‘সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক হয়েও তিনি পাননি নিজের প্রতিষ্ঠানের আইসিইউ, পাননি সরকারের অ্যাম্বুলেন্স’ করোনাভাইরাস সঙ্কটে জনগণকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে নিজেই আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. মঈন উদ্দিন।
গত গত ৫ এপ্রিল তার শরীরে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর থেকে তিনি নিজের বাসায় কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। গত ৭ এপ্রিল রাতে অস্বাভাবিক শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়ায় তাকে সিলেট সদর হাসপাতালের করোনা সেন্টারে আইসোলেশনে নেওয়া হয়। পরদিন আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সে করে নেওয়া হয় রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে।
কুর্মিটোলায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার (১৫ এপ্রিল) ভোরে তিনি মারা যান। এদিকে, সিনিয়র এই চিকিৎসক নিজ কর্মস্থলসহ সিলেটে চিকিৎসা না পাওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডা. মঈনের এক ছাত্রের বক্তব্য, “অক্সিজেনসহ স্যারের স্যাচুরেশন থাকে ৯০%। কিন্তু, অক্সিজেন ছাড়া ৮০%। এটা একটা খারাপ সাইন।
ভেন্টিলেটর সাপোর্টের পূর্ব লক্ষণ। শামসুদ্দিনে ভেন্টিলেটর আছে। কিন্তু, মেইনটেইনেন্সের টিম (ডাক্তার, নার্স) নেই। যা ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আছে। ওসমানীর ডাক্তারদের একাংশ স্যারকে সেখানে শিফট করতে চেয়েছিলেন। ওসমানীর এক ৪টি ভেন্টিলেটর আছে। কিন্তু, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বললে তা নাকচ করে দেন ওসমানীর পরিচালক।”
অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, “এমতাবস্থায় মঈন স্যার ঢাকায় যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, এমন আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় যাওয়াটা কঠিন হয়ে পড়ে। কোনো এয়ার অ্যাম্বুলেন্স করোনা রোগী নেবে না। বিমান বাহিনীর একটি অ্যাম্বুলেন্স আছে, সেটি ব্যবহার করতে হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সুপারিশ লাগে। এমতাবস্থায় মহাপরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সুপারিশ করতে অপরাগতার কথা জানান।”
“সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক হয়েও তিনি পাননি নিজের প্রতিষ্ঠানের আইসিইউ, পাননি সরকারের অ্যাম্বুলেন্সও।”এদিকে, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেটে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে ১২০ বেডের আইসোলেশন সেন্টার খোলা হয়েছে। গত ৪ মার্চ থেকে চালু হয়েছে এ আইসোলেশন সেন্টারের কার্যক্রম।
এর বাইরে শাহী ঈদগাহ সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল এবং খাদিমনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে করোনা চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলেও জানানো হয় মাসখানেক আগে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শামসুদ্দিন হাসপাতালে দুটি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) বেড কয়েকদিন আগে প্রস্তুত করা হয়। তবে হাসপাতালের মধ্যে সন্দেহজনক রোগীদেরকে যে কক্ষে রাখা হয় (আইসোলেশন ইউনিট) তা যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না।
এখানে ভেন্টিলেন্টর থাকলেও সেন্ট্রাল অক্সিজেন, সেন্ট্রাল এয়ারকুলারসহ কিছু সুবিধার ঘাটতি রয়েছে। আইসিইউ’র শর্ত পূরণের জন্যে এসব সুবিধা অত্যন্ত প্রয়োজন। এছাড়া আইসিইউ পরিচালনার জন্যে শামসুদ্দিন হাসপাতালে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালনের মতো লোকবল নেই। বিষয়টি জেনেই করোনাভাইরাস আক্রান্ত চিকিৎসক মঈন উদ্দিনকে ওসমানী হাসপাতালের আইসিইউতে স্থানান্তরের প্রস্তাব দিয়েছিলেন কয়েকজন চিকিৎসক।
এ প্রসঙ্গে ওসমানী হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইউনুছুর রহমান বলেন, “ওসমানীর সবক’টি আইসিইউ বেড রোগীতে পরিপূর্ণ। পাশাপাশি হাসপাতালে প্রতিদিন সহস্রাধিক রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এমন বাস্তবতায় ওই চিকিৎসককে সেখানে স্থানান্তর করা যায়নি।” ওসমানী হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, “ওই চিকিৎসকের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কিংবা আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সযোগে তাকে ঢাকায় স্থানান্তরের আবেদন জানায় তার পরিবার।
কিন্তু ওসমানী থেকে তাকে কোনো সহায়তা দেওয়া হয়নি।”কিন্তু এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ওসমানী হাসপাতালের পরিচালক বলেন, “হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সযোগে তাকে ঢাকায় পাঠাতে চেয়েছিলাম আমরা। কিন্তু, আইসিইউ সুবিধা না থাকায় বেসরকারি ওয়েসিস হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকায় পাঠানো হয়।” ইউনুছুর রহমানের দাবি, তারা ডা. মঈনকে সিলেটে রেখেই চিকিৎসা দিতে চেয়েছিলেন। পরিবারের সিদ্ধান্তেই তাকে ঢাকায় নেওয়া হয়।বাংলা ট্রিবিউন এর সৌজন্যে।