বিশ্বব্যাপী মহামারি আকার ধারণ করেছে চীন থেকে ছড়ানো প্রাণঘাতী ভাইরাস করোনা। ফলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন প্রায় সবাই। করোনা প্রতিরোধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির, গির্জা, স্কুল ও দর্শণীয় স্থান। স্থগিত করা হয়েছে মুসলমানদের মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত ওমরাহও। করোনা আতঙ্কে মানুষের জন্য প্রতিক্রিয়া, করণীয় ও আহ্বান ব্যক্ত করেছেন দেশ-বিদেশের প্রখ্যাত আলেম-ওলামা ও ইসলামিক স্কলাররা। তাদের সেসব বক্তব্য সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো-
কাবা শরিফের প্রধান ইমাম শায়খ সুদাইসি: করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে রোববার (৮ মার্চ) এশার নামাজের পর কাবা শরিফ চত্বরে বাইতুল্লাহর মেহমানদের উদ্দেশে বয়ান পেশ করেন। সেখানে তিনি আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রশংসা করে উপস্থিত লোকদের বলেন, ‘হে আমার মুসলমান ভাইয়েরা! বিশ্বব্যাপী প্রাণঘাতী এক ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। এ ভাইরাস আল্লাহর হিকমতেই কার্যকর। এটা বান্দার প্রতি আল্লাহর পরীক্ষা। যাতে বান্দা তার দিকে ফিরে আসে। আল্লাহ নিজেই বান্দাকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন,
আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, সম্পদ ও জীবনের ক্ষতির মাধ্যমে। তবে ধৈর্যশীলদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ।’ সুতরাং এ ভাইরাসসহ যাবতীয় বিপদ থেকে আত্মরক্ষায় বান্দার জন্য জরুরি হলো আল্লাহর সাথে সম্পর্ক রাখা। করোনা ভাইরাস আতঙ্কে আল্লাহর প্রতি আস্থাহীন হওয়া উচিত নয় বরং ভাইরাস মুক্ত থাকতে তাওবা করা এবং তাঁর ওপর ভরসা রাখা এবং দোয়া করা। যাতে আল্লাহ তাআলা ভাইরাস থেকে মুসলমানদের হেফাজত করেন।
কাবা শরিফের প্রধান ইমাম আরও বলেন, ‘সৌদি সরকার পবিত্র দুই মসজিদ মক্কা ও মদিনায় সাময়িকভাবে কিছু দিনের জন্য ওমরা ও জেয়ারত স্থগিত, রাতে তাওয়াফ বন্ধসহ কিছু জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যাতে অন্যান্য দেশ থেকে আগত ধর্মপ্রাণ মুসলমান এ ভাইরাসে আক্রান্ত না হয় এবং তা সংক্রামক হয়ে ব্যাপকভাবে না ছড়িয়ে পড়ে।
এটি ওমরাহ পালনকারী ও দর্শনার্থীদের জন্য জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’ পরিশেষে তিনি বলেন, ‘করোনা ভাইরাসে অস্থির, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ও ভয় না পেয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তাঁর রহমতের আশায় তাওবা করে তার দিকে ফিরে আসা এবং তা থেকে আত্মরক্ষায় হাদিসে বর্ণিত দোয়া করা সবার জন্য জরুরি। তিনি মুসলিম উম্মাহর জন্য ভাইরাস ও মহামারি থেকে হেফাজতের জন্য দোয়া করেন।’
মুফতি তাকি উসমানি: চীন থেকে মহামারি রূপ নেয়া করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সম্প্রতি পাকিস্তানের প্রখ্যাত আলেম ও সাবেক বিচারপতি মুফতি তাকি উসমানি করোনা ভাইরাস নিয়ে জরুরি এক ভিডিও বার্তা শেয়ার করেছেন। তাতে তিনি প্রাণঘাতী এ ভাইরাস থেকে বেঁচে থাকার পদ্ধতি সম্পর্কে দিক-নির্দেশনামূলক বয়ান করেছেন। তিনি বলেন, সারা বিশ্বে দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ছে প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস।
নতুন এ ভাইরাসের এখনো ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি। মহামারি রূপধারণকারী এ জাতীয় প্রাণঘাতি রোগ সম্পর্কে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-যখন মানব সমাজে পাপাচার বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ তাআলা তাদের মাঝে এমন সব (নতুন নতুন মহামারি) বিপদাপদ ও রোগব্যাধি ছড়িয়ে দেন, যার নাম ইতোপূর্বে তাদের পূর্বপুরুষরাও শোনেনি। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা গোটা মানবজাতিকে এসব ভাইরাস থেকে রক্ষা করুন। করোনা সংক্রমণের এ পরিস্থিতিতে মানুষের করণীয় হলো-
সর্বপ্রথম নিজের পাপাচারে অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহমুখী হতে তওবা করা। বেশি বেশি ইসতেগফার পড়া। সংক্রমণ ব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা। যে সব কারেন সংক্রামক ব্যাধি ছড়াতে থাকে সেসব উপসর্গগুলো থেকে বেঁচে থাকা ও তা পরিত্যাগ করা।সাথেসাথে সর্বাত্মক সতর্কতা অবলম্বন করাও জরুরি। যে কোনো অসুস্থতায় ধৈর্যধারণ ও আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনার সঙ্গে চিকিৎসা গ্রহণ করতে দিক-নির্দেশনাও দিয়েছে ইসলাম।
তিনি আরও বলেন, ‘সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত এলাকার অধিবাসীদের জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লোমের নির্দেশনা হলো- ‘যদি তোমরা মহামারির (নতুন নতুন রোগ-ব্যাধির) কোনো সংবাদ শোন, তো সেখানে (আক্রান্ত অঞ্চলে) তোমরা প্রবেশ থেকে বিরত থাক। আর যদি কোনো শহরে বা নগরে কেউ সে মহামারিতে আক্রান্ত হয়, তো সেখান থেকে তোমরা বের হয়ে (অন্য কোনো অঞ্চলে) যেয়ো না।’ (বুখারি)
তিনি দুইটি দোয়া করার পরামর্শ দেন, যাতে করোনা প্রতিরোধে ফলপ্রসু সমাধান আসবে। আর তাহলো-দোয়া ইউনুস-
لَااِلَهَ اِلَّا اَنْتَ سُبْحَانَكَ اِنِّيْ كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْن
উচ্চারণ : ‘লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জ্বালিমিন।’
সুরা আহজাবের ১৩ নম্বর আয়াতের অংশ বেশি বেশি পাঠ করা-
يَا أَهْلَ يَثْرِبَ لَا مُقَامَ لَكُمْ فَارْجِعُوا
উচ্চারণ : ‘ইয়া আহলা ইয়াছরিবা! লা মুক্বামা লাকুম ফারঝিউ।’
ওমরা সাময়িকভাবে স্থগিত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ওমরা ফরজ-ওয়াজিব কোনো বিধান নয়। তাই বৃহত্তর স্বার্থে সৌদি সরকারের এ পদক্ষেপে বিরোধিতা না করে তা মেনে নেয়া উচিত। আর হজের সময় এখনো অনেক বাকি, আশা করি ততদিনে আল্লাহ তাআলা পরিস্থিতি ঠিক করে দেবেন। ইনশাআল্লাহ।
করোনায় আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের তাওবার আহ্বান:প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে তাওবা করে আল্লাহর পথে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান, ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহের গ্র্যান্ড ইমাম শাইখুল হাদিস আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। তিনি বলেন, আল্লাহর নাফরমানী বেড়ে গেলে দুনিয়ায় প্রাণঘাতী যে কোনো মহামারী নেমে আসে। করোনা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া কেবল ভাইরাস নয়। বরং এটা নাফরমানীর কারণে অনেক বড় গজবও বটে।
মানুষের বদ আমলের কারণেই করোনা ভাইরাসের মত রোগ আসে জানিয়ে আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, বর্তমান বিশ্বে খারাপ কাজের পরিমাণ দিনদিন বেড়েই চলছে। মানুষ এখন ভালো কাজ করতে চায় না। মানুষ যখন গোনাহের কাজ করে, বদ আমল করে, তখন এর প্রভাব প্রকৃতির উপর পড়ে। আর মানুষের বদ আমলের কারণেই আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে করোনা ভাইরাসের মত রোগ আসে।
তিনি বলেন, ‘এ প্রাণঘাতী ভাইরাস থেকে পরিত্রাণের জন্য একমাত্র উপায় হলো-
মানুষকে আল্লাহমুখী হওয়া। আল্লাহর কাছে ছুটে আসা। রোনাজারী করা। বান্দা আল্লাহ তাআলঅকে ভুলে গেছে বলেই প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস আক্রমন করেছে। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে দেশের সব ইমামদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন- যেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররামসহ দেশের সব মসজিদে আগামী জুমআর দিন দোয়া দিবস পালন করা হয়। একমাত্র আল্লাহ তাআলাই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া এই মহামারী থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে পারেন।সময় নিউজ