউক্ত উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য এম সি এনিম্নলিখিত কাজ করতে চায়:
১.মুসলমানদের মধ্যে ইসলামী চেতনাবোধ জাগ্রত করা এবং বাস্তব জীবনে ইসলাম অনুশীলনের মাধ্যমে পাশ্চাত্যে সত্যের সাক্ষ্য হিসাবে নিজেদেরকে পেশ করা।
২.ইসলাম সম্পর্কে অপপ্রচার, সন্দেহ ও সংশয় অপনোদনে ভূমিকা রাখা এবং সর্বশ্রেণীর মানুষের নিকট ইসলামের প্রকৃত রূপ তুলে ধরা।
৩.ইসলামের আলোকে জীবন ঢেলে সাজানোর প্রতিজ্ঞা জ্ঞাপনকারীদেরকে সংগঠিত করা ও নৈতিক প্রশিক্ষণ দান।
৪. কমিউনিটির উন্নয়ন, দু:স্থ মানবতার সেবা, মানবতার কল্যাণ ভূমিকা রাখা
৫. মুসলমানদের পারস্পরিক ঐক্য স্থাপনের চেষ্টা। কল্যানকর কাজে কমুনিটির সকলের সাথে একসাথে কাজ করা। সামাজিক উন্নয়ণ ও ন্যায়- ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখা।
এই কথা ঠিক যে সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য দ্বারাই কোন একদল লোক সংগঠিত হয়ে নেতৃত্বের অধীনে এক সাথে সুশৃংখলভাবে কাজ করতে অনুপ্রাণিত হয়। উদ্দেশ্য ও চিন্তার ঐক্যের কারণে ভৌগলিক দূরত্বে অবস্থানরত বিভিন্ন ব্যক্তি একই সংগঠনভুক্ত হয়। আবার উদ্দেশ্য ও চিন্তার মিল না থাকলে একই ঘরে অবস্থান করে একেকজন একেক ধরনের সংগঠন ও সংস্থার সাথে সম্পৃক্ত থাকে।
তাই কোন একটি সংগঠনে সমবেত সকলের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা দরকার। কি উদ্দেশ্যে একটি ঘর নির্মান করা হয় তা জানা না থাকলে অথবা সে সম্পর্কে সকলের চিন্তার ঐক্য না থাকলে উক্ত ঘর অনাকংখিত ভাবে ব্যহার হতে পারে বা ব্যবহার নিয়ে নানা কথা- নানা মত সৃষ্টি হতে পারে; এমনকি ঘর ভেংগে ফেলার মত পরিবেশও সৃষ্টি হতে পারে। পৃথিবীর যেসব দেশে ইকামতে দ্বীনের উদ্দেশ্যে ইসলামী আন্দোলনের কাজ পরিচালিত হচ্ছে তারা এমন একটি রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থা চায় যেখানে:
১. মানুষ একমাত্র আল্লাহর দাসত্ব করবে; জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান মেনে চলবে। আল্লাহর আইনের ভিত্তিতেই ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র জীবনের সকল দিক পরিচালিত হবে এবং সমাজে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত হবে।
২. মানুষ জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালামকে আদর্শ নেতা রূপে মেনে চলার সুযোগ পাবে।
৩. সৎ ও চরিত্রবান লোকেরা শাসন কর্তৃত্বের পরিচালক হবে এবং সমাজের সর্বত্র আদল তথা ন্যয় বিচার প্রতিষ্ঠা লাভ করবে।
৪. রাষ্ট্র পরিচালিত হবে পরামর্শ ভিত্তিক। ক্ষমতাসীনরা স্বেচ্ছাচারী হবেননা।তারা মানুষের কল্যানে সদাসচেষ্ট থাকবেন।
অতীত ইতিহাস সাক্ষী যে মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ অনেক দেশেও এই ধরনের সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। কিন্তু মুসলিম সংখ্যা লঘিষ্ট কিছু দেশের নাগরিকরা ইসলামের সামাজিক ন্যায়-নীতি ও ইনসাফের দৃষ্টান্ত দেখে আল্লাহর আইনের ভিত্তিতে সমাজ পরিচালনাকে স্বাগত জানিয়েছে। কোন দেশের অধিকাংশ জনগণ চাইলেই আল্লাহর আইনের ভিত্তিতে সমাজ পরিচালিত হতে পারে; জনগণ না চাইলে জোরপুর্বক ইসলাম প্রতিষ্ঠার কোন নজীর নেই।
জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর হুকুম মেনে চলতে হলে প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর হুকুম মেনে চলার পরিবেশ থাকতে হবে। আল্লাহর দেয়া জীবন বিধান অনুযায়ী সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালিত না হলে জীবনের প্রতিটি স্তরে আল্লাহর হুকুম মেনে চলা কঠিন। তাই আল্লাহ তাঁর রাসূলকে দ্বীনে হক বিজয়ের চেষ্টা প্রচেষ্টা করার দায়িত্ব দিয়েই দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে আল্লাহ ইরশাদ করছেন,
هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ (৯)
“তিনিই সে সত্তা, যিনি তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও হক দীন দিয়ে পাঠিয়েছেন যাতে তিনি একে আর সব দীনের উপর বিজয়ী করেন। মুশরিকদের নিকট এটা যতই অপছন্দ হোক না কেন” (সফ: ৯)।
ইসলাম অন্য কোন ধর্মাবলম্বীর প্রতি বিদ্বেষ ভাব পোষণ করেনা। তাই সকল মত ও পথের মানুষদেরকে নিয়েই সমাজকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলতে হবে। সমাজে ন্যয় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পরবর্তী প্রজন্মকে আদর্শ মানুষ হিসাবে গড়ে তোলতে হবে। ড্রাগসহ সকল ধরনের খারাপ জিনিসগুলো থেকে সমাজকে মুক্ত রাখতে হবে। ন্যয় ও ইনসাফের নীতিমালার ভিত্তিতে সমাজ যেন পরিচালিত হয় এই জন্য সকলকেই ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করতে হবে।
এম সি এর কর্মসূচী:এম সি এর ৫ দফা কর্মসূচী রয়েছে। আর তা হচ্ছে: ১. দাওয়াহ ২. জামায়াহ ৩. তারবিয়াহ ৪. আদল ৫. বির
নিন্মে উপরিউক্ত পাঁচ দফা কর্মসুচী সম্পর্কে আলোচনা করা হল:
দাওয়াহ: মুসলমানদের মধ্যে ইসলামী চেতনাবোধ জাগ্রত করা এবং বাস্তব জীবনে ইসলাম অনুশীলনের মাধ্যমে পাশ্চাত্যে সত্যের সাক্ষ্য হিসাবে নিজেদেরকে পেশ করা।
দাওয়াহ আরবী শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে আহবান জানানো বা ডাকা। সত্য ও সুন্দরের দিকে ডাকা। ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার দিকে ডাকা। সামাজিক শান্তি ও কল্যান প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা রাখার প্রতি আহবান জানানো। উপরিউক্ত অর্থ থেকে স্পষ্ট যে, দাওয়াত শব্দটি কাউকে কোন কিছুর প্রতি আহবান করাকে বুঝায়। উক্ত বিষয় গ্রহন করা বা না করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন। তিনি স্বাধীনভাবে চিন্তা , ভাবনা করেই আহবানকারীর আহবানে সাড়া দেন বা প্রত্যাখ্যান করেন অথবা নীরব থাকেন।
وَكَذَلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًا لِّتَكُونُواْ شُهَدَاء عَلَى النَّاسِ وَيَكُوْنَ الرَّسُولُ عَلَيْكُمْ شَهِيدًا وَمَا جَعَلْنَا الْقِبْلَةَ الَّتِي كُنتَ عَلَيْهَا إِلاَّ لِنَعْلَمَ مَن يَتَّبِعُ الرَّسُولَ مِمَّن يَنقَلِبُ عَلَى عَقِبَيْهِ وَإِن كَانَتْ لَكَبِيرَةً إِلاَّ عَلَى الَّذِيْنَ هَدَى اللّهُ وَمَا كَانَ اللّهُ لِيُضِيعَ إِيمَانَكُمْ إِنَّ اللّهَ بِالنَّاسِ لَرَؤُوفٌ رَّحِيْمٌ (১৪৩)
এভাবেই তো আমি তোমাদেরকে এক ‘মধ্যপন্থী উম্মত’ বানিয়েছি, যাতে তোমরা দুনিয়ার মানুষের জন্য সাক্ষী হও এবং রাসূল তোমাদের জন্য সাক্ষী হন। পয়লা তোমরা (নামাযে) যেদিকে মুখ করতে সে দিকটিকে তো আমি শুধু এ উদ্দেশ্যে কেবলা বানিয়েছিলাম, যেন আমি জেনে নিতে পারি যে, কে রাসূলকে মেনে চলে আর কে উলটো দিকে ফিরে যায়। এ ব্যাপারটা তো বড়ই কঠিন ছিলো কিন্তু আল্লাহ যাদেরকে হেদায়াত দান করেছেন তাদের জন্য মোটেই কঠিন ছিলো না। আল্লাহ র তোমাদের এ ইমানকে কখনো নষ্ট করবেন না। নিশ্চিত জানবে যে, আল্লাহ মানুষের উপর বড়ই দায়ালূ ও মেহেরবান। (সূরা বাক্বারার ঃ ১৪৩)
وَجَاهِدُوا فِي اللَّهِ حَقَّ جِهَادِهِ هُوَ اجْتَبَاكُمْ وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ مِّلَّةَ أَبِيكُمْ إِبْرَاهِيمَ هُوَ سَمَّاكُمُ الْمُسْلِميْنَ مِن قَبْلُ وَفِي هَذَا لِيَكُوْنَ الرَّسُولُ شَهِيدًا عَلَيْكُمْ وَتَكُونُوا شُهَدَاء عَلَى النَّاسِ فَأَقِيمُوا الصَّلاَةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَاعْتَصِمُوا بِاللَّهِ هُوَ مَوْلاَكُمْ فَنِعْمَ الْمَوْلَى وَنِعْمَ النَّصِيرُ (৭৮)
আল্লাহর পথে জিহাদ করো, যেমনভাবে করা উচিত। তিনি তোমাদেরকে (নিজের কাজের জন্য) বাছাই করে নিয়েছেন। দীনের মধ্যে তোমাদের উপর কোন সংকীর্ণতা রাখেননি। (দীন অনুযায়ী তোমাদের চলার পথে তিনি কোন বাধা থাকতে দেননি।) তোমাদের পিতা ইবরাহীমের মিলাতের উপর কায়েম হয়ে যাও। আল্লাহ আগেও তোমাদের নাম ‘মুসলিম’ রেখেছিলেন, এ কুরআনেও (তোমাদের নাম এটাই), যাতে রাসুল তোমাদের উপর সাক্ষী হন এবং তোমরাও মানব জাতির উপর সাক্ষী হও। সুতরাং নামায কায়েম করো যাকাত দাও এবং আল্লাহ কে মযবুতভাবে ধরো। তিনিই তোমাদের অভিভাবক। কতই না ভালো এ অভিভাবক। আর কতই না ভালো এ সাহায্যকারী। (হাজ্জ: ৭৮)
إِلاَّ الَّذِيْنَ تَابُواْ وَأَصْلَحُواْ وَبَيَّنُواْ فَأُوْلَئِكَ أَتُوبُ عَلَيْهِمْ وَأَنَا التَّوَّابُ الرَّحِيمُ (১৬০)
অবশ্য যারা এ জাতীয় কাজ থেকে বিরত থাকে, নিজেদের কর্মনীতি সংশোধন করে নেয় এবং যা গোপন করেছিলো তা প্রকাশ করতে থাকে, তাদেরকে আমি মাফ করে দেবো। আমি বড়ই তাওবা কবুলকারী এবং মেহেরবান। (বাক্বারা : ১৬০)
أُبَلِّغُكُمْ رِسَالاتِ رَبِّي وَأَنَاْ لَكُمْ نَاصِحٌ أَمِينٌ (৬৮)
আমি তোমাদেরকে আমার রবের বাণী পৌঁছাই এবং আমি তোমাদের এমন হিতকামী, যার উপর ভরসা করা যায়। (আরাফ: ৬৮)। আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র বলেন:
وَلاَ يَنفَعُكُمْ نُصْحِي إِنْ أَرَدتُّ أَنْ أَنصَحَ لَكُمْ إِن كَانَ اللّهُ يُرِيدُ أَن يُغْوِيَكُمْ هُوَ رَبُّكُمْ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ (৩৪)
আল্লাহ নিজেই যদি তোমাদেরকে পথহারা করার ইচ্ছা করে থাকেন, তাহলে যদি তোমাদের কোন মঙ্গল করতেও চাই তবুও আমার কল্যাণ কামনা তোমাদের কোন উপকারে আসবে না। তিনিই তোমাদের রব। তাঁরই দিকে তোমাদেরক ফিরে যেতে হবে। (হুদ : ৩৪)।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، قَالَ قَالَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بَلِّغُوا عَنِّي وَلَوْ آيَةً، وَحَدِّثُوا عَنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ وَلاَ حَرَجَ، وَمَنْ كَذَبَ عَلَىَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ ”.
আবদুললাহ ইব্ন আমর (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুলাহ্ (সা) ইরশাদ করেছেন, একটি আয়াত হলেও তা আমার পক্ষ হতে প্রচার কর। আর বনী ইসরাইল সম্পর্কে আলোচনা কর। তাতে কোন দোষ নেই। যে ব্যক্তি আমার প্রতি ইচ্ছাপূর্বক মিথ্যা আরোপ করে, তার নিজ চিরস্থায়ী ঠিকানা জাহান্নামে সন্ধান করা উচিত। (বুখারী)
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا- وَدَاعِيًا إِلَى اللَّهِ بِإِذْنِهِ وَسِرَاجًا مُّنِيرًا
“হে নবী! আমি আপনাকে পাঠিয়েছি সাক্ষী বানিয়ে, সু-খবরদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে, আল্লাহ র অনুমতিতে তাঁর দিকে দাওয়াতদাতা বানিয়ে এবং উজ্জ্বল বাতি হিসেবে” (আহযাব ৪৫-৪৬)।
يْنَزِّلُ الْمَلآئِكَةَ بِالْرُّوحِ مِنْ أَمْرِهِ عَلَى مَن يَشَاء مِنْ عِبَادِهِ أَنْ أَنذِرُواْ أَنَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنَاْ فَاتَّقُونِ (২)
তিনি এই রূহকে তাঁর যে বান্দার উপর ইচ্ছা করেন নিজের হুকুমে ফেরেশতাদের মারফতে নাযিল করেন (এ নির্দেশ দিয়েযে, জনগণকে) সাবধান করে দাও, আমি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই। কাজেই তোমরা আমাকেই ভয় করো। (নাহল: ২)
فَذَكِّرْ إِن نَّفَعَتِ الذِّكْرَى (৯)
কাজেই আপনি উপদেশ দিন, যদি উপদেশ লাভজনক হয়। (আলা: ৯)
فَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ وَاشْكُرُواْ لِي وَلاَ تَكْفُرُونِ (১৫২)
কাজেই তোমরা আমাকে মনে রেখো, আমিও তোমাদেরকে মনে রাখবো এবং আমার শোকর আদায় করো, আমার নিয়ামতের কুফরী করো না। (সূরা বাক্বারার: ১৫২)
رُّسُلاً مُّبَشِّرِيْنَ وَمُنذِرِيْنَ لِئَلاَّ يَكُوْنَ لِلنَّاسِ عَلَى اللّهِ حُجَّةٌ بَعْدَ الرُّسُلِ وَكَانَ اللّهُ عَزِيزًا حَكِيمًا (১৬৫)
এসব রাসূলকে সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারীড হিসেবে পাঠানো হয়েছিলো, যাতে রাসূলগণকে পাঠাবার পর মানুষের কাছে আল্লাহ র বিরুদ্দে কোন যুক্তি না থাকে। আল্লাহ অবশ্যই শক্তিমান ও অতিশয় জ্ঞান-বুদ্ধির অধিকারী। (নিসা: ১৬৫)
إِنَّ الدِّيْنَ عِندَ اللّهِ الإِسْلاَمُ وَمَا اخْتَلَفَ الَّذِيْنَ أُوْتُواْ الْكِتَابَ إِلاَّ مِن بَعْدِ مَا جَاءهُمُ الْعِلْمُ بَغْيًا بَيْنَهُمْ وَمَن يَكْفُرْ بِآيَاتِ اللّهِ فَإِنَّ اللّهَ سَرِيعُ الْحِسَابِ
হে আমাদের রব! একদিন তুমি অবশ্যই সব মানুষকে একত্র করবে, যে দিনটি আসার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। তুমি কখনো ওয়াদা খেলাফ করো না। (আলে ইমরান: ১৯)
كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُوْنَ بِاللّهِ وَلَوْ آمَنَ أَهْلُ الْكِتَابِ لَكَانَ خَيْرًا لَّهُم مِّنْهُمُ الْمُؤْمِنُوْنَ وَأَكْثَرُهُمُ الْفَاسِقُوْنَ
এখন তোমরাই দুনিয়ার ঐ সেরা উম্মত, যাদেরকে মানব জাতির হেদায়াত ও সংশোধনের জন্য ময়দানে আনা হয়েছে। তোমরা নেক কাজের আদেশ করো ও মন্দ কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখো এবং আল্লাহ র প্রতি ঈমান রাখো। আহলে কিতাবগণ যদি ঈমান আনতো তাহরে তাদের জন্যই তা ভালো ছিলো। যদিও তাদের মধ্যে কিছু লোক ঈমানদারও পাওয়া যায়, কিন্তু তাদের বেশির ভাগই নাফরমান। (আলে ইমরান ঃ ১১০)
قُلِ اللَّهَ أَعْبُدُ مُخْلِصًا لَّهُ دِينِي)
বলে দিন, আমার দীনকে আল্লাহ র জন্য খালিস করে আমি শুধু তাঁরই দাসত্ব করবো। (আল-যুমার ঃ ১৪)
وَالَّذِيْنَ يَرْمُوْنَ الْمُحْصَنَاتِ ثُمَّ لَمْ يَأْتُوا بِأَرْبَعَةِ شُهَدَاء فَاجْلِدُوهُمْ ثَمَانِيْنَ جَلْدَةً وَلاَ تَقْبَلُوا لَهُمْ شَهَادَةً أَبَدًا وَأُوْلَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُوْنَ
যারা সতী মহিলাদের উপর অপবাদ দেয়, তারপর চারজন সাক্ষী আনতে না পারে, তাদেরকে আশিটি করে বেত মারো এবং কখনো তাদের সাক্ষ্য কবুল করো না। এরাই ফাসিক। (সূরা নূর: ৪)
يَا أَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ (১) قُمْ فَأَنذِرْ (২) وَرَبَّكَ فَكَبِّرْ (৩) وَثِيَابَكَ فَطَهِّرْ (৪)
“হে কম্বল মুড়ি দিয়ে শায়িত ব্যক্তি! উঠো এবং সাবধান করো এবং তোমার রবের বড়ত্ব প্রচার করো। তোমার পোশাক পাক-সাফ রাখো” (মুদ্দাসির ১-৪)।
আমাদেরকে দরদভরা মন নিয়ে পৃথিবীর মানুষদের সামনে এই কথা তুলে ধরতে হবে যে, ’’ একজন মানুষ আরেকজন মানুষের গোলামী করতে পারেনা। সকল মানুষকে এক আল্লাহ রই গোলামী করতে হবে”। কুরআনে এই কথাই তুলে ধরা হয়েছে। এই প্রসংগে আল্লাহ বলেন:
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُواْ رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ وَالَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الأَرْضَ فِرَاشاً وَالسَّمَاء بِنَاء وَأَنزَلَ مِنَ السَّمَاء مَاء فَأَخْرَجَ بِهِ مِنَ الثَّمَرَاتِ رِزْقاً لَّكُمْ فَلاَ تَجْعَلُواْ لِلّهِ أَندَاداً وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ
হে মানুষ! তোমাদের ঐ রবের দাসত্ব করো, যিনি তোমাদেরকে এবং তোমাদের আগে যারা চলে গেছে তাদের সবাইকে পয়দা করেছেন। এভাবেই তোমরা রক্ষা পেতে পারো। তিনিই তো সে [সত্তা], যিনি তোমাদের জন্য জমিনকে বিছানা ও আসমানকে ছাদ বানিয়ে দিয়েছেন, আসমান থেকে পানি নাযিল করেছেন এবং তা দ্বারা নানা রকম ফলমূল পয়দা করে তোমাদের জন্য রিযকের ব্যবস্থা করেছেন। অতএব তোমরা যখন এ সবই জানো, তখন কাউকেও আল্লাহ র শরীক সাব্যস্ত করো না- বাকারা ২১-২২।
قُلْ هَذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللّهِ عَلَى بَصِيرَةٍ أَنَاْ وَمَنِ اتَّبَعَنِي وَسُبْحَانَ اللّهِ وَمَا أَنَاْ مِنَ الْمُشْرِكِينَ (১০৮)
“(হে নবী!) আপনি তাদেরকে সাফ সাফ বলে দিন, “আমার পথ তো এটাই, আমি আল্লাহ র দিকে ডাকি। আমি ও আমার সাহাবরিা (স্পষ্ট আলোতে) আমাদের পথ দেখতে পাচ্ছি। আল্লাহ পবিত্র এবং যারা শিরক করে আমি তাদের মধ্যে শামিল নই” (ইউসুফ ১০৮।
আল্লাহ র রাসুল (সা) ইরশাদ করেন:
عَنِ عَبَّاسِ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ” ذَاقَ طَعْمَ الإِيمَانِ مَنْ رَضِيَ بِاللَّهِ رَبًّا وَبِالإِسْلاَمِ دِينًا وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولاً ” رواه بخارى و مسلم
হযরত আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল করীম (সা) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে আলাহ্কে রব, ইসলামকে দীন এবং মুহাম্মদ (সা) কে নবী হিসেবে কবুল করেছে, সেই ব্যক্তি ঈমানের প্রকৃত স্বাদ লাভ করেছে (বুখারী-মুসলিম।
আল্লাহ র রাসুল (সা) তাওহীদের ঘোষণা দেয়াকে জান্নাতে যাওয়ার গ্যারান্টি হিসাবে উলেখ করেছেন। এই প্রসংগে হাদীসে বর্ণিত আছে যে,
عَنْ أَبَا ذَرٍّ قَالَ قَالَ صلى الله عليه وسلم ”مَا مِنْ عَبْدٍ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ ثُمَّ مَاتَ عَلَى ذَلِكَ إِلاَّ دَخَلَ الْجَنَّةَ ”
হযরত আবু যর (রা) থেকে বর্ণিত রাসুলে কারীম সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম ইরশাদ করেছেন কোন ব্যক্তি যদি লা ইলাহা ইলালাহর ঘোষণা দেয় এবং এর উপর মৃত্যুবরণ করে তবে অবশ্যই সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আল্লাহ র রাসুল (সা) আরও বলেন:
عَنْ عِبَادَة بْنِ الصَامِت قَال سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ”مَنْ شَهِدَ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ النَّارَ” . رواه مسلم
হযরত উবাদাহ ইবন সামিত (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দিল যে আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম আল্লাহর রাসুল, তার জন্য আল্লাহ জাহান্নামের আগুন হারাম করে দিবেন। (মুসলিম)
وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّن دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ (৩৩)
“ঐ ব্যক্তির কথার চেয়ে আর কার কথা বেশি ভালো হতে পারে, যে আল্লাহ র দিকে ডাকলো, নেক আমল করলো এবং বললো, নিশ্চয়ই আমি মুসলিম।” (হামীম সাজদাহ ৩৩)।
এই প্রসংগে আল্লাহ র রাসুল (সা) ইরশাদ করেন:
عن ابي هريرة ان رسول الله علي الله عليه وسلم قال من دعا الي هدي كان له من الاجر مثل اجور من تبعه لاينقص ذلك من اجورهم شئا و من دعا الي ضلالة كان عليه من الاثم مثل اثام من تبعه لاينقص ذلك من اثامهم شئا- رواه مسلم
আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেণ যে রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন যে ব্যক্তি সঠিক পথের দিকে ডাকে তার জন্য এপথের অনুসারীদের বিনিময়ের সমান বিনিময় আছে। এতে তাদেও বিনিময় কিছুমাত্র কম হবেনা। আর যে ব্যক্তি ভ্রান্ত পথের দিকে ডাকে, তার উক্ত পথের অনুসারীদেও গুনাহের সমান গুনাহ হবে। এতে তাদেও গুনাহ কিছুমাত্র কম হবেনা। অতীতে সকল নবী ও রাসুলই দাওয়াতী কাজ করেছেন। এই প্রসংগে আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولاً أَنِ اعْبُدُواْ اللّهَ وَاجْتَنِبُواْ الطَّاغُوتَ فَمِنْهُم مَّنْ هَدَى اللّهُ وَمِنْهُم مَّنْ حَقَّتْ عَلَيْهِ الضَّلالَةُ فَسِيرُواْ فِي الأَرْضِ فَانظُرُواْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِينَ
আমি প্রত্যেক উম্মতের নিকট একজন রাসূল পাঠিয়েছি এবং তাঁর মাধ্যমে সাবধান করে দিয়েছি যে, “আল্লাহ র দাসত্ব করো এবং তাগূতের দাসত্ব থেকে দূরে থাকো। এরপর তাদের মধ্যে কাউকে আল্লাহ হিদায়াত দিয়েছেন এবং কারো উপর গোমরাহী চেপে বসেছে। কাজেই পৃথিবীতে একটু চলে ফিরে দেখে নাও যে, মিথ্যা আরোপকারীদের কী পরিণাম হয়েছে” (নাহল: ৩৬)।
জামায়াহ বা সংগঠন:জীবনের সর্বক্ষেত্রে দ্বীন প্রতিষ্ঠা এবং মুসলিম ও অমুসলিমদের প্রতি দায়িত্ব পালনে আগ্রহী ব্যাক্তিগনকে সংঘবদ্ধ করা। ভাষা বর্ণ, কৃষ্টি, জাতীয়তা এবং শ্রেণী নির্বিশেষে সকল মুসলমানদের মধে ̈ খাঁটি ভ্রাতৃত্ত গড়ে তোলা। মত পার্থক্য ̈থাকা সত্বেও সাধারণ ইস্যুগুলোতে মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য ̈গড়ে তোলার জন্য কাজ করা।
সংঘবদ্ধভাবে দ্বীন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা আল্লাহর নির্দেশ َ
أَفاءَدْعَأْمُنتُكْذِإْمُكْيَلَعِّﻟﻠﻪاَةَمْعِنْواُرُكْاذَوْواُق َّرَفَتـَلاَواًيعَِجمِّﻟﻠﻪاِلْبَِبحْواُمِصَتْاعَوِوبُلُقـَْينَبـَف َّلاَفَشَىَلَعْمُنتُكَوًاʭَوْخِإِهِتَمْعِنِبمُتْحَبْصَأَفْمُكَرْفُحَنِّمٍة) َونُدَتْهَتـْمُك َّلَعَلِهِتَآʮْمُكَلُّﻟﻠﻪاُِّينَبـُيـَكِلَذَكاَهْنـِّممُكَذَنقَأَفِالنَّ ار
(“সবাই মিলে আল্লাহর রশিকে মযবুতভাবে ধরে থাকো এবং দলাদলি করো না। আল্লাহর ঐ নিয়ামতের কথা মনে রেখো, যা তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন। তোমরা যখন একে অপরের দুশমন চিলে তখন তিনি তোমাদের মধ্যে মনের মিল করে দিয়েছেন এবং তাঁর মেহেরবানীতে তোমরা ভাই-ভাই হয়ে গিয়েছে। তোমরা আগুনে ভরা এক গর্তের কিনারে দাঁড়িয়েছিলে, আল্লাহ তোমাদেরকে তা থেকে বাঁচিয়ে দিলেন। এভাবেই আল্লাহ তাঁর নিদর্শন তোমাদের সামনে স্পষ্ট ̄করে তুলে ধরেন। হয়তো এসব আলামত থেকে তোমরা সফলতার সরল পথ পেয়ে যাবে।” (আলে ইমরানঃ ১০৩)
আল্লাহর রজ্জুকে শক্তভাবে আঁকড়িয়ে যারা ধরবে তাদের জন ̈ পুরুষ্কারের ঘোষণা َ
ينِنِمْؤُمْالَعَمَكِئَلْوُأَفِِّﻟﻠﻪْمُهَينـِدْواُصَلْخَأَوِّﻟﻠﻪِʪْواُمَصَتْاعَوْواُحَلْصَأَوْواُبَʫَينِذ َّال َّلاِإاِتْؤُيـَفْوَسَو) اًيمِظَعاًرْجَأَينِنِمْؤُمْالُّﻟﻠﻪ(“ অবশ্য তাদের মধ্যে যারা তওবা করবে, নিজেদেরকে সংশোধন করবে, আল্লাহকে মযবুতভাবে ধরবে এবং তাদের আনুগত ̈কে আল্লাহর জন্য ̈নির্ধারন করে নেবে তারা ঐসব লোক, যারা মুমিনদেরকে সাথেই আছে। আল্লাহ মুমিনদেরকে অবশ ̈ই বিরাট পুরস্কার দেবেন।” (নিসা :১৪৬)
দ্বীন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা আল্লাহর নির্দেশ
واُدِاهَجَوَيمِاهَرْبـِإْمُيكِبَأَة َّلِّمٍجَرَحْنِمِينِّالدِفيْمُكْيَلَعَلَعَجاَمَوْمُاكَبَتـْاجَوُهِهِادَهِج َّقَحِ َّﻟﻠﻪاِفيُهَونُكَيِلاَذَهِفيَوُلْبَقـنِمَمينِلْسُمْالُمُاك ََّسمَوِالنَّ اسىَلَعاءَدَهُشواُونُكَتَوْمُكْيَلَعاًيدِهَشُولُس َّالراَمْعِنَفْمُكَلاْوَمَوُهِ َّﻟﻠﻪِʪواُمِصَتْاعَوَاةَك َّالزواُآتَوَةَلا َّالصواُيمِقَأَف) ُيرِالنَّ صَمْعِنَوَلىْوَمْل
(“আল্লাহর পথে জিহাদ করো, যেমনভাবে করা উচিত। তিনি তোমাদেরকে (নিজের কাজের জন ̈) বাছাই করে নিয়েছেন। দীনের মধ্যে ̈তোমাদের উপর কোন সংকীর্ণতা রাখেননি। দ্বীন অনুযায়ী তোমাদের চলার পথে তিনি কোন বাধা থাকতে দেননি।) তোমাদের পিতা ইবরাহীমের মিল্লাতের উপর কায়েম হয়ে যাও। আল্লাহ আগেও তোমাদের নাম ‘মুসলিম’ রেখেছিলেন, এ কুরআনেও (তোমাদের নাম এটাই), যাতে রাসুল তোমাদের উপর সাক্ষী হন এবং তোমরাও মানব জাতির উপর সাক্ষী হও। সুতরাং নামায কায়েম করো যাকাত দাও এবং আল্লাহকে মযবুতভাবে ধরো। তিনিই তোমাদের অভিভাবক। কতই না ভালো এ অভিভাবক। আর কতই না ভালো এ সাহায ̈কারী।” (হজ্জ: ৭৮)
যারা জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে আল্লাহ তাদেরকে পুরষ্কার দান করবেন ِّ
ﻟﻠﻪاَندِعًةَجَرَدُمَظْعَأْمِهِسُنفَأَوْمِِالهَوْمَِϥِّﻟﻠﻪاِيلِبَسِفيْواُدَاهَجَوْواُرَاجَهَوْواُنَآمَينِذ َّالَفْالُمُهَكِئَلْوُأَو) َونُزِائ২০( ُّبـَرْمُهُرِّشَبُيـٍانَوْضِرَوُهْنِّمٍةَْحمَرِبمُه) ٌيمِق ُّمٌيمِعَناَيهِفْمُ َّلهٍنَّ اتَجَو
(“আল্লাহর কাছে তো ঐ লোকদের দরজাই বড়, যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং আল্লাহর পথে তাদের জান ও মাল দিয়ে জিহাদ করেছে। এরাই ঐসব লোক, যারা সফলকাম। তাদের রব তাদেরকে তাঁর রহমত, সন্তুষ্টিও এমন বেহেশতের সুখবর দিচ্ছেন, যেখানে তাদের জন্য চিরস্থায়ী সুখের ব্যবস্থা রয়েছে।)” (তাওবাঃ ২০-২১)
اَتَْحمَرَونُجْرَيـَكِئَلْوُأِّﻟﻠﻪاِيلِبَسِفيْواُدَاهَجَوْواُرَاجَهَينِذ َّالَوْواُنَآمَينِذ َّال َّنِإ) ٌيمِح َّرٌورُفَغُّﻟﻠﻪاَو
(“অপরদিকে যারা ঈমান এনেছে এবং যারা আল্লাহর পথে নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে এসেছে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে, তারাই সঙ্গতভাবে আল্লাহর রহমত পাওয়ার আশা করে। আর আল্লাহ তাদের ভুল-ত্রুটি মাফ করবেন এবং তাদেরকে নিজের রহমত দান করবেন।” (বাক্বারাঃ ২১৮)
كنِإْمُك َّلٌرْيـَخْمُكِلَذِّﻟﻠﻪاِيلِبَسِفيْمُكِسُنفَأَوْمُكِالَوْمَِϥْواُدِاهَجَوًالاَقِثَواًافَفِخْواُرِفْانَونُمَلْعَتـْم)
(“তোমরা বের হও, হালাক অব ̄’ায়ই হোক আর ভারি অব ̄’ায়ই হোক এবং তোমাদের জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করো। তোমরা যদি জানো তাহলে এটাই তোমাদের জন্য ভালো।” (তাওবা ঃ ৪১)
সকল নবী ও রাসুলগণ সংঘবদ্ধভাবে দ্বীন কায়েমের চেষ্টা করেছেন َّ
الَواًوحُنِهِبى َّصَواَمِينِّالدَنِّممُكَلَعَرَشَتـَلاَوَينِّالدواُيمِقَأْنَأىَيسِعَوىَوسُمَوَيمِاهَرْبـِإِهِباَنْيـ َّصَواَمَوَكْيَلِإاَنْيـَحْوَأيِذَينِكِرْشُمْالىَلَعَرُبـَكِيهِفواُق َّرَفَتـ) ُيبِنُينَمِهْيَلِإيِدْهَيـَواءَشَينَمِهْيَلِإِبيَتَْيجُ َّﻟﻠﻪاِهْيَلِإْمُوهُعْدَتاَم
(“ তিনি তোমাদের জন ̈ দীনের ঐসব নিয়ম-কানুনই ঠিক করে দিয়েছেন, যার হুকুম তিনি নূহকে দিয়েছিলেন ও যা আমি (হে নবী!) এখন আপনার কাছে ওহী করে পাঠিয়েছি এবং যার হিদায়াত আমি ইবরাহীম, মূসা ও ঈসাকে এ তাগিদসহ দিয়েছিলাম যে, এই দীনকে কায়েম করুন। আর এ ব্যাপারে একে অপর থেকে আলাদা হয়ে যাবেন না। (হে নবী!) এ কথাটিই এই মুশরিকদের নিকট অত ̈ন্ত অপছন্দনীয়, যার দিকে আপনি তাদেরকে ডাকছেন। আল্লাহ যাকে চান তাকে আপন করে নেন এবং তিনি তাঁর দিকে আসার পথ তাকেই দেখান।” (আশ-শুরাঃ ১৩)
দ্বীন প্রতিষ্ঠার পথে সাহায্যের নির্দেশ ِ
إيِارَنصَأْنَمَينِّيِارَوَحْلِلََيمْرَمُنْابىَيسِعَالَقاَمَكِ َّﻟﻠﻪاَارَنصَأونواُكواُنَمَآَينِذ َّالاَه ُّيـَأَʮَْالحَالَقِ َّﻟﻠﻪاَلىِنيَبنِّمٌةَفِائ َّطتَنَمَآَفِ َّﻟﻠﻪاُارَنصَأُنَْنحَون ُّيِارَوا َّطتَرَفَكَوَيلِائَرْسِإ) َينِرِاهَظواُحَبْصَأَفْمِهِّوُدَعىَلَعواُنَمَآَينِذ َّالَʭْد َّيَأَفٌةَفِئ
(“হে ঐসব লোক, যারা ঈমান এনেছো! আল্লাহর সাহায ̈কারী হও। যেমন ঈসা ইবনে মারইয়াম তার সাথীদেরকে ডেকে বলেছিলেন, “আল্লাহর দিকে (ডাকবার) কাজে আমার সাহায ̈কারী কে আছো? হাওয়ারীগণ জওয়াব দিয়েছিলো, “আমরাই আল্লাহর সাহায ̈কারী।” তখন বনী ইসরাঈলের একটি দল ঈমান আনলো, আর একটিদল কুফরী করলো। তারপর যারা ঈমান আনলো আমি তাদের দুশমনদের বিরুদ্ধে তাদেরকে শক্তিশালী করলাম এবং তারাই বিজয়ী হয়ে রইলো।” (আস সফঃ ১৪)
مُكَامَدْقَأْتِّبَثـُيـَوْمُكْرُنصَيَ َّﻟﻠﻪاواُرُنصَتنِإواُنَآمَينِذ َّالاَه ُّيـَأَʮ
(“হে ঐসব লোক, যারা ঈমান এনেছে! তোমরা যদি আল্লাহকে সাহায ̈ করো তাহলে তিনি তোমাদেরকে সাহায ̈ করবেন এবং তোমাদের কদমকে মযবুত করে দিবেন।” (মুহাম্মদঃ ৭)
যারা আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেনা আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দিবেন ُ
كىَلَعُّﻟﻠﻪاَواًئْيـَشُوه ُّرُضَتَلاَوْمُكَرْيـَغاًمْوَقـْلِدْبَتـْسَيَواًيمِلَأًاʪَذَعْمُكْبِّذَعُيـْواُرِنفَت َّلاِإِدَقٍءْيَشِّل) ٌي
(“ যদি তোমরা বের না হও তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে যন্ত্রনাদায়ক আযাব দেবেন এবং তোমাদের বদলে অন ̈ কোন কাওমকে দাঁড় করাবেন। তোমরা আল্লাহর কোন ক্ষতিই করতে পারবে না। আল্লাহ প্রতিটি জিনিসের উপর ক্ষমতা রাখেন।” (তাওবাঃ৩৯)
ُِّالنَّ بياَه ُّيـَأَʮ) ُيرِصَمْالَسْئِبَوُنَّ مَهَجْمُاهَوْأَمَوْمِهْيَلَعْظُلْاغَوَينِقِافَنُمْالَوَار َّفُكْالِدِاهَج
(“হে নবী! কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে পূর্ণ শক্তিতে জিহাদ করুন এবং তাদের প্রতি কঠোর হোন। দোযখনই তাদের শেষ ঠিকানা এবং তা বড়ই নিকৃষ্ট থাকার জায়গা।” (তাওবাঃ ৭৩)
إَيِدُهْدَقَفـِّﻟﻠﻪِʪمِصَتْعَيـنَمَوُهُولُسَرْمُيكِفَوِّﻟﻠﻪاُتَآʮْمُكْيَلَعىَلْتـُتـْمُنتَأَوَونُرُفْكَتَفْيَكَوَلى) ٍيمِقَتْس ُّمٍاطَرِص
(“তোমাদের পক্ষে কুফরীর দিকে ফিরে যাবার কী কারণ থাকতে পারে। যখন তোমাদেরকে আল্লাহর আয়াত শোনানো হচ্ছে এবং তোমাদের মধে ̈ আল্লাহর রাসূল বর্তমান রয়েছে? আর যে আল্লাহকে মযবুতভাবে ধরবে সে অবশ্যই সঠিক পথ পেয়ে যাবে।” (আলে ইমরানঃ১০১)
ينِذ َّال َّلاِإِ َّﻟﻠﻪاِتَآʮِفيُلِادَُيجاَم) ِدَلاِبْالِفيْمُهُبـ ُّلَقَتـَكْرُرْغَيـَلاَفواُرَفَك
(“আল্লাহর আয়াত নিয়ে শুধু তারাই ঝগড়া করে, যারা কুফরী করেছে। সুতরাং দেশে দেশে তাদের (জাঁকজমকপূর্ণ) গতিবিধি যেন তোমাদেরকে ধোঁকায় না ফেলে।” (গাফেরঃ ৪)
الَقوسلمعليهﷲصلىِ َّﻟﻠﻪاَولُسَر َّنَأ،َةَرْيـَرُهِبيَأْنَع”ْمُهَدَحَأواُرِّمَؤُيـْلَفـٍرَفَسِفيٌةَثَلاَثَانَكاَذِإ”হযরত আবূ হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন, তিনজন লোক ভ্রমণের উদ্দেশে ̈ কোথাও বের হলে তাদের একজনকে নেতা নির্বাচন করে নেয়া উচিত। (আবূ দাউদ)
ﷲصلىِ َّﻟﻠﻪاُولُسَرَالَقَالَق،ٍّرَذِبيَأْنَعوسلمعليه:”َةَقْبـِرَعَلَخْدَقَفـاًرْبـِشَةَاعَمَْالجَقَارَفْنَمِهِقُنُعْنِمِمَلاْسِالإ”.হযরত আবূযর গিফারী (রা) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন, যে ব্যাক্তি জামায়াত ত্যাগ করে এক বিঘত পরিমাণ দূরে সরে গেল, সে যেন ইসলামের রজ্জু হতে তার গর্দানকে আলাদা করে নিল। (আহমদ, আবূ দাউদ)
ﷲصلىِ َّﻟﻠﻪاَولُسَرُتْعَِسمَالَق،ِاءَدْر َّالدِبيَأْنَعُولُقَيـوسلمعليه”َيْرَقـِفيٍةَثَلاَثْنِماَمُامَقُتـَلاٍوْدَبَلاَوٍةُمِهْيَلَعَذَوْحَتْاسِدَق َّلاِإُةَلا َّالصُمِيهِفَكْيَلَعَفـُانَطْي َّالشَةَيِاصَقْالُبْئِّالذُلُكَْϩاَ َّنمِإَفِةَاعَمَْلجِʪ”.َالَقِةَاعَمَْالجِفيَةَلا َّالصِةَاعَمَْلجِʪِنيْعَيـُبِائ َّالسَالَقُةَدِائَز.আদূ দারদা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ্ (সা)কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, কোন জঙ্গল অথবা জনপদে তিনজন লোকও যদি একত্রে বসবাস করে, আর তারা যদি তখন (জামায়াত বদ্ধভাবে) নামায আদায় করার ব্যবস্থা না করে তবে তাদের উপর শয়তান অবশ্য ই প্রভূত্ব ও আধিপত্য বিস্তার করবে। অতএব তুমি অবশ্যই সংঘবদ্ধ হয়ে থাকবে। কেননা নেকড়ের বাঘ পাল থেকে বিচ্ছিন্ন ছাগল- ভেড়াকেই শিকার করে খায়। (আবূ দাউদ- নাসাঈ)
ُه َّنَأوسلمعليهﷲصلىِِّالنَّ بيِنَع،َةَرْيـَرُهِبيَأْنَعَالَق”َاتَمَاتَمَفَةَاعَمَْالجَقَارَفَوِةَاع َّالطَنِمَجَرَخْنَمًة َّيِلِاهَجًةَيتِمহযরত আবূ হোরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা) বলেছেন, যে ব্যাক্তি আমীরের আনুগত ̈কে অস্বীকার করতঃ জামায়াত পরিত্যাগ করল এবং সেই অবস্থায়-ই মারা গেল, সে জাহেলিয়াতের মৃতু ̈বরণ করল। (মুসলিম)
সংগঠন সম্পর্কে হযরত উমর (রা) বলেছেন َ
لاْسِالا.ٍةَاعَطِب َّلاِاَةَارَمِاَلاَوٍةَارَمِِʪ َّل
اِاَةَاعََجمَلاَوِةَاعَمَِبج َّلاِاَمসংগঠন ছাড়া ইসলাম নেই। নেতৃত্ব ছাড়া সংগঠন নেই। আনুগত্য ̈ছাড়া নেতৃত্ব নেই।
তারবিয়াহ বা প্রশিক্ষণ:প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সংগঠনের কর্মীদের মন – মগজ ও পরিত্র সংশোধনের চেষ্টা চালানো। ইলম বা ইসলামের মৌলিক জ্ঞানার্জন যে প্রতিটি মুসলমানের জন্য ফরজে আইন তথা অবশ্য পালণীয দ্বীনি কর্ত্যব্য সে অনুভূতি সৃষ্টি করা এবং সে প্রয়োজনীয়তা পূরণে যথাযথ ভূমিকা রাখা। এই সংগঠনের অধীনে সংঘবদ্ধ জনগোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের যোগ্য কর্মী হিসাবে গড়ে তোলা। যুগে যুগে সকল নবী-রাসুলগণকে আল্লাহ পাক এই মৌলিক কাজ করার জন্য প্রেরণ করেছেন। এই প্রসংগে অনেক কুরআন ও হাদীস রয়েছে:
রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দায়িত্ব ছিল তালিম ও তাযকিয়ার কাজ
هُوَ الَّذِي بَعَثَ فِي الْأُمِّيِّينَ رَسُولًا مِّنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِن كَانُوا مِن قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ (২)
“তিনিই সে সত্তা, যিনি উম্মীদের মধ্যে তাদেরই একজনকে রাসুল হিসেবে পাঠিয়েছেন, যে তাদেরকে তার আয়াত শুনান, তাদের জীবন পবিত্র করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন। অথচ এর আগে তারা স্পষ্ট গোমরাহীতে পড়ে ছিলো।” (সূরা জুময়া: ২)
মানুষের চিন্তা চেতনা পরিশুদ্ধ করার জন্যই আল্লাহর রাসুল আগমন করেছেন
كَمَا أَرْسَلْنَا فِيكُمْ رَسُولاً مِّنكُمْ يَتْلُو عَلَيْكُمْ آيَاتِنَا وَيُزَكِّيكُمْ وَيُعَلِّمُكُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُعَلِّمُكُم مَّا لَمْ تَكُونُواْ تَعْلَمُونَ (১৫১)
“যেমন (তোমাদের এভাবে সফলতা লাভ করেছো যে,) আমি তোমাদের নিকট তোমাদেরই মধ্য থেকে এক রাসূল পাঠিয়েছি, যিনি তোমাদেরকে আমার আয়াত পড়ে শোনান, তোমাদের জীবনকে সঠিকভাবে গড়ে তোলেন, তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন এবং তোমাদেরকে ঐসব কথা শেখান, যা তোমরা জানতে না।” (বাক্বারাঃ ১৫১)
وَلِلّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ يَغْفِرُ لِمَن يَشَاء وَيُعَذِّبُ مَن يَشَاء وَاللّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ (১২৯)
“আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে তার মালিক আল্লাহ। তিনি যাকে খুশি মাফ করেন, যাকে খুশি শাস্তি দেন। তিনি ক্ষমাশীল ও দয়াময়।” (বাক্বারা: ১২৯)
যে জ্ঞান লাভ করে আর যে জ্ঞান লাভ করেনা উভয়ে সমান নয়
أَمَّنْ هُوَ قَانِتٌ آنَاء اللَّيْلِ سَاجِدًا وَقَائِمًا يَحْذَرُ الْآخِرَةَ وَيَرْجُو رَحْمَةَ رَبِّهِ قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُوْلُوا الْأَلْبَابِ (৯)
“(এ লোকের চাল-চলনই ভালো, না ঐ ব্যক্তির যে) আদেশ পালন করে, রাতের বেলায় দাঁড়ায় ও সিজদা করে, আখিরাতকে ভয় করে এবং তার রবের রহমতের আশা করে? তাদেরকে জিজ্ঞেস করুন, যারা জানে, আর যারা জানে না তারা কি সমান হতে পারে? বুদ্ধিমান লোকেরাই নসীহত কবুল করে থাকে।” (যুমারঃ ৯)
কুরআনের শিক্ষাই রবের শিক্ষা
الرَّحْمَنُ (১) عَلَّمَ الْقُرْآنَ (২) خَلَقَ الْإِنسَانَ (৩) عَلَّمَهُ الْبَيَانَ (৪)
“অতি বড় মেহেরবান আল্লাহ এ কুরআনের শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মানুষকে পয়দা করেছেন এবং তাকে কথা বলা শিখিয়েছেন।” (আর রহমানঃ ১-৪)
وَمَا كَانَ الْمُؤْمِنُونَ لِيَنفِرُواْ كَآفَّةً فَلَوْلاَ نَفَرَ مِن كُلِّ فِرْقَةٍ مِّنْهُمْ طَآئِفَةٌ لِّيَتَفَقَّهُواْ فِي الدِّينِ وَلِيُنذِرُواْ قَوْمَهُمْ إِذَا رَجَعُواْ إِلَيْهِمْ لَعَلَّهُمْ يَحْذَرُونَ (১২২)
“ অবশ্য মুমিনদের সবারই (এক সাথে) বের হওয়া জরুরি ছিলো না। কিন্তু এটুকু কেন হলো না যে, তাদের প্রতি দল থেকে কিছু লোক বের হয়ে আসতো, তারা দীন সম্পর্কে স্পষ্ট জ্ঞান হাসিল করতো এবং ফিরে এসে তাদের এলাকার লোকদেরকে সাবধান করতো, যাতে তারা (অমুসলিমদের মতো আচরণ করা থেকে) বিরত থাকতে পারতো।” (তাওবাঃ ১২২)
হাদীস
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” تَعَلَّمُوا الْقُرْآنَ وَالْفَرَائِضَ وَعَلِّمُوا النَّاسَ فَإِنِّي مَقْبُوضٌ ”
আবূ হোরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) ইরশাদ করেছেন, তোমরা ফরায়েজ ও কুরআন শিক্ষা কর এবং মানুষকে উহা শিক্ষা দাও। কেননা আমাকে অতিসত্বরই উঠিয়ে নেয়া হবে। (তিরমিযী)
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو ـ رضى الله عنهما ـ ق قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “إِنَّ مِنْ خِيَارِكُمْ أَحْسَنَكُمْ أَخْلاَقًا ”.
হযরত আবদুল্লাহ্ ইব্ন আমর (রা) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সা) বলেছেন, তোমদের মধ্যে সেই ব্যক্তি-ই সবচেয়ে উত্তম যে চরিত্রের দিক দিয়ে উত্তম। (বুখারী ও মুসলিম)
আদল বা ন্যায়বিচার:আদল (ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা)
ন্যায় প্রতিষ্ঠা ও অন্যায় প্রতিরোধের চেষ্টা চালানো এবং ধর্ম, বর্ণ,কৃষ্টি এবং অন্যান্য ভেদাভেদ নির্বিশেষে সকলের জন্য সুবিচার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অংশ গ্রহন করা।
وَإِذَا حَكَمْتُم بَيْنَ النَّاسِ أَن تَحْكُمُواْ بِالْعَدْلِ إِنَّ اللّهَ نِعِمَّا يَعِظُكُم بِهِ إِنَّ اللّهَ كَانَ سَمِيعًا بَصِيرًا (৫৮)
আর মানুষের পরস্পরের মধ্যে যখন কোন ব্যাপারে তোমরা ফয়সালা করবে পূর্ণ সুবিচার ও নিরপেক্ষ ইনসাফের সাথে ফয়সালা করো, আল্লাহ্ তোমাদেরকে কতই না ভাল কাজের উপদেশ দিচ্ছেন। (সূরা নিসাঃ ৫৮)
আদল প্রতিষ্ঠা আল্লাহর নির্দেশ
إِنَّ اللّهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالإِحْسَانِ وَإِيتَاء ذِي الْقُرْبَى وَيَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاء وَالْمُنكَرِ وَالْبَغْيِ يَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ
আল্লাহ সুবিচার, বদান্যতা ও নিকটাত্মীয়ের হক আদায় করার আদেশ দিচ্ছেন এবং বেহায়াপনা, নিষিদ্ধ কাজ ও যুলুম করা থেকে নিষেধ করেছেন। তিনি তোমাদেরকে নসীহত করছেন, যাতে তোমরা উপদেশ নিতে পারো। (সূরা নহলঃ ৯০)
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ كُونُواْ قَوَّامِينَ لِلّهِ شُهَدَاء بِالْقِسْطِ وَلاَ يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآنُ قَوْمٍ عَلَى أَلاَّ تَعْدِلُواْ اعْدِلُواْ هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوَى وَاتَّقُواْ اللّهَ إِنَّ اللّهَ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ (
হে ঐসব লোক, যারা ঈমান এনেছো! আল্লাহর খাতিরে সত্যের উপর কায়েম থাকো এবং ইনসাফের সাক্ষী হও। কোন দলের দুশমনী যেন তোমাদেরকে এতোটা ক্ষেপিয়ে না দেয় যে, তোমরা ইনসাফ থেকে ফিরে যাও। ইনসাফ করো। এটাই তাকওয়ার কাছাকাছি। আল্লাহকে ভয়করে চলো। নিশ্চয়ই তোমরা যা কিছু করো আল্লাহ তার পুরোপুরি খবর রাখেন( আল-মায়েদাহ ঃ ৮)
وَلاَ تَقْرَبُواْ مَالَ الْيَتِيمِ إِلاَّ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ حَتَّى يَبْلُغَ أَشُدَّهُ وَأَوْفُواْ الْكَيْلَ وَالْمِيزَانَ بِالْقِسْطِ لاَ نُكَلِّفُ نَفْسًا إِلاَّ وُسْعَهَا وَإِذَا قُلْتُمْ فَاعْدِلُواْ وَلَوْ كَانَ ذَا قُرْبَى وَبِعَهْدِ اللّهِ أَوْفُواْ ذَلِكُمْ وَصَّاكُم بِهِ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ (১৫২)
আর তোমরা প্রাপ্ত বয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত ইয়াতীমের সম্পদেও ধারে কাছে যেয়োনা; তবে উত্তম পদ্ধতিতে যেতে পারো। ওজন ও পরিমাপে পুরোপুরি ইনসাফ করো, প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর আমি ততটুকু দায়িত্বের বোঝা রাখি যতটুকু তার দায়িত্বের সামর্থ্যরে মধ্যে রয়েছে। যখন কথা বলো ন্যায্য কথা বলো, চাই তা তোমার আত্মীয় স্বজনের ব্যাপারেই হউক না কেন। আল্লাহর অংগীকার পূর্ণ কর। এ বিষয়গুলো আল্লাহর নির্দেশ আল্লাহ তোমাদেও দিয়েছেন। সম্ভবত তোমরা নসীহত গ্রহন করবে- (সূরা আনআম ঃ ১৫২)
ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্যই আল্লাহ যুগে যুগে নবী ও রাসুল পাঠিয়েছেন
لَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنَاتِ وَأَنزَلْنَا مَعَهُمُ الْكِتَابَ وَالْمِيزَانَ لِيَقُومَ النَّاسُ بِالْقِسْطِ وَأَنزَلْنَا الْحَدِيدَ فِيهِ بَأْسٌ شَدِيدٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَلِيَعْلَمَ اللَّهُ مَن يَنصُرُهُ وَرُسُلَهُ بِالْغَيْبِ إِنَّ اللَّهَ قَوِيٌّ عَزِيزٌ (২৫)
“আমি আমার রাসুলগণকে স্পষ্ট প্রমাণসহ পাঠিয়েছি এবং তাদের সাথে কিতাব ও মীযান নাযিল করেছি, যেন মানুষ ইনসাফের উপর কায়েম হতে পারে। আলি লোহা (বা রাষ্ট্রশক্তিও) নাযিল করেছি, যার মধ্যে বিরাট শক্তি ও মানুষের জন্য বহু কল্যাণ রয়েছে। এটা এ উদ্দেশ্যেও করা হযেছে, যাতে আল্লাহ জেনে নিতে পারেন যে, কে তাঁকে না দেখেই তাঁর ও তাঁর রাসুলগণের সাহায্য-সহযোগিতা করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা বড়ই শক্তিমান ও প্রতাপশালী।” (হাদীদ ঃ ২৫)
মানবতার মুক্তির জন্য চেষ্টা চালানো আল্লাহর নির্দেশ
وَمَا لَكُمْ لاَ تُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللّهِ وَالْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاء وَالْوِلْدَانِ الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْ هَذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ أَهْلُهَا وَاجْعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ وَلِيًّا وَاجْعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ نَصِيرًا (৭৫)
“তোমাদের কী হলো যে, তোমরা ঐসব অসহায় পুরুষ, নারী ও শিশুদের খাতিরে লড়াই করছো না, যাদেরকে দাবিয়ে রাখা হয়েছে এবং যারা ফরিয়াদ করছে যে, হে আমাদের রব! আমাদেরকে যালিমদের এ বস্তি থেকে উদ্ধার করো। আর তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য কোন অভিভাবক ও সাহায্রকারীর ব্যবস্থা করো।” (নিসা ঃ ৭৫)
فَلْيُقَاتِلْ فِي سَبِيلِ اللّهِ الَّذِينَ يَشْرُونَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا بِالآخِرَةِ وَمَن يُقَاتِلْ فِي سَبِيلِ اللّهِ فَيُقْتَلْ أَو يَغْلِبْ فَسَوْفَ نُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمًا (৭৪)
“(এসব লোকের জানা উচিত যে,) যারা আখিরাতের বিনিময়ে দুনিয়ার জীবনকে বিক্রি করে দেয়, তাদেরই আল্লাহর পথে লড়াই করা উচিত। তারপর যে আল্লাহর পথে লড়াই করবে এবং হয় নিহত হবে আর না হয় বিজয়ী হবে, তাকে আমি অবশ্যই বিরাট বদলা দান করবো।” (নিসা ঃ ৭৪)
মানবতার মুক্তির সংগ্রাম আখিরাতে নাজাতের পথ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلَى تِجَارَةٍ تُنجِيكُم مِّنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ (১০) تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ (১১) يَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَيُدْخِلْكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِي جَنَّاتِ عَدْنٍ ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ (১২)
“হে ঐসব লোক, যারা ঈমান এনেছো! আমি কি তোমাদেরকে ঐ ব্যবসার কথা বলবো, যা তোমাদেরকে কষ্টদায়ক আযাব থেকে বাঁচাবে। আল্লাহ ও রাসুলের উপর ঈমান আনো এবং তোমাদের জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করো। যদি তোমরা জানো তাহলে এটাই তোমাদের জন্য ভালো। আল্লাহ তোমাদের গুনাহ মাফ করে দেবেন এবং তোমাদেরকে এমন বেহেশতে প্রবেশ করাবেন, যার নিচে ঝর্নাধারা বইছে, আর তোমাদেরকে চিরস্থায়ী বেহেশতের খুব ভালো ঘর দেবেন। এটা অতি বড় কামিয়াবী।” (সফ ঃ ১০-১২)
বৈষয়িক কোন স্বার্থ দ্বীন প্রতিষ্ঠার পথে মুমিনের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনা
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَتَّخِذُواْ آبَاءكُمْ وَإِخْوَانَكُمْ أَوْلِيَاء إَنِ اسْتَحَبُّواْ الْكُفْرَ عَلَى الإِيمَانِ وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمْ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ (২৩) قُلْ إِن كَانَ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَآؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُم مِّنَ اللّهِ وَرَسُولِهِ وَجِهَادٍ فِي سَبِيلِهِ فَتَرَبَّصُواْ حَتَّى يَأْتِيَ اللّهُ بِأَمْرِهِ وَاللّهُ لاَ يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ (২৪)
“হে ঐসব লোক, যারা ঈমান এনেছো! তোমরা তোমাদের পিতা এবং ভাইদেরকেও তোমাদের বন্ধু বানিও না, যদি তারা ঈমানের চেয়ে কুফরীকে বেশি ভালোবাসে। তোমাদের মধ্যে যারা তাদেরকে বন্ধু বানায় তারাই যালিম। (হে রাসূল! আপনি তাদেরকে) বলুন ঃ তোমাদের পিতা, তোমাদের পুত্র, তোমাদের ভাই, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের আত্মীয়-স্বজন, তোমাদের ঐ মাল যা তোমরা কামাই করেছে, তোমাদের ঐ কারবার তোমরাযার মন্দার ভয় করো এবঙ তোমাদের ঐ বাড়ি, যা তোমরা পছন্দ করো- (এসব) যদি তোমাদের কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ও তাঁর পথে জিহাদের চেয়ে বেশি প্রিয় হয় তাহলে আল্লাহর ফায়সালা আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করো। আল্লোহ ফাসিক লোকদেরকে হেদায়ত করেন না।” (তাওবা ঃ ২৩-২৪)
ذَلِكَ الْفَضْلُ مِنَ اللّهِ وَكَفَى بِاللّهِ عَلِيمًا (৭০)
“এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ দান। (আসল বিষয় জানার জন্য) আল্লাহর ইলমই যথেষ্ট।” (নিসা: ৭০)
আদল সংক্রান্ত হাদীস
عَنْ عَائِشَةَ رضى قَالَ قَالَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “اللَّهُمَّ مَنْ وَلِيَ مِنْ أَمْرِ أُمَّتِي شَيْئًا فَشَقَّ عَلَيْهِمْ فَاشْقُقْ عَلَيْهِ وَمَنْ وَلِيَ مِنْ أَمْرِ أُمَّتِي شَيْئًا فَرَفَقَ بِهِمْ فَارْفُقْ بِهِ ” . رواه مسلم
হযরত আয়েশা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম (সা) এই মর্মে দোয়া করেছিলেন, যে ব্যক্তিকে আমার উম্মতের কোন বিষয়ের কর্তৃত্ব দান করা হয়, অতঃপর সে তাদের প্রতি কঠোরতা করে, তুমি তার প্রতি কঠোর হয়। আর যে ব্যক্তি আমার উম্মতের কোন বিষয়ে কর্তৃত্ব লাভ করে তাদের প্রতি মেহেরবাণী করে, তুমিও তার উপর মেহেরবান হও। (মুসলিম)
عَن مَعْقِلَ بْنَ يَسَارٍ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ”مَا مِنْ وَالٍ يَلِي رَعِيَّةً مِنَ الْمُسْلِمِينَ، فَيَمُوتُ وَهْوَ غَاشٌّ لَهُمْ، إِلاَّ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ ”. رواه البخارى و مسلم
হযরত মা‘কাল ইব্ন ইয়াসা (রা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, যে শাসক মুসলমানের উপর শাসন ক্ষমতা লাভ করে যালেম ও খিয়ানতকারী হিসেবে মৃত্যু বরণ করে, আল্লাহ্ অবশ্যই তার জন্য জান্নাত হারাম করবেন। (বুখারী ও মুসলিম)
বির বা সমাজ কল্যাণ: মুসলিম- অমুসলিম নির্বিশেষে মানবতার কল্যাণে কাজ করা এবং এই ধরনের কাজ যারা করছেন তাদেরকে সহযোগিতা করা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক, অর্থনেতিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থা গঠনের মাধ্যমে কমিউনিটির উন্নয়নে ভূমিকা পালণ করা এবং সামাজিক স¤প্রীতি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা পালণ করা।
মানবতার কল্যাণে কাজ করা নেকীর কাজ
لَّيْسَ الْبِرَّ أَن تُوَلُّواْ وُجُوهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلَكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آمَنَ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَالْمَلآئِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّينَ وَآتَى الْمَالَ عَلَى حُبِّهِ ذَوِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَالسَّآئِلِينَ وَفِي الرِّقَابِ وَأَقَامَ الصَّلاةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَالْمُوفُونَ بِعَهْدِهِمْ إِذَا عَاهَدُواْ وَالصَّابِرِينَ فِي الْبَأْسَاء والضَّرَّاء وَحِينَ الْبَأْسِ أُولَئِكَ الَّذِينَ صَدَقُوا وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُتَّقُونَ (১৭৭)
তোমরা পূর্ব কিংবা পশ্চিম দিকে মুখ ফিরালে তা কিন্তু পুণ্যের কাজ নয়। বরং প্রকৃত নেক কাজ হলো মানুষ ঈমান আনবে আল্লাহর প্রতি, পরকালের প্রতি, ফেরেশতাদের প্রতি, আল কিতাবের প্রতি, নবীদের প্রতি, আর আল্ল¬াহর সন্তুষ্ঠি লাভের আশায় অর্থ সম্পদ ব্যয় করবে আত্মীয়দের জন্য, ইয়াতীমদের জন্য, মিসকীনদের ও পথিকদের জন্য, সাহায্য প্রার্থীদের জন্যে এবং মানুষকে গোলামীর জিঞ্জির থেকে মুক্ত করার জন্য – (আল বাক্বারা ঃ১৭৭)মানুষের হক আদায় করা আল্লাহর নির্দেশ
আল্ল¬াহ তায়ালা মহাগ্রন্থ আল কুরআনে কিছু ব্যক্তির হক নির্ধারণ করে দিয়েছেন তাদের হক আদায় করা আবশ্যক। এই প্রসংগে আল্লাহ ইরশাদ করছেন:
يَسْأَلُونَكَ مَاذَا يُنفِقُونَ قُلْ مَا أَنفَقْتُم مِّنْ خَيْرٍ فَلِلْوَالِدَيْنِ وَالأَقْرَبِينَ وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَمَا تَفْعَلُواْ مِنْ خَيْرٍ فَإِنَّ اللّهَ بِهِ عَلِيمٌ (২১৫)
তোমার কাছে জিজ্ঞাসা করে তারা কি ব্যয় করবে? বলে দাও- যে বস্তুই তোমরা ব্যয় কর তা হবে পিতা-মাতার জন্য, আত্মীয় আপনজনদের জন্য, ইয়াতীম-অনাথদের জন্য, অসহায়দের জন্য এবং মুসাফিরদের জন্য। আর তোমরা যে কোন সৎ কাজ করবে নিসন্দেহে তা অত্যন্ত ভালভাবেই আল্লাহর জানা রয়েছে- (আল-বাক্বারাঃ ২১৫)
মিসকীন ও ইয়াতীমের ভরন পোষণের জন্য অর্থ ব্যয়ের কথা কুরআনের বিভিণœ জায়গায় এসেছে:
َيُطْعِمُونَ الطَّعَامَ عَلَى حُبِّهِ مِسْكِينًا وَيَتِيمًا وَأَسِيرًا (৮)
إِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللَّهِ لَا نُرِيدُ مِنكُمْ جَزَاءً وَلَا شُكُورًا (৯)
إِنَّا نَخَافُ مِن رَّبِّنَا يَوْمًا عَبُوسًا قَمْطَرِيرًا (১০)
فَوَقَاهُمُ اللَّهُ شَرَّ ذَلِكَ الْيَوْمِ وَلَقَّاهُمْ نَضْرَةً وَسُرُورًا (১১)
وَجَزَاهُم بِمَا صَبَرُوا جَنَّةً وَحَرِيرًا (১২)
(আর সৎ লোকেরা) আল¬াহর ভালবাসায় খাবার খাওয়ায় মিসকীন, ইয়াতীম এবং বন্দীদের, আর বলে: আমরা কেবল আল¬াহর সন্তুষ্টির জন্য তোমাদের আহার করাচ্ছি। তোমাদের কাছ থেকে কোন প্রকার বিনিময় বা কৃতজ্ঞতা লাভের আমরা আকাংখী নই-( আদ-দাহরঃ ৮-৯)।
ধনীদের সম্পদে বঞ্চিতদের হক রয়েছে
وَفِي أَمْوَالِهِمْ حَقٌّ لِّلسَّائِلِ وَالْمَحْرُومِ (১৯)
“এবং তাদের মালের মধ্যে ভিখারী ও বঞ্চিতদের অধিকার ছিলো।” (যারিয়াতঃ ১৯)
যারা অন্য মানুষের হক আদায় করেনা আল্লাহ তাদের ধিক্কার দিয়েছেন
وَيَمْنَعُونَ الْمَاعُونَ (৭)
“(এমনকি) সাধারণ ব্যবহারের জিনিসও অন্যকে দেয় না।” (মাউনঃ ৭)
ঋণ গ্রহীতাকে সাহায্যের কথা কুরআনে এসেছে
ঋণগ্রহীতার ঋণ পরিশোধের জন্য যাকাত দেয়া, সদকা করা বা করজে হাসানার কথাও কুরআনে এসেছে। এই প্রসংগে আল্লাহ বলেন:
وَإِن كَانَ ذُو عُسْرَةٍ فَنَظِرَةٌ إِلَى مَيْسَرَةٍ وَأَن تَصَدَّقُواْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ (২৮০)
ঋণগ্রহীতা যদি অত্যধিক অনটনে পীড়িত হয় তাহলে তার অবস্থা স্বচছল না হওয়া পর্যন্ত তাকে সুযোগ দাও; আর যদি তাকে মাফ করে দাও তাহলে তা হবে তোমাদের জন্য উত্তম। যদি তোমরা কিছু জ্ঞান রাখতে তাহলে এর কল্যাণকারিতা উপলব্ধি করতে- (আল বাকারাঃ ২৮০)।
মিসকীনকে খাবার না দেয়া জাহান্নামীদের অভ্যাস
إِنَّهُ كَانَ لَا يُؤْمِنُ بِاللَّهِ الْعَظِيمِ (৩৩) وَلَا يَحُضُّ عَلَى طَعَامِ الْمِسْكِينِ (৩৪)
“নিশ্চয়ই সে মহান আল্লাহর প্রতি ঈমান আনতো না। সে মিসকীনকে খাবার দেবার জন্য উৎসাহ দিতো না।” (হাক্কাহ ঃ ৩৩-৩৪)
হাদীস
عَنْ اَنَسٍ رضى وَعَنْ عَبْدِ اللهِ رضى قَالَ قَالَ رَسُوْلُ للهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم اَلْخَلْقُ عَيَالُ اللهِ فَاَحَبُّ الْخَلْقِ اللهِ مَنْ اَحْسَنَ اِلى عَيَالِه (بيهقى)
আনাস ইব্ন মালেক (রা) ও আবদুল্লাহ্ ইব্ন মাসঊদ (রা) হতে বর্ণিত, তারা বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন, গোটা সৃষ্টিকূল আল্লাহ্র পরিবার। অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহ্র পরিবারের সাথে সদ্ব্যবহার করে সে আল্লাহ্র সর্বাধিক প্রিয় সৃষ্টি। (বায়হাকী)
কর্মনীতি ও বৈশিষ্ট্য: কর্মপদ্ধতি বা কর্মকৌশল ছাড়া কোন সংগঠনই তার লক্ষ্য হাসিল করতে পারেনা। এই ক্ষেত্রে এই কথা মনে রাখা দরকার যে রাসূল (সঃ)-এর অনুসৃত নীতির আলোকেই ইসলামী সংগঠনের কর্মনীতি প্রণীত হয়। এর সাথে বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাসলব্ধ অভিজ্ঞতা কর্মনীতিকে বাস্তবসম্মত করতে সহায়ক করে করে। ইসলামী আন্দোলনের মৌলিক নীতিমালার আলোকেই কর্মপদ্ধতি রচিত হয়। এই ক্ষেত্রে স্থান, কাল, পাত্র, পরিবেশ ও পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ইসলামী সংগঠন সমূহের কর্মপদ্ধতির মাঝে পার্থক্য থাকাটা স্বাভাবিক। রাসূলে কারীম রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালামের মক্কী ও মাদানী জীবন যেমনি একধরনের ছিলনা তেমনি মুসলিম দেশ ও পাশ্চাত্যের পরিবেশ এক না হওয়ার ফলে কর্মনীতিতে কিছুটা পার্থ্যক্য থাকাটাই স্বাভাবিক।
এম সি এরকর্মনীতি হচ্ছে: কোন বিষয়ে সিদ্বান্ত গ্রহণ কিংবা কোন কর্মপন্থা গ্রহণের সময় আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ ও বিধানের প্রতি গুরুত্ব দেয়া। শরীয়াহ বিরোধী কোন কর্মনীতি গ্রহণ না করা। উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য সততা ও বিশ্বাসপরায়ণতা পরিপন্থী কিংবা ফেতনা সৃষ্টিকারী কোন কর্মপন্থা গ্রহণ না করা। নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় দাওয়াত সম্প্রসারণ, সংগঠন ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে লোকদের মন-মগজ ও চরিত্রের সংশোধন।
মূলত ইসলামী সংগঠন আর অন্যান্য সংগঠনের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য এখানেই। যে সংগঠনের সার্বিক কর্মকান্ড কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে পরিচালিত হয়না উক্ত সংগঠনকে ইসলামী সংগঠন বলা যায়না। আল্লাহ তায়ালা মহাগ্রন্থ আল-কুরআনকে মানুষের জীবন চলার নির্দেশিকা হিসাবে দান করেছেন। তিনি ইরশাদ করছেন,
الم (১) ذَلِكَ الْكِتَابُ لاَ رَيْبَ فِيْهِ هُدًى لِّلْمُتَّقِيْنَ (২)
“আলিফ, লা-ম, মীম এটি আল্লাহ র কিতাব। এতে কোন সন্দেহ নেই। ঐ মাত্তাকীদের জন্য হিদায়াত” (বাকারা ঃ ১,২)। কুরআন হচ্ছে মানুষের হিদায়েত ও সুস্পষ্ট পথ নির্দেশ। এই প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন,
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيَ أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ يُرِيدُ اللّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلاَ يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ وَلِتُكْمِلُواْ الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُواْ اللّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ (১৮৫)
“রমযান মাস হলো সেই মাস, যে মাসে কুরআন নাযিল করা হয়েছে; যা মানুষের জন্য পুরোটাই হিদায়ত, যা এমন স্পষ্ট উপদেশে পূর্ণ যে, তা সঠিক পথ দেখায় এবং হক ও বাতিলের পার্থক্য পরিষ্কারভাবে তুলে ধরে। তাই এখন থেকে যে ব্যক্তি হক ও বাতিলরে পার্থক্য পরিষ্কারভাবে তুলে ধরে। তাই এখন থেকে যে ব্যক্তি এ মাস পায় তার অবশ্য কর্তব্য যে, সে যেন পুরো মাস রোযা রাখে। আর যে অসুস্থ বা সফরে থাকে, সে যেন অন্য সময় ঐ দিনগুলোর রোযা করে নেয়। আল্লাহ তোমাদের জন্য যা সহজ তা-ই চান, যা কঠিন তা তিনি চান না। তোমাদেরকে এ জন্যই এ নিয়ম দেওয়া হয়েছে, যাতে তোমরা রোযার সংখ্যা পুরা করতে পারো, আর যে হিদায়াত আল্লাহ তোমাদেরকে দিয়েছেন এর জন্য তোমরা আল্লাহ র বড়ত্ব প্রকাশ করতে পারো এবং আল্লাহ র শুকরিয়া আদায় করতে পারো” (বাকারা: ১৮৫)। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কুরআন অনুসরণ করলে মানুষ পথহারা হবেনা। এই প্রসঙ্গে আল্লাহ ইরশাদ করছেন,
قَالَ اهْبِطَا مِنْهَا جَمِيعًا بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ فَإِمَّا يَأْتِيَنَّكُم مِّنِّي هُدًى فَمَنِ اتَّبَعَ هُدَايَ فَلَا يَضِلُّ وَلَا يَشْقَى (১২৩)
“আল্লাহ বললেন, “তোমরা উভয়ই (মানুষ ও শয়তান) এখান থেকে নেমে যাও। তোমরা একে অপরের দুশমন। আমার পক্ষ থেকে যদি কোন হিদায়াত পৌঁছে তাহলে যে আমার হিদায়াত মেনে চলবে সে গোমরাহও হবে না, হতভাগাও হবে না- (তোয়াহা :১২৩)। বস্তুত আল-কুরআন মানুষের জন্য সুস্পষ্ট জীবন বিধানের নাম। এই প্রসঙ্গে আল্লাহ ইরশাদ করেন,
طس تِلْكَ آيَاتُ الْقُرْآنِ وَكِتَابٍ مُّبِينٍ (১) هُدًى وَبُشْرَى لِلْمُؤْمِنِينَ (২)
“তোয়া-সীন। এগুলো কুরআন ও এক সুস্পষ্ট কিতাবের আয়াত। এটা মুমীনদের জন্য হিদায়াত ও সুসংবাদ” (নমল: ১, ২)। একজন ঈমানদার ব্যক্তিকে কুরআন ও সুন্নাহর নির্দেশনা মেনে চলতে হবে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে। এই প্রসঙ্গে রাসূলে কারীম রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম ইরশাদ করেন,
عن مالك ابن انس رضي الله تعالي عنه قال قال رسول الله صلي الله عليه وسلم تركت فيكم امرين لن تضلوا ما تمسكتم بهما كتاب الله وسنة رسوله
হযরত মালেক ইবন আনাস থেকে বর্ণিত যে রাসূলে কারীম রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম ইরশাদ করেন যে আমি তোমাদেও জন্য দুটো চিনিস রেখে যাচ্ছি , যতদিন তোমরা এদুটিকে আঁকড়িয়ে থাকবে ততদিন তোমরা পথ হারা হবেনা। একটি হচ্ছে আল্লাহর কিতাব, আরেকটি হচ্ছে নবী পাকের সুন্নাহ (মুয়াত্তা ইমাম মালেক)। এই প্রসঙ্গে আরেকটি হাদীস রয়েছে,
عن جابر رضي الله تعالي عنه قال قال رسول الله صلي الله عليه وسلم ان خير الحديث كتاب الله و خير الهدي هدي محمد صلي الله عليه وسلم- رواه مسلم
হযরত জাবির হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম ইরশাদ করেন যে, সর্বোত্তম বাণী হচ্ছে আল্লাহর কিতাব এবং সর্বোত্তম হিদায়েত হচ্ছে হযরত মুহাম্মদ (সা) এর হিদায়েত বা পথ প্রদর্শন- (সহীহ মুসলিম)। এই প্রসঙ্গে আরও একটি হাদীস প্রণিধানযোগ্য,
عن علي رضي الله تعالي عنه قال سمعت رسول الله صلي الله عليه وسلم يقول و هو حبل الله المتين- وهو الذكر الحكيم وهوالصراط المستقيم وهوالذي لاتزيغ به الاهواء ولاتلبس به الالسنة- ترمذي
হযরত আলী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসূলে কারীম রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলতে শুনেছি, এটা হল (আল-কুরআন) আল্লাহর মজবুত রশি, হিকমত ও প্রজ্ঞাপূর্ণ উপদেশ ও সহজ সরল পথ। তা অনুসরণ করলে মানুষের চিন্তাধারা বিপথগামী হয়না এবং এমে যবানও আড়ষ্ট হয়না- (তিরমিযি)।
নিম্নে এম সি এরকতিপয় বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো:
১. এম সি এ এর পলিসি হচ্ছে কুরআন ও হাদিস অনুসরনের মাধ্যমে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জন এবং এর নীতি হচ্ছে ইজতিহাদ অনুসরণ করা।
২. অন্যান্য সংগঠনে রাজনৈতিক প্রভাব, অর্থনৈতিক যোগ্যতা ও সামাজিক মর্যাদার ভিত্তিতে দলীয় পদ বণ্টন করা হয়। দলীয় নির্বাচনে পক্ষে-বিপক্ষে প্রচরণা হয়। অঞ্চলিকতা আত্মীয়তাসহ বিভিন্ন কারণে গ্র“পিং হয় কিন্তু ইসলামী সংগঠনে ঈমান, ইলম ও আমলের দিক দিয়া অগ্রসরদেরকেই গোপণ ব্যালটের মাধ্যমে নেতৃত্ব পদে নির্বাচিত করা হয়। ইসলামী সংগঠনের কোন পর্যায়ে নির্বাচনে পদপ্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই। নেতৃত্ব পদের জন্য পরোক্ষ চেষ্টাও অযোগ্যতার প্রমাণ বলে বিবেচিত হয়। নেতৃত্ব প্রত্যাশীদের পদ দিয়ে ধরে রাখার নীতি ইসলামী সংগঠনে নেই।
৩. অন্যান্য সংগঠনে সাংগঠনিক তৎপরতা মাধ্যমেই কর্মী গঠন ও নেতৃত্ব বাছাই হয়। কিন্তু ইসলামী সংগঠনে সাংগঠনিক তৎপরতার সাথে ইসলামী আদর্শ অনুযায়ী মন-মগজ গঠন কতটুকু হয়েছে এই বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়।
৪. অন্যান্য সংগঠনে দলীয় বা ব্যক্তির সংশোধনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা না থাকায় উপদল, কোন্দল ও গীবত চর্চা হয়। কিন্তু ইসলামী সংগঠনে সাংগঠনিক পদ্ধতিতেই সমালোচনা ও সংশোধনের সুযোগ রয়েছে।
৫. ইসলামী সংগঠন কোন ব্যক্তি বিশেষ কেন্দ্রীক পরিচালিত হয়না; ইসলামী সংগঠনে সামষ্টিক নেতৃত্বই ঐতিহ্য হিসাবে গরড় উঠেছে। কোন ব্যক্তি বা গ্র“পের ইচ্ছা বাস্তবায়নে দলীয় সিদ্বান্ত হয়না। পরামর্শ ভিত্তিক গ্রহীত সিদ্বান্তই সকলে অনুসরণ করে।
৬. ইসলামী সংগঠনে ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করার কেউ চেষ্টা করেনা। যদি কেউ ব্যক্তিগত কোন স্বার্থ সিদ্ধির জন্য আসেন তাহলে স্বাভাবিক পদ্ধতিতেই ছাটাই হয়ে যান।
৭. ইসলামী সংগঠনের দৃষ্টিভংগী ভারসাম্য পূর্ণ। এতে কোন ধরনের হঠকারীতা বা একগুঁয়েমীর স্থান নেই।
৮. এম সি এ মাজহাব ভিত্তিক সংগঠন নয়। এটি আহলি সুন্নাত ওয়াল জামা’আত অন্তর্ভুক্ত একটি সংগঠন এবং সকল মাজহাবের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আই এফ ইর সকল কর্মীরা কুরআন ও হাদীসের নীতিমালা অনুসরণ করে ইজতিাহদলব্ধ মাসয়ালায় বিভিন্ন মতের প্রতি সহনশীল। কেননা এই সংগঠন বিশেষ কোন মাজহাবকে প্রতিনিধিত্ব করেনা এবং করা উচিত মনে করেনা। সকল মাজহাবের ভাই-বোনদের জন্য দাওয়াতের স্বাগতিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায় এবং খূঁটি নাটি বিষয় নিয়ে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি থেকে বিরত রাখতে চায়। ফোরাম ইউরোপের প্রেক্ষিতকে সামনে রেখে ফিক্হ সম্পর্কিত বিষয়াবলী সমম্বয় করতে চায়।
৯. এম সি এমুসলিম কমিউনিটির বহুদলীয় স্বকীয়তাকে স্বীকৃতি প্রদান করে এবং অনেক সংগঠনের সাথে অনেক বিষয়ে ভিন্ন মত থাকার পরও মুসলমান হিসেবে তাদের অধিকার প্রদান করে। সকল মুসলিম সংগঠনের সাথে গভীর সম্পর্ক রাখতে বিশ্বাসী এবং যোগাযোগ ও বিভিন্ন মতামতে আলোচনা সাপেক্ষে ও মতের অংশিদার হয়ে নিজেদের ব্যবধানকে হ্রাস করতে চায়। তবে এসব লক্ষ্য অর্জনের বাস্তব পথ ও পদ্ধতি নির্ধারণ নির্ভর করবে সংগঠনের কেন্দ্রীয় শু’রার উপর। তবে গভীর সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে সমমনা দলকে অগ্রাধিকার প্রদান ফোরামের লক্ষ্য। সুতরাং সহযোগীতা ও সমম্বয়ের মাধ্যমে মুসলমানদের মধ্যে অধিকতর ঐক্য প্রতিষ্ঠায় এম সি এসর্বদা প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে।
১০. বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ’র দায়িত্বের অংশ হিসেবে আইএফই বহিঃর্বিশ্বে বিভিন্ন মুসলিম সংগঠনের সাথে নীবিড় সম্পর্ক অব্যহত রাখছে। তবে এই সম্পর্কের মাত্রা নির্ভর করে সময়, সম্পদ, লক্ষ্য ও কর্মসূচীর অভিন্নতা, জনশক্তির কর্মক্ষমতা এবং সৃষ্ট সম্পর্ক থেকে প্রাপ্ত স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী সুবিধাবলী ইত্যাদির উপর।
১১. ইসলামী সাহিত্যের ব্যবহার : সমৃদ্ধ সাহিত্য ভান্ডার ব্যবহারে আইএফই ঐসব জ্ঞানী-গুনিদের সাহিত্যকে অগ্রাধিকার প্রদান করে যাঁদের লিখনি ও কাজ ছিল অভিন্ন। যাঁরা লিখেন অথচ আমল করেননা তাঁদের একদিকে যেমন অভিজ্ঞতা কম তেমনি তাঁদের লেখনি অন্যদের উপর প্রভাব ফেলতে অপারগ। ফোরাম ঐসব বিজ্ঞ ব্যক্তিত্বদের লেখনিকে অগ্রাধিকার প্রদান করে যাঁরা আল্লাহ র রাস্তায় তাঁদের জীবন ও সম্পদ বাজি রেখেছেন অকাতরে। এসব অগ্রাধিকার লেখকদের সাহিত্য ভান্ডারের একটি তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে।
১২. মিডল পাথ: মিডল পথ বিষয়টি অনেক সময় মানুষকে দ্বিধায় ফেলে কারন ইসলাম ধর্মটাই হচ্ছে একটা মিডল পাথ। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে ফোরাম মধ্যম পন্থা অবলম্বন বেছে নিয়েছে যা হবে বিবাদ বহির্ভুত এবং বহু কালচার ও বহু ধর্মীয় সমাজে বসবাসে উপযোগী। সুতরাং কথা ও কাজে, সহনশীলতা প্রদর্শনে ও অন্যদের সাথে আলোচনার ক্ষেত্রে ইসলামের পরমত সহিষ্নুর মূল সৌন্দর্য্যকে উপহার দেয়া ও সুন্দর কমিউনিটি সম্পর্ক সৃষ্টি করা ফোরামের সাথে সম্পৃক্ত সকলের দায়িত্ব।
১৩. রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা: ইসলাম মানুষের জীবনকে তথাকথিত ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ভাগে দ্বিখন্ডন গ্রহন করেনা। রাজনীতির মত শিক্ষার জন্য অর্থনীতি ও সোসিয়েল ওয়েলফেয়ারসহ ইত্যাদি বিষয়গুলো আমাদেরকে আলোচনা করতে হবে । তবে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক জীবন একটা মৌলিক দিক ও বিভাগ। বিষয়টি অত্যন্ত জটিল হওয়ায় অনেক সময় সাধারন মানুষ দ’ুটো বিষয়ের পার্থক্যতা নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ে যায়। সুতরাং আইএফই’র লক্ষ্য হচ্ছে যে বিষয়টিকে যখন প্রয়োজন (জরুরিয়াত) তখন ভিত্তিতে এবং মুসলিম কমিউনিটির কল্যানকে (মাছলাহা) সামনে রেখে সমাধানের উদ্যোগ নেয়া।
১৪. জেন্ডার সম্পর্কিত বিষয়াবলী: আমরা এমন এক সমাজে বাস করছি যেখানে জীব হিসেবে পুরুষ ও মহিলাদেরকে সত্যিকার অর্থে পার্থ্যক্য করা হয়না। আমরা এই সমাজে পুরুষের ও মহিলাদের সাথে তাই কাজ করি ও বাস করি একইভাবে। একারনে অনেকেই হয়ত চিন্তা করে যে ফোরামও সংগঠনের আভ্যন্তরীন পরিবেশে সম্ভবত অনুরুপ করে থাকে। এটি একটি ভ্রান্ত ধারনা। ফোরাম মনে করে যে তার জনশক্তির দায়িত্ব হচ্ছে সমাজে ধর্মীয় হায়া অনুশাসন ফিরিয়ে আনা ও আমাদের পরিবেশে তা কায়েম করা। এটিই মানবীয় সমাজের প্রাকৃতিক নিয়ম যা প্রকৃত অর্থে পাশ্চাত্যে আধুনিকতার নামে হনন করা হয়েছে। পারিবারিক পরিবেশে শরীয়াহকে পুরোপুরি প্রতিষ্ঠা করা ও মেনে চলা ফোরামের অংগীকার। প্রয়োজনের (জরুরিয়াতের) তাগিদে সমঝোতা করা যেতে পারে তবে তা শুধু বাইরের পরিবেশে মাত্র।
১৫. ঐক্য : ইউরোপের সকল জাগ্রত মুসলমান এর লক্ষ্য যে আমরা যেন সকল মুসলমান ঐক্যবদ্ধ হয়ে দ্বীনের কাজ করতে পারি। এম সি এ ইউরোপে শক্তিশালী মুসলিম কমুনিটি গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছে।
মৌলিক আক্বীদা: এম সি এর মৌলিক আক্বীদা এই সংগঠনের সংবিধানে বর্ণিত আছে। আর তা হচ্ছে কালিমা তাইয়েবা ঃ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ “আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই, হযরত মুহাম্মদ (সা) তাঁর বান্দা ও রাসূল”। কালেমা তাইয়্যেবা ইসলামের মূল ঘোষণা। এই কালেমার স্বীকৃতি ছাড়া কোন মানুষই ইসলামের সীমার মধ্যে প্রবেশ করতে পারেনা। বীজ বপন না করলে যেমনি গাছ হয়না তেমনিভাবে এই কালেমার মর্মকথা ভালভাবে উপলবিদ্ধ করতে না পারলে মানুষের জীবন ক্ষেত্রে ইসলামের গাছ জন্মাতে পারেনা। বীজ খারাপ হলে যেমন গাছ অংকুরিত হয়না তেমনি এই কালেমা ভালভাবে না বুঝে কবুল করলে বা এই কালেমার ভুল অর্থ গ্রহণ করলে ইসলামের হুকুম সঠিকভাবে পালণ করা সম্ভব হয়না।
কালেমার দুইটি অংশ। প্রথম অংশ “লা ইলাহা ইল্লাহ” এবং দ্বিতীয় অংশ “মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ”। প্রথম অংশের অর্থ আল্লাহ ছাড়া কেউ মাবুদ নাই যার গোলামী করা যায়, তিনি সারা জাহানের ও আমাদের মলিক এবং জীবনের সকল ক্ষেত্রে তাঁরই আইন মানতে হবে; আনুগত্য করতে হবে। আর দ্বিতীয় অংশের অর্থ মুহাম্মদ রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম আল্লাহর রাসূল। আল্লাহ তাঁকে সর্বশেষ নবী ও রাসূল হিসাবে সমগ্র সৃষ্টিজগতের রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছেন। তিনি ইসলামের প্রচার ও মানবজাতির পথ প্রদর্শকরূপে আবির্ভুত হয়েছেন। মূলত উপরিউক্ত আহবানই তাওহীদের মূল কথা। তাওহীদ বা আল্লাহর একত্বের এই আহবান নতুন নয়; দুনিয়াতে যত নবী ও রাসূল এসেছেন প্রত্যেকে নিক নিজ উম্মতকে এক আল্লাহর স্বীকৃতি তথা বিশুদ্ধ তাওহীদের প্রতিই আহবান জানিয়েছেন। তাঁদের সকলের আহবানের মূল কথা কুরআনে এভাবে এসেছে:
وَإِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ لاَّ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ
“তোমাদের ইলাহ একই ইলাহ। ঐ রাহমান ও রাহীম ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই” (বাকারা : ১৬৩)। একমাত্র আলাহর ইবাদত ও দাসত্বই যে সকল নবী রাসূলের দাওয়াতের মূল লক্ষ্য ছিল এই কথার দিকে ইংগিত দিয়ে আল্লাহ বলেন:
وَمَا أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ مِن رَّسُولٍ إِلَّا نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدُونِ
“হে নবী! আমি আপনার আগে যে রাসূলই পাঠিয়েছি তাকেও এই আদেশই করেছি যে, আমি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। সুতরাং তোমরা শুধু আমারই দাসত্ব করো” (আম্বিয়া : ২৫(। এই আয়াত থেকে একথা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, সকল নবী ও রাসূল এক আলাহর দাসত্বের প্রতি আহবান নিয়ে দুনিয়াতে আগমন করেছেন এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উপাসনা ও আনুগত্য করা থেকে বিরত থাকার অহবান জানিয়েছেন।
আলাহর পক্ষ থেকে কিতাব প্রাপ্ত সব নবী ও রাসুলের অধহবানের মূল কথা একই। এই প্রসংগে আলাহ তায়ালা বলেন,
قُلْ يَا أَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْاْ إِلَى كَلَمَةٍ سَوَاء بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ أَلاَّ نَعْبُدَ إِلاَّ اللّهَ وَلاَ نُشْرِكَ بِهِ شَيْئًا وَلاَ يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضاً أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللّهِ فَإِن تَوَلَّوْاْ فَقُولُواْ اشْهَدُواْ بِأَنَّا مُسْلِمُونَ
“হে নবী! আপনি বলুন: হে আহলে কিতাব! এমন একটি কথার দিকে আসো, যা তোমাদের ও আমাদের মধ্যে একই রকম। তা এই যে, আমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারো দাসত্ব করবো না, তার সাথে আর কাউকে শরীক করবো না এবং আমাদের মধ্যে কেউ যেন আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে নিজেরদের রব না বানায়। যদি তারা এ দাওয়াত কবুল করা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে স্পষ্ট বলে দিন- তোমরা সাক্ষী থাকো, আমরা তো মুসলিমই আছি (শুধু আল্লাহর দাসত্ব ও আনুগত্য করছি)” (আলে ইমরান: ৬৪)।
কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় একথা বারবার উচ্চারিত হয়েছে যে,
فَتَعَالَى اللَّهُ الْمَلِكُ الْحَقُّ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيمِ (১১৬)
“আল্লাহই মহান এবং আসল বাদশাহ। তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। তিনিই মহান আরশের রব।” (মুমীনূন: ১১৬)। আলোচনা থেকে এই কথা সকলের কাছে পরিষ্কার যে আমাদের ইবাদত বন্দেগী কবুল হওয়ার জন্য আলাহর প্রতি সঠিক ও বিশুদ্ধ ঈমান পোষণ করা দরকার। কুফর ও শিরক মিশ্রিত ঈমান নেক আমল বরবাদ করে দেয়। অজু ছাড়া যেমন নামায শুদ্ধ হয়না তেমনি বিশুদ্ধ ঈমান ছাড়া আমল গ্রহণযোগ্য হয়না। এই প্রসঙ্গে আলাহ বলেন,
َلَقَدْ أُوحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ – بَلِ اللَّهَ فَاعْبُدْ وَكُن مِّنْ الشَّاكِرِينَ
“এ কথা তাদেরকে আপনার সাফ সাফ বলে দেওয়াই দরকার। কারণ আপনার কাছেও আপনার আগে যারা গত হয়ে গেছেন তাদের কাছেও ওহী পাঠানো হয়েছে যে, যদি তুমি শিরক করো তাহলে তোমরা সকল আমল বরবাদ হয়ে যাবে এবং তোমরা ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে শামিল হবে। সুতরাং (হে নবী!) আপনি শুধু আল্লাহরেই দাসত্ব করুন এবং শোকরকারী বান্দাহদের মধ্যে হয়ে যান।” (যুমার: ৬৫-৬৬)।
লেমা তাইয়্যেবায় ঘোষিত বিশ্বাসের সার কথা হচ্ছে:
১.আল্লাহ ছাড়া আর কাহাকেও সাহায্যকারী, পৃষ্ঠপোষক, কার্য-সম্পাদনকারী, প্রয়োজন পূরণকারী, বিপদ দূরকারী, ফরিয়াদ শ্রবণকারী ও গ্রহণকারী, বিপদ হতে উদ্ধারকারী ও মুক্তিদাতা বলে স্বীকার ও বিশ্বাস না করা।
২. আল্লাহ ছাড়া কেউ ক্ষতি- উপকার করতে পারে বলে মনে না করা এবং সকল ব্যাপারে একমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা করা।
৩. আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে দোয়া ও সাহায্যের প্রার্থনা না করা
৪. আল্লাহছাড়া অন্য কারো ইবাদত বন্দেগী না করা এবং কারো নামে মান্নত না করা।
৫.আল্লাহ ছাড়া অন্য কাহাকেও সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী বলে স্বীকার না করা।
৬. আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো দাস হয়ে না থাকা এবং নিজের নফসের খাহেস অন্ধভাবে অনুসরণ না করা।
৭. জীবনের প্রত্যেক কাজের জবাবদিহী একমাত্র আলাহর কাছে করতে হবে এই বিশ্বাস মনে রেখে যে কাজে আল্লাহ খুশী হন তা করা এবং যে কাজে অসন্তুষ্ট হন তা থেকে বিরত থাকা।
মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ কালেমার এই শেষ অংশ স্বীকার করার অর্থ হচ্ছে :
১. হযরত মুহাম্মদ সালালাহু আলাইহি ওয়াসালামহর সর্বশেষ নবী ও রাসূল বলে মনে প্রাণে মেনে নেয়া। তাঁর পর আর কোন নবী আসতে পারে বলে বিশ্বাস করা মারাত্মক কুফরী। আল্লাহর রাসূল শেষ নবী ও আল-কুরআন শেষ কিতাব। কুরআনের শিক্ষা কিয়ামত পর্যন্ত জারী থাকবে।
২. রাসূলে কারীম (সা) সমগ্র সৃষ্টি জগতের জন্য রহমত। তিনি শুধু মুসলমানদের জন্য আশীর্বাদ নন; গোটা মানব সমাজ ও সৃষ্টি জগতের জন্য আশীর্বাদ।
৩. আল্লাহর রাসূল ছাড়া অন্য কাউকে নির্ভুল মনে না করা; কেননা যার উপর অহী নাযিল হয়না সে নির্ভূল হতে পারেননা।
৪. আলাহর রাসূলের মাধ্যমে যে জীবন বিধান ও হিদায়েত আল্লাহর তরফ হতে এসেছে এট সত্য এবং শাশ্বত বলে মেনে নেয়া এবং তাঁর ফায়সালা, নির্দেশ শিক্ষা ও উপদেশ বুঝে না আসলেও অন্ধভাবে মেনে নেয়া।
৫. একমাত্র আল্লাহর রাসূলকেই অনুকরণযোগ্য শ্রেষ্ঠ আদর্শ মেনে নেয়া এবং তাঁর উপস্থাপতি আদর্শ ও প্রদত্ত শিক্ষার বিরোধী সবই ভুল ও পরিত্যাজ্য।
৬. আল্লাহর মহব্বত, নৈকট্য ও সন্তুষ্টিলাভের জন্য রাসূলে কারীম সাহাবায়ে কেরামকে যেসব তরীকা শিক্ষা তিয়েছেন একমাত্র তাই অনুসরণ করা। এছাড়া ভিন্ন কোন তরীকা অনুসরন না করা।
৭. রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পুরো জীবন আমাদের জন্য মডেল। মানব জীবনের প্রতিটি দিক ও বিভাগে আআল্লাহর রাসূলের আদর্শ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ন্যায় ও ইনসাফ পূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব বলে বিশ্বাস করা এবং রাসূলের জীবন চরিতকে কুরআনের বাস্তব ব্যাখ্যা এবং উহাকেই সকল ব্যাপাওে সত্যেও মাপকাঠি হিসাবে মেনে নেয়া।