নোয়াখালীতে কয়দিন আগে একজন মানুষকে খুন করা হয়েছে। ছেলেটা একজন অন্ধ হাফেজে কুরআন ছিল। বন্দুক যুদ্ধের নাটক সাজিয়ে ক্রসফায়ারে দিয়েছে পুলিশ কিন্ত কেউ প্রতিবাদ করেনি। কারণ সে শিবির করতো। এরা শিবির নামের “কুত্তার বাচ্চা”, বা তার চেয়েও অধম, যার কারণে এদের খুন করলেও সবাই নীরব থাকে। চুপ থেকে, গা বাচিয়ে, কুত্তার বাচ্চাদের পক্ষ নেয়ার অপবাদ থেকে নিজেদের মুক্ত রাখে!
বিভিন্ন সময় আমাদেরকে বারবার প্রমাণ করতে হয়েছে, আমরা শিবির না। কারণ, এই দেশে অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেই তাকে শিবির ট্যাগ দিয়ে হামলা করে, ক্রসফায়ার দিয়ে থামিয়ে দেয়া হয়। তাই ফ্যাসিবাদের এই যুগে সবার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা থাকে, নিজেকে শিবির বিরোধী প্রমাণ করার। কমন ডায়ালগ থাকেঃ আরে আমি তো শিবির না।” “বুয়েটের আবরার তো শিবির ছিল না, ভারতের বিরোধীতা করায় তাকে শিবির বানিয়ে খুন করা হয়েছে!”কিন্ত আমি যদি বলি, আবরার শিবির ছিল৷ তাহলে কি হবে? আবরারের সম্মান কমে যাবে নাকি আবরারকে খুন করা জায়েজ হয়ে যাবে ? কোনটাই না.. কিন্ত সত্য হল, আবরারকে শিবির প্রমাণ করা গেলে বেশিরভাগ মানুষ সুশীল সেজে নীরব হয়ে যেত।
“আমি শিবির না, আমাকে কেন মারবে? কেন গুম করবে?” – এই কথাগুলার আড়ালে সবাই যেন এক রকম বৈধতা দিয়েই দিচ্ছে, শিবির হলে তাকে মেরে ফেলা জায়েজ। সুতরাং কেউ শিবির করলে তাকে পিটিয়ে মারা, খুন করা, জঙ্গি বলে ক্রসফায়ারে দেয়া সম্পূর্ণ বৈধ, তাই না না, বইলেন না। কারণ, উত্তরটা হলঃ হ্যা। এটাই সত্য। এটাই হয়ে আসছে এ দেশে, বহু বছর ধরে। শিবিরের কোন মানবাধিকার নাই, তারা মানুষই না। তাই এদের মারলে সবাই দেখেও না দেখার ভান করে। মিডিয়া মিথ্যাচার করে, অপবাদ দিয়ে খুনকে বৈধতা দেয় আর আদর্শের ফেনা তুলা বুদ্ধিজীবীগণ শিবির নামক কুত্তার বাচ্চাদের জন্যে মায়াকান্না করে নিজের জাত নষ্ট করতে চায় না।
আমি তো ইসলামিক না। প্রাক্টিসিং মুসলিম না, নামে মুসলিম। ইসলামী রাজনীতিতে আমার কোন বিশ্বাস নাই। আমি প্রগতিবাদী। আমি নারীবাদী। আমি ধর্ম নিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী। আমি সেকুলারিজমের মধ্যে কোন সমস্যা দেখি না। সাম্য, মানবতা, মুক্তচিন্তার পক্ষের লোক আমি। কিন্ত দ্বিমুখীতায় আমার প্রচন্ড সমস্যা। উদার, মুক্তচিন্তার মানুষেরা কত বেশি সংকীর্ণ, নিরপেক্ষতার মুখোশে এরা কত সহস্র গুণ পক্ষপাতদুষ্ট আর বাক স্বাধীনতার জন্যে আন্দোলন করা বিপ্লবীরা কতটুকু সমালোচনা সহ্য করে, তা আমি জানি।
নারীবাদ, সমাজতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা, মুক্তচিন্তা বা সেকুলারিজম সবগুলার আদর্শ অনুযায়ীই নোয়াখালীতে ক্রসফায়ারের নামে ঘটা হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ হওয়ার কথা। কিন্ত হয়েছে কী? কিছু তিক্ত সত্য বলা প্রয়োজন। আমি মাঝে মাঝেই বলি। অপ্রিয় এবং অজনপ্রিয় কথা বলি। বিবেকের তাড়নায় বলি, নিজ চোখে দেখা সত্যটাই বলি।
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছিঃ আমি এই ক্ষুদ্র জীবনে বহু শিবির দেখেছি। আমি মানুষ দেখেছি। বর্তমান ছাত্রলীগের চেয়ে এরা হাজার গুণ ভাল। হ্যা, এদের অনেকেই ব্রেইন ওয়াশড। মুক্তচিন্তা বুঝে না, অন্ধ আনুগত্য করে এবং এত বছর পরেও ৭১ নিয়ে তাদের ভ্রান্ত ধারণা পুরোপুরি দূর হয়নি, সেজন্যে আমার সাথে এদের বহু ঝগড়া হয়েছে। আমার কিছু পোস্টে শিবিরের পোলাপান সংঘবদ্ধ আক্রমণ করেছিল, ইনবক্সে এসে গালাগালি করেছিল। তাদের আদর্শ আর আমার চিন্তাভাবনায় অনেক অমিল। তবুও এই কথা স্পষ্ট ভাবে, নির্দ্বিধায়, নির্ভয়ে বলতে পারিঃ আমার নিজ চোখে দেখা ছাত্রলীগের চেয়ে, নিজ চোখে দেখা ছাত্রশিবির হাজার গুণ ভাল।
জানি, এই কথাগুলা অনেকের হজম হবে না। কিন্ত আমি এই যুগের তরুণ। কেউ আমাকে জোর করে আদর্শ গিলাতে পারবে না, চাপিয়েও দিতে পারবে না। না শিবির, না লীগ! জানি, এখন আমাকে ট্যাগ দেয়া হবে। কিন্ত সেজন্যে ভয় পাবো ? কাদের ভয়? খুনী, ভোট ডাকাত, স্বৈরশাসকের কাছ থেকে শিবির ট্যাগ খাওয়ার ভয় ? তবুও আমি নিরপেক্ষতার মুখোশে চুপ থাকতে পারলাম না। এদের ঘৃণ্য রাজনৈতিক চেতনায় আমি পেচ্ছাবও করি না। আমাকেও ক্রসফায়ারে দেয়া হোক!
