আতংক নয়, সতর্ক ও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আল্লামা সাঈদী। এই বিষয়ে আল্লামা সাঈদী পুত্র মাসুদ সাইদী বলেন আমার আব্বা আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী হাফিজাহুল্লাহ’র সাথে দেখা করে কাশিমপুর কারাগার থেকে ফিরছি। সাক্ষাতের আগে বরাবরের মতো আবেদন জমা দিয়ে ঘন্টা দুয়েক বসে থাকতে হয়েছে। এভাবে বসিয়ে রেখে কষ্ট দিতে ওরা যে কি আনন্দ পায়, তা গত ১০ বছরেও বুঝতে পারলাম না।
সাক্ষাতের ডাক এলে সাক্ষাতের জন্য নির্ধারিত রুমে ঢুকেই আব্বাকে জড়িয়ে ধরে তার কপালে লম্বা করে একটা চুমু দিয়েছি। বিশ্বাস করুন! ঐ কপালে চুমু দেয়ার পর আমার সমস্ত শরীরে এক শিহরণ বয়ে গেছে। আমার শরীর এক ধরনের প্রশান্তিতে ভরে গেছে। আহা! কতো পবিত্র ঐ কপাল। সাক্ষাতের শুরুতেই আব্বা বাংলাদেশে সনাক্ত হওয়া ৩জন করোনা রুগী সম্পর্কে জানতে চাইলেন।
ঐ ৩ রুগীর আজকের সর্বশেষ খবর আমরা যতোটুকুন জানি তা আব্বাকে জানালাম। আব্বা বললেন, কভিড-১৯ করোনাভাইরাসে আজ বুধবার পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার ২০০ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার মানুষ, তবে এর মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৬৫ হাজার মানুষ। এ পর্যন্ত ১০০ এর বেশি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস।
আব্বা আরো বললেন, পত্রিকা পড়ে যা জানলাম আর বুঝলাম তাতে করোনাভাইরাসে আতংক নয়, প্রয়োজন সতর্কতার ও সচেতনতার। আল্লাহ চাহেন তো, আমরা সকলে সতর্ক ও সচেতন হলে করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসসহ সকল প্রকার দূরারোগ্য ব্যাধি থেকে রক্ষা পেতে প্রয়োজনীয় সতর্কতার পাশাপাশি এই দোয়াটি বেশি বেশি পাঠ করার জন্য আমার আব্বা আল্লামা সাঈদী সকলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
দোয়াটি হলো-اللَّهمَّ إِنِّي أَعُوُذُ بِكَ مِنَ الْبرَصِ، وَالجُنُونِ، والجُذَامِ، وسّيءِ الأَسْقامِ(বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আ’য়ুজুবিকা মিনাল বারাছ, ওয়াল জুনুন, ওয়াল জুযাম, ওয়া সায়্যিইল আসক্বাম) বাংলা অর্থ:হে আল্লাহ, আমি তোমার নিকট ধবল, কুষ্ঠ এবং উন্মাদনা সহ সব ধরনের কঠিন দূরারোগ্য ব্যাধি থেকে পানাহ চাই। [সুনান আবু দাউদ]
আব্বা অনেক কথা বললেন, কিন্তুর নিজের শরীরের কথা কিছু বললেন না। চোখ দেখে প্রশ্ন করে জানতে পারলাম, কয়েকদিন যাবত আব্বার ঘুমের কষ্ট হচ্ছে। কখনো কখনো রাতে সামান্য ঘুম হয়, আবার কোনো কোনো রাতে মোটেও ঘুম হচ্ছেনা। সুগার একটু বাড়তি। আর হাঁটু কোমড়ের ব্যাথা! সে কথা আর কি বলবো?
আমার আব্বার বয়স এখন ৮০। আব্বা গত ৩৯ বছরের ডায়াবেটিক পেশেন্ট। আব্বার হার্টে ৫টি রিং বসানো আছে। এছাড়া আব্বা দীর্ঘদিন যাবৎ আর্থাইটিস রোগেও আক্রান্ত। বিগত ৩ বছরের মধ্যেও কারাগার কর্তৃপক্ষ আব্বার হাঁটু কিংবা কোমড়ের অথবা ডায়াবেটিস কিংবা হার্টের সামান্য চিকিৎসার ব্যবস্থাও করেনি। গত ৩ বছরে আমরা বহুবার কারা কর্তৃপক্ষের কাছে আব্বাকে হাসপাতালে এনে চিকিৎসা দেয়ার জন্য বহু আবেদন করেছি।
কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। ইদানিং আব্বা শারীরিকভাবে বেশ কষ্টে আছেন। যে কারনে আব্বা একনাগাড়ে বেশি সময় দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না এমনকি তিনি দাঁড়িয়ে নামাজও আদায় করতে পারছেন না। হাঁটু ও কোমড়ের তীব্র ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছেন আব্বা। সন্তান হয়ে পিতার সামান্য চিকিৎসাটুকুন করাতে পারছিনা!! কষ্টে বুক ফেটে কান্না আসে। হায়! এ কষ্টের কথাগুলো আমরা কার কাছে বলবো?
এতোকিছুর পরেও আলহামদুলিল্লাহ আমার আব্বা আল্লামা সাঈদী হাফিজাহুল্লাহ মানসিকভাবে মোটেও ভেঙে পড়েননি। তিনি সম্পূর্ণভাবেই মহান আল্লাহ তায়ালার উপর তাওয়াক্কুল করে আছেন। নিজেকে পরিপূর্ণভাবেই আল্লাহ তায়ালার কাছে সমর্পন করেছেন। তিনি নিজে কষ্টে থাকার পরেও আমাদেরকে সাথে নিয়ে করোনাভাইরাসের হাত থেকে বাংলাদেশকে হেফাজতের জন্য মহান আল্লাহ জাল্লা শানুহুর দরবারে দু’হাত তুলে ফরিয়াদ করেছেন। করোনায় আক্রান্তদের দ্রুত সুস্থতার জন্য দোয়া করেছেন।
আব্বার শারিরীক সুস্থতার জন্য তিনি আপনাদের সকলের কাছে বিশেষ দোয়া চেয়েছেন। আপনারা দোয়া করবেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেন তাঁকে সুস্থ রাখেন, ভাল রাখেন। তার নেক হায়াত দারাজ করেন। তাকে যেন আবারো আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত ওয়াল জালাল কোরআনের ময়দানে ফিরিয়ে দেন।