করোনার মতোই বন্যা মোকাবেলায়ও ‘সরকার উদাসীন ও নিষ্ক্রিয়’ বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল সোমবার দুপুরে উত্তরায় নিজের বাসা থেকে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করে বলেন, করোনা মোকাবিলায় যেমন সরকার একেবারেই ব্যর্থ, চরম উদাসীনতা, অবহেলা ও দুর্নীতির কারণে গোটা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। ঠিক তেমনি বন্যার বিষয়েও সরকারের নীরবতা, নিষ্ক্রিয়তা মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত করছে। আমরা অনির্বাচিত সরকারের এই অবহেলা উদাসীনতা এবং নিষ্ক্রিয়তার নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে বন্যায় প্রয়োজনীয় ত্রাণের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীসহ দেশবাসীকে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বানও জানান বিএনপি মহাসচিব। ভার্চুয়াল এই সংবাদ সম্মেলনে দলের গঠিত জাতীয় ত্রাণ কমিটির আহ্বায়ক ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুও যুক্ত ছিলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি সবসময় যেকোনো দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ায়-সর্বশেষ করোনা দুর্যোগে পাশে দাঁড়িয়েছে বিএনপি। বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে আহ্বায়ক করে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে যা অবিলম্বে কাজ শুরু করবে। তিনি জানান, কমিটির সদস্যদের মধ্যে দলের ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক, সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক, ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সম্পাদক, স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক, সহদফতর সম্পাদক, সহপ্রচার সম্পাদক, নির্বাহী কমিটির একাধিক সম্পাদক ও সদস্য এবং সংশ্লিষ্ট বন্যাকবলিত জেলার স্থানীয় নেতারা।
সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, একজন মন্ত্রী তো বলেই ফেললেন ‘বন্যার বিষয়ে এতটুকু চিন্তিত নই’। ভালো কথা। তবে কেন প্রতিদিন গণমাধ্যমে আসছে, বন্যার্ত মানুষের আহজারি ও তাদের অসহায়ত্বের কথা, সহায় সম্বল হারিয়ে সড়কে অথবা বাঁধের ওপরে আশ্রয় নেয়ার কথা। শিশু সন্তান, বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে নিয়ে মানুষ খোলা আকাশের নিচে অভুক্ত থাকছেÑ এই বিষয়গুলো সরকার চিন্তাও করে না। কারণ তারাতো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। জনগণের কাছে তাদের জবাবদিহিতা করতে হয় না। বরঞ্চ করোনা-বন্যা এসব দুর্যোগ এলে তারা খুশি হয় কারণ এর ফলে দুর্নীতির নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়।
বাংলাদেশে বন্যার জন্য ভারতীয় বাঁধ খুলে দেয়াকে দায়ী করে মির্জা ফখরুল বলেন, ভারতের অভিন্ন নদীগুলোর সব বাঁধ ব্যারাজের গেট খুলে দেয়ায় উজান থেকে নেমে আসা বন্যার পানি বাংলাদেশের ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, মেঘনা, মহানন্দা, পদ্মা, তিস্তা ও ধরলা নদীর অবাহিকায় প্রায় ২৪টি জেলা ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়ে গেছে। কয়েকটি জেলায় এক মাসের মধ্যে দুই-তিনবার বন্যার পানি উজান থেকে এসে ঘর-বাড়ি, ফসলের ক্ষেত ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। ভারতের সাথে যে অভিন্ন নদী প্রায় ১৫৪টি, একমাত্র পদ্মার ফারাক্কা বাঁধ ব্যতীত কোনোটারই কোনো পানি বণ্টন চুক্তি ভারতের অনীহার কারণে সম্পন্ন হয়নি। তিস্তার চুক্তির কথা ফলাও করে এই সরকার প্রচার করলেও গত এক দশকে কোনো চুক্তি করতে সক্ষম হয়নি। এই সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে প্রায় প্রতি বছর বাংলাদেশের নদী অববাহিকায় বসবাসকারী মানুষেরা এই বন্যায় আক্রান্ত হয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে। ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশন প্রায় নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে।
বন্যাকবলিত এলাকায় সরকার ত্রাণ দিচ্ছে, তার পরও কেন উদাসীনতার অভিযোগ করছেন প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখন পর্যন্ত বন্যার জন্য কী পরিমাণ ত্রাণ সরকার দিয়েছে তা দেশবাসী জানেই না। এই ধরনের কোনো রিপোর্ট আমরা পাইনি যে, বন্যার জন্য কোথাও ত্রাণ দেয়া হয়েছে। যেমন আমরা জানি, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট জেলায় প্রথম দিকে কিছু সাহায্য দেয়া হয়েছে। তা তো আমরা মিডিয়াগুলোতে দেখতে পারছি। এ জন্যই তো মিডিয়াতে মানুষ বলছে, তারা কেউ ত্রাণ পাচ্ছে না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই সরকার যতবারই ত্রাণ নিয়ে গেছে, সেখানেই চুরি হয়েছে। করোনার ব্যাপারে ত্রাণ বিতরণ করছিল সরকার সেখানে কী ধরনের চুরি হয়েছে তা সবারই জানা। কোনো কিছুই তারা বাদ রাখেনি, চাল, সয়াবিন তেল থেকে শুরু করে সবই চুরি করেছে। এখন বন্যার যে ত্রাণ অবিলম্বে শুরু করা দরকার তার কোনো কার্যক্রমই আমরা দেখতে পারছি না। এখন সব শক্তিকে এক করে ত্রাণের ব্যবস্থা করতে হবে, খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
এই অবস্থা থেকে উত্তরণে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নাই উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, জনগণের সরকার না থাকলে, জনগণের প্রতিনিধি না থাকলে, জনগণের পার্লামেন্ট না থাকে তাহলে মানুষের সমস্যার সমাধান হতে পারে না। এই অনির্বাচিত সরকারের দ্বারা কখনোই জনগণের সমস্যা সমাধান সম্ভব হবে না। তারা শুধু মেগা প্রজেক্ট নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। তারা তাদের নিজেদের পকেট ভারী করার কাজই করবে।
