রাজধানীর দক্ষিণখানে একই পরিবারের স্ত্রী, শিশুপুত্র ও শিশু কন্যাসহ তিনজনকে হত্যার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত রকিব উদ্দিন আহম্মেদ ওরফে লিটনতে (৪৬) গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেফতার হওয়া রকিব নিহত নারীর স্বামী এবং শিশুদের বাবা। তিনি বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেডে (বিটিসিএল) কনিষ্ঠ সহকারী ব্যবস্থাপক হিসেবে উত্তরায় কর্মরত। ডিবির উপকমিশনার (উত্তর) মশিউর রহমান জানান, মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সদর থানা এলাকা থেকে লিটনকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি জানান, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণখান থানার প্রেমবাগান এলাকার মনোয়ার হোসেনের ৮৩৮ নম্বর বাড়ীর চতুর্থ তলার দক্ষিণ পাশের ফ্ল্যাট থেকে পচা গন্ধ এলে দক্ষিণখান থানা পুলিশে খবর দেয়া হয়। থানা পুলিশ দরজা খুলে ভেতরে অর্ধগলিত একজন নারীসহ দুটি শিশুর লাশ পায়। এ ঘটনায় দক্ষিণখান থানা পুলিশসহ উত্তরা অপরাধ বিভাগের বিভিন্ন ঊধ্বর্তন পুলিশ কর্মকর্তা, পিবিআই, এসবি, র্যাব, সিআইডির ক্রাইমসিন বিভাগ ও ডিবি উত্তরের বিমানবন্দর জোনাল টিম চাঞ্চল্যকর ট্রিপল মার্ডার মামলাটির ছায়াতদন্ত শুরু করে। ঘটনাস্থল থেকে হত্যা সম্পর্কে একটি নোট পায় পুলিশ, যা নিয়ে শুরু হয় তদন্ত। বিমানবন্দর জোনাল টিম উদ্ধারকৃত নোটের লেখা পর্যালোচনা করে প্রাথমিকভাবে ধারণা করে, পলাতক রকিব উদ্দিন ওরফে লিটনই তাদের হত্যা করেছে।
তখন থেকেই তাকে ধরার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। অবশেষে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে মঙ্গলবার তাকে গ্রেফতার করে ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের বিমানবন্দর জোনাল টিম। গ্রেফতারকৃত রকিব উদ্দিন আহম্মেদ ওরফে লিটন ট্রিপল মার্ডার সম্পর্কে ডিবি পুলিশকে জানায়, সে নিজেই তার স্ত্রী, তার শিশু ছেলে এবং কন্যা সন্তানকে হত্যা করে পাগলের বেশ ধারণ করে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করেছিল। হত্যার কারণ সম্পর্কে রকিব বলে, স্ত্রী মুন্নী (৩৭), ছেলে ফারহান (১২) ও মেয়ে লাইবাকে (৩) নিয়ে ওই বাড়ির চতুর্থ তলার দক্ষিণ পাশের ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে বসবাস করতেন।
মাঝে মাঝে টুকটাক পারিবারিক বিষয় নিয়ে ঝামেলা হলেও সবাইকে নিয়ে সুখে শান্তিতে একত্রে বসবাস করছিলেন। তার নারী বা মাদক সেবনের কোনো বদ অভ্যাস ছিল না। অফিসের কলিগসহ অন্যান্য ব্যক্তির নিকট থেকে সুদের উপর বিভিন্ন সময়ে প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা ধার নিয়েছিলেন। অন লাইনে জুয়া খেলে এসব টাকা তিনি হারিয়ে ফেলেন। এদিকে পাওনাদাররা তাদের পাওনা টাকা আদায়ে তাকে চাপ দিতে থাকে। এ কারণে তিনি বাসায় স্ত্রী-সন্তানদের সাথে খারাপ আচরণ করতেন এবং গত ডিসেম্বর মাসে তিনি কিছু দিন আত্মগোপনে ছিলেন।
তখন তার পরিবার দক্ষিণখান থানায় জিডি করে। কিন্তু কিছু দিন পরে তিনি বাসায় ফিরে আসেন। পাওনাদারদের টাকার চাপে তিনি তার পরিবারের সদস্যদের সাথে বিভিন্ন সময় আলোচনা করলেও তার পরিবার এবং আত্মীয়-স্বজন তাকে তার জুয়া খেলার কারণে বিশ্বাস করত না। তখন পাওনাদারদের বিভিন্ন চাপের কারণে স্ত্রী মুন্নী ও তার ছেলে ফারহান তাকে বলে, ‘এভাবে বেঁচে থেকে লাভ কি? আমাদের কাউকে দিয়ে মেরে ফেল, এভাবে বেঁচে থাকতে ভালো লাগে না।’ পাওনাদারদের চাপ, আত্মীয়স্বজনদের অবিশ্বাস এবং স্ত্রী-সন্তানদের বিভিন্ন কথা তার অসহ্য লাগে তার কাছে। এর জের ধরে তিনি তাদের হত্যা করে পালিয়ে যান।