রোববারই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তারপরও সোমবার সন্ধ্যায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দেয়া হয়, আগামী ১৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফর রাখা স্থগিত করা হয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের জেরে ওই দিন ঢাকায় মুজিব বর্ষের মূল অনুষ্ঠানটিকে সীমিত পরিসরে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমারের কথায়,‘এই অনুষ্ঠানের নতুন তারিখ শিগগিরই আমাদের জানানো হবে।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটির সদস্য কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী জানিয়েছেন, ১৭ মার্চ জাতীয় প্যারেড স্কোয়ারে যে রকম বড় করে অনুষ্ঠানটি হওয়ার কথা ছিল সেটি বড় আকারে আর হচ্ছে না। ওই অনুষ্ঠানেই উপস্থিত থাকার এবং বক্তৃতা করার কথা ছিল মোদি-সহ অন্যান্য বিদেশী অতিথিদের। সূত্রের খবর, সফর স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে ঢাকাকে জানানো হয়েছে, ওই দিন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংযোগ করাতে উৎসুক সাউথ ব্লক। তবে বিষয়টি নিয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
করোনাভাইরাসের কারণে এর আগে বেলজিয়াম সফর বাতিল করেছিলেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু বাংলাদেশে যাওয়া এবং সেখানে শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়ে গিয়েছিল। ভারতের কেন্দ্রীর সরকারের পক্ষ থেকে মোদির বক্তৃতা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার খসড়া তৈরি করার জোরদার প্রস্তুতিও শুরু হয়েছিল। আপাতত, ভিডিও কনফারেন্স-এর মাধ্যমে যার কিছুটা বাংলাদেশের কাছে পৌঁছে দিতে চাওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমার সোমবার বিবৃতি দিয়ে জানান,‘যে পরিস্থিতিতে এই অনুষ্ঠান পিছিয়ে দেয়া হয়েছে সে সম্পর্কে আমরা সচেতন। প্রতিবেশী দেশগুলোতে যাতে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে না-পারে, সে জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করতে আমরা প্রস্তুত।’ তবে ভারতের কূটনৈতিক মহলের অনেকেই মনে করছেন, বিষয়টি শাপে বর হয়েছে। নরেন্দ্র মোদির এই ঢাকা সফর নিয়ে বাংলাদেশে প্রবল অসন্তোষ আর আন্দোলন গড়ে উঠেছিল।
সিএএ এবং এনআরসি নিয়ে বাংলাদেশের সরকারি, রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিসরে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। দিল্লির সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা আর মুসলিম গণহত্যা এই ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢেলে দেয়। ভারতে সংখ্যালঘু তথা মুসলমানদের উপর অত্যাচার করছেন মোদি, অমিত শাহ—এই মর্মে মুখর হতে থাকেন বাংলাদেশের অনেকে। শুধু বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী বা অন্যান্য বিরোধী দলই নয়, আওয়ামী লীগের নতুন প্রজন্মের নেতা-কর্মীরাও মোদি-বিরোধিতা শুরু করেন। মোদির প্রস্তাবিত সফরে বিক্ষোভ দেখানোর কর্মসূচিও নেয় বিরোধীরা। গত সপ্তাহে মোদি বিরোধিতায় মিছিল করে বিভিন্ন ইসলামিক দল। সূত্র : আনন্দবাজার