Breaking News

মসজিদ আছে, জুম্মা নেই, মহাপ্রলয় কি আসন্ন!

গত ২৫ বছরে এই প্রথম এমনটি ঘটলো। মসজিদ বন্ধ থাকায় পবিত্র জুম্মার নামাজ পড়া হলো না। করোনাভাইরাসে মানুষে মানুষে ‘ছোঁয়াছুঁয়ি’ বন্ধ। আমেরিকায় ১০ জনের বেশি মানুষের দলবদ্ধতা নিষিদ্ধ। পবিত্র মক্কা-মদীনাতেও বিশ্বখ্যাত মসজিদগুলো তালাবদ্ধ। পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য শহরসমূহে গিয়েছি। জুম্মার নামাজের জন্যে ঠিকই মসজিদ পেয়ে গেছি। নিউইয়র্কেও মন্দির-চার্চ-গীর্জার পাশাপাশি মসজিদের অভাব নেই। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা-সমীপে আনুষ্ঠানিক প্রার্থনার সুযোগও স্থগিত।

ঘরে বসেই নামাজ বা প্রার্থনার বিকল্প সুযোগ রয়েছে। তবে শুক্রবারের জুম্মার নামাজের বিষয়টি ভিন্নতর। এদিন ধর্মাবলম্বীদের একটি সামাজিক মিলন ঘটে। সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে পারস্পরিক আলোচনার সুযোগ থাকে। খুৎবা’য় ইমামসাহেব সাম্প্রতিক করণীয় বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন। ধর্মীয় আলোকে অবশ্য পালনীয় বিষয়গুলো গুরুত্ব পায়। অসুস্থ প্রতিবেশীদের নামোল্লেখ সাপেক্ষে দোয়া চাওয়া হয়। কেউ বিপদে থাকলে সাহায্যও প্রার্থনা করা হয়। মসজিদ-মাদ্রাসা-এতিমখানার সাহায্যগ্রহণও চলে। নিকটকালীন সময়ে মৃত্যুবরণকারী মুসলিমের জানাজাও হয়ে থাকে। ফলে জুম্মাপর্বকে কল্যাণ সমাবেশ বলেই প্রতীয়মান হয়।

পুত-পবিত্র-সমৃদ্ধ পোশাকে জুম্মা যেন ‘মিনি-ঈদ’! ২০২০-এর মার্চে সেই ‘মিনি-ঈদ’ বাতিল হলো। জুম্মা পড়তে না পারলে সারা-সপ্তাহটি হয় মন খারাপের। জুম্মালগ্নে অনেকের কল্যাণ-কামনায় বিশেষ নামাজ পড়ি। প্রয়াত, অসুস্থ বা বিপদাপন্ন নিকটজন এক্ষেত্রে গুরুত্ব পান। আধ্যাত্মিকতার এক আবহে সময়টি যেন স্বর্গতুল্য। মুসল্লি বৃদ্ধি পাওয়ায় অধিকাংশ মসজিদেই এখন একাধিক জামাত। প্রায় প্রতিমাসেই বয়ান দিতে তাবলিগ পার্টি আসে। নানা জাতি ও দেশের প্রতিনিধিত্বকারীদের শৃঙ্খলাবদ্ধ সমাগম। নিউইয়র্কের জুম্মা-সংস্কৃতিতে বিষয়টি বেশ জনপ্রিয়। অতিথিদের থাকা ও রান্নার বিষয়েও অধিকাংশ মসজিদ নির্ভরশীল।

আরেকটি বিষয় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। নিউইয়র্কের অধিকাংশ বাংলা সংবাদপত্র শুক্রবারে বের হয়। যেমন ‘আজকাল, প্রথম-আলো, প্রবাস, বাংলাদেশ প্রতিদিন, নবযুগ’। ‘দেশবাংলা, বাংলাটাইমস, বর্ণমালা, শিকড়’ও মসজিদে সহজলভ্য। সেগুলো বিনামূল্যে একযোগে সংগ্রহের সুযোগ্য দিন জুম্মাবার। বিক্রির জন্যে নয়– বিধায় দোকানসমূহে এগুলো মেলে না। প্রাচীন সাপ্তাহিকী ‘ঠিকানা’ কেবল গ্রোসারি শপে থাকে। অন্যবারে ‘বাঙালী, পরিচয়, বাংলাপত্রিকা, জন্মভূমি, দেশবার্তা’ প্রকাশ পায়। মসজিদে হ্যান্ডবিল-কার্ডে কমিউনিটি-প্রধান প্রচারণা-প্রাপ্তিও সহজতর। নিউইয়র্কের পাঁচটি বোরোতে শতাধিক মসজিদ সক্রিয়।

বাবা-মায়ের উপদেশে স্কুলজীবন থেকেই নামাজে আগ্রহী। মাঝে রাজধানী ঢাকার তারুণ্যে তা অনিয়মিত। ১৯৯৪-এ আমি কন্যাসন্তানের জনক হই। ভাবলাম, এই সুবিশাল বিশ্বসংসারে কে কাকে পাহারা দেবে। পৃথিবীর নির্মমতা ও পৈশাচিকতায় নারীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। নিয়তিকে নিয়ন্ত্রণে আমি মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি নিবেদিত হই। সুপ্রিয় কন্যার কল্যাণচিন্তায় প্রতিদিন পাঁচ-ওয়াক্ত নামাজ। জুম্মাসহ এক ওয়াক্ত নামাজও আজতক বকেয়া রাখিনি। ২০০৩-এ উপহার পেলাম টগবগে পুত্রসন্তান। অতঃপর সপরিবারে প্রবাসিত জীবনের পরিমণ্ডল। আমার প্রগতিপ্রধান সাহিত্য-সংস্কৃতির জীবনে প্রার্থনাও সমান্তরালে চলমান।

২০২০-এর ফেব্রুয়ারি-মার্চে মহান সৃষ্টিজগতে নতুন ঘোর। নব-উদ্ভাসিত ‘করোনা’ জীবাণুর বিশ্বব্যাপী ক্রান্তিঢেউ। মৃত্যুর মহা-মাতমে সারা পৃথিবীই অচলাতয়নসম। আমি একাধিক কবিতায় মহাপ্রলয় নিকবর্তী বলে লিখেছি। স্টিফেন হকিংস বলে গেছেন ৬০০ বছরের কথা। আমার কবিতায় মন্তব্য করেছিলেন জাহিদুল হক। তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত ঋদ্ধ কবি। ‘আমার এ দু’টি চোখ পাথরতো নয়..’ গানের গীতিকার। জোর দিয়ে বলেছেন–এ-পৃথিবী দেড়শো থেকে দুশো বছর!

এবার বন্ধ মসজিদে আনুষ্ঠানিক প্রার্থনা রহিত হলো। করোনা’কাণ্ডে দুজন বাঙালি মুসলমান নিহত হলেন। জানাজা পড়ানোর জন্যে মসজিদে আনানো যায়নি লাশ। শুধু মুসলিম নয়, সকল ধর্মশালাতেই তালা-চাবি। অর্থাৎ মহামহিম আর আনুষ্ঠানিক আরজ শুনতে আগ্রহী নন। সৃষ্ট মানবজাতিকে কি তিনি মহা-মুক্তি দিতে আগ্রহী! মহাপ্রলয় আসবার আগে কি সম্মিলিত মহাক্রন্দন আর হবে না? পৃথিবী সৃষ্টির কারণ ও যৌক্তিকতা কি ফুরিয়ে যাচ্ছে!

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

Check Also

Police arrests Jamalpur district Ameer and 13 other party activists; Acting Secretary General of BJI condemns

Acting Secretary General of Bangladesh Jamaat-e-Islami Maulana ATM Masum has issued the following statement on …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *