গত ৭ এপ্রিল ঢাকার মিরপুর থেকে গ্রেফতার করা হয় আবদুল মাজেদকে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে শনিবার মধ্যরাত ১২টা ০১ মিনিটে কার্যকর হয় তার মৃত্যুদণ্ড। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত এই খুনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতার পার্ক স্ট্রিটের বেডফোর্ড লেনে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতো।
বেশ কিছু দিন ধরেই শরীর খারাপ যাচ্ছিল তার। ৭২ বছর বয়সী মাজেদ জানুয়ারির শেষের দিকে কলকাতার পিজি হাসপাতালে শরীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করায়। গত ২২ ফেব্রুয়ারি পিজি হাসপাতাল থেকে রিপোর্ট আনার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হলেও আর সেখানে ফেরেনি মাজেদ। ওইদিন সকাল ১০টা ৪ মিনিটে বেডফোর্ড লেনের বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর আব্দুল মাজেদের যাত্রাপথের একাংশের সিসিটিভি ফুটেজ হাতে পায় কলকাতা পুলিশ।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, ২২ ফেব্রুয়ারি সকালে ভাড়া বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর একটি ওষুধের দোকানে গিয়েছিল মাজেদ। সেখানে আট মিনিটের মতো কাটানোর পর ঠিক ১০টা ১২ মিনিটে রিপন স্ট্রিটের দিকে যেতে থাকে। আর তখন থেকেই তাকে অনুসরণ করতে শুরু করে দুই ব্যক্তি। স্বাস্থ্যবান, কালো দাড়ি ও ব্যাকব্রাশ করা চুলের ওই দুই তরুণের মধ্যে একজনের পরনে ডেনিম জিন্স ও নীল ফুলহাতা টি-শার্ট। অন্যজনের গায়ে বড় চেক শার্ট। দু`জনের হাতে ছিল মোবাইল ফোন।
পরে তাদের সঙ্গে আরও দু`জন যোগ দেন। মোট চারজন সেদিন মাজেদকে অনুসরণ করছিল। সিসিটিভি`র ফুটেজ থেকে সবার ছবিই পাওয়া গেছে। তদন্তে নেমে পুলিশ ও এসটিএফ-এর কর্মকর্তারা পিছু নেওয়া ওই যুবকদের কাবুলিওয়ালা ভেবে প্রথমে ভুল করেছিল। কারণ মাজেদ ছোটখাট সুদের ব্যবসা করতো।
এরপরের ফুটেজে দেখা যায়, ওই চারজন মাজেদের সঙ্গে কথা বলছে। তবে কী কথা হয়েছিল, তা জানা যায়নি। কথা চলমান থাকা অবস্থাতেই মৌলালির দিক থেকে আসা সল্টলেক-সাঁতরাগাছি রুটের একটি বাসে উঠতে দেখা যায় মাজেদকে। ওই চারজনও একই বাসে ওঠে। এরপর আর ফুটেজে তাদের শনাক্ত করা যায়নি।
কলকাতা পুলিশ তদন্তে নেমে এজেসি বোস রোডের প্রতিটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখেছে। তবে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের বাস স্টপ থেকে পিজি হাসপাতাল পর্যন্ত কোথাও বাস থেকে নামতে দেখা যায়নি মাজেদকে। ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক সূত্র বর্তমান পত্রিকাকে জানিয়েছে, মাজেদের মোবাইলের সর্বশেষ টাওয়ার লোকেশন ছিল মালদহ। যা থেকে গোয়েন্দাদের অনুমান, তাকে ঘুরপথে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল হাওড়া স্টেশনে। সেখান থেকে ট্রেনে প্রথমে গুয়াহাটি। পরে শিলং হয়ে ডাওকি সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ।
ধারণা করা হচ্ছে, ট্রেন মালদহ স্টেশনের আশপাশে থাকাকালে মাজেদ একবার সেলফোনটি চালু করেছিল।