প্রতিবেশী দরিদ্রদের জন্য ত্রাণ সহায়তা চাইতে ৩৩৩ নম্বরে কল করায় এক কৃষককে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মারধরের ঘটনায় নাটোরের লালপুর থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। ভুক্তভোগী অর্জুনপুর-বরমহাটি (এবি) ইউনিয়নের আঙ্গারিপাড়া গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে বুধবার (১৫ এপ্রিল) সকালে মামলাটি দায়ের করেন।
লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম রেজা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মামলায় আসামি করা হয়েছে– চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার, স্থানীয় ইউপি সদস্য রেজাউল করিম রেজা এবং ইউপির তথ্যসেবা কেন্দ্রের দায়িত্বরত রুবেলকে। এদিকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ থেকেও অভিযোগটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগী শহিদুল মামলার অভিযোগে উল্লেখ করেন, মারপিটের সময় চেয়ারম্যান তাকে বলেছিলেন, ‘তোকে ৩৩৩-এ কল দেওয়ার সাধ মিটিয়ে দেবো।’ মামলার আইও (ওসি, তদন্ত) মনোয়ারুজ্জামান জানান, বুধবার সকালে শহিদুলের দেওয়া অভিযোগটির ভিত্তিতে মামলা রেকর্ড করা হয়। তদন্তসাপেক্ষে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন ঝুলফু ও সাধারণ সম্পাদক ইসাহাক আলী জানান, বুধবার সকালে রাজশাহী বিভাগীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামালের পিএস এমরান ফোন করেছিলেন। এসএম কামালের নির্দেশে তিনি ঘটনার খোঁজ নিয়েছেন।
পরে এ বিষয়ে কামাল কথা বলবেন জানান তিনি। কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী স্থানীয় আওয়ামী লীগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে জানান তারা। তারা দাবি করেন, শহিদুলের পরিবারের অনেকেই সরকারি বিভিন্ন ভাতা পান। বিষয়টি চেয়ারম্যানকে না জানিয়ে ৩৩৩ নম্বরে কল করায় ক্ষুব্ধ হয়েই চেয়ারম্যান এমন কাজ করেছেন।
তবে কাজটি ঠিক হয়নি।ভুক্তভোগী শহিদুল, তার ছেলে শাহিন ও স্থানীয়দের দাবি, শহিদুলকে ইউপি ভবনের একটি কক্ষে দরজা বন্ধ করে নির্দয়ভাবে পেটানো হয়েছে। তাদের এখন মীমাংসার জন্য বিভিন্নভাবে খবর দেওয়া হচ্ছে। নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে তারা শঙ্কিত ও চিন্তিত। তারা আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
উল্লেখ্য, আঙ্গারীপাড়া এলাকার ২০০-২৫০ দরিদ্র মানুষ ২০-২৫ দিন থেকে কর্মহীন। শহিদুলের নিজেরও কর্ম নেই। এ অবস্থায় প্রতিবেশীদের জন্য খাদ্য সাহায্যের জন্য শনিবার বিকালে ভুক্তভোগী শহিদুল ৩৩৩ নম্বরে ফোন দেন। রবিবার দুপুরে নামাজ শেষে বাড়ি এলে চৌকিদার তাকে বলেন ইউনিয়ন পরিষদে ইউএনও এসেছে। আপনার সঙ্গে তিনি কথা বলবেন। কিন্তু সেখানে পৌঁছে দেখেন ইউএনও নেই।
তখন কোনও কথা বলার সুযোগ না দিয়ে চৌকিদারের লাঠি নিয়ে চেয়ারম্যান শহিদুলকে বেদম মারপিট করে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। শহিদুল জানান, দেহের বিভিন্ন স্থানে অনেক জখম নিয়ে তিনি বাড়ি ফেরার সময় চেয়ারম্যান তাকে বলেন, ‘৩৩৩ নম্বরে কেন ফোন দিয়েছিস, এজন্যই এই শাস্তি। একথা কাউকে বললে তোর অবস্থা আরও খারাপ করে দেবো।’ বাড়ি আসার পর এলাকাবাসী তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা করান। এরপর ইউএনওকে জানালে রবিবার সরেজমিনে এসে তিন দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন ইউএনও।