খালেদা জিয়ার মুক্তি ইস্যুতে দলের নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্তে চরম ক্ষুব্ধ বিএনপির তৃণমূল নেতারা। ২ বছরেরও বেশি সময় দলীয় প্রধান কারাগারে থাকলেও তাকে বের করতে সিনিয়র নেতাদের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা। তাদের মতে, আইনি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়ার জামিন মিলছে না। কিন্তু এমন পরিস্থিতির মধ্যেও বারবার কেন জামিনের জন্য চেষ্টা হচ্ছে? কারামুক্ত করার সদিচ্ছা থাকলে কঠোর কোনো কর্মসূচি আসত। পাশাপাশি পর্দার আড়ালে সরকারের সঙ্গে ‘সমঝোতায়ও’ যেতে পারত।
কিন্তু কোনো দিকেই সফল হচ্ছে না নীতিনির্ধারকরা। এ অবস্থায় অবিলম্বে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা ডাকার দাবি জানিয়েছেন তারা। এদিকে একাধিক নীতিনির্ধারক প্রায় অভিন্ন তথ্য দিয়ে শনিবার যুগান্তরকে জানান, দলের সর্বোচ্চ ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠক থেকে যে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়- এটা ঠিক। কিন্তু দলীয় চেয়ারপারসন কারাগারে যাওয়ার পর থেকে বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা সিদ্ধান্তের বিষয়ে মতামত দিলেও তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাস্তবায়ন হয় না।
স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য যুগান্তরকে বলেন, বৈঠকে এখন আগে থেকেই এজেন্ডা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। তাই এজেন্ডা ছাড়া বেশি কিছু বলার সুযোগ থাকে না বৈঠকে। খালেদা জিয়া যে মামলায় কারাগারে তা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক। বৈঠকে স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য শুরু থেকে বলে আসছেন রাজনৈতিকভাবে অর্থাৎ কঠোর কোনো কর্মসূচি ছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলবে না। একদিকে কঠোর কর্মসূচি, অন্যদিকে কূটনৈতিকভাবে সরকারকে চাপে রাখতে পারলে তার মুক্তি হবে।
কিন্তু এটা সত্য যে, কোনোটাই বিএনপি করতে পারছে না। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে যখনই কঠোর আন্দোলনের প্রসঙ্গ আসে তখনই একজন প্রভাবশালী সদস্য বিভিন্ন যুক্তি দেখিয়ে তা চেপে যান। তখন এ নিয়ে স্থায়ী কমিটি অন্য কোনো সদস্য আর কথা বলতে চান না। তবে কার বা কাদের ইশারায় আইনি ব্যবস্থায় মুক্তির কথা ভাবা হচ্ছে তা আমি নিজেও জানি না। জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়াকে জামিনে মুক্তির জন্য আইনি প্রক্রিয়া এখনও বাকি আছে।
আপিল বিভাগ আছে। পাশাপাশি আমাদের কর্মসূচিও চলছে। ধাপে ধাপে কর্মসূচি আরও জোরদার করা হবে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সব সদস্যের মতামতের ভিত্তিতেই যে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিএনপির বিভিন্ন স্থরের নেতাদের মতে, খালেদা জিয়ার কারামুক্তির জন্য প্যারোল (শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি) অথবা ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১(১) ধারায় সাজা স্থগিত রাখার আবেদন ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। এর জন্য পর্দার আড়ালে ‘সমঝোতা’ লাগবে।
কিন্তু এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত সরকারের কাছ থেকে কোনো ইতিবাচক মনোভাব পাওয়া যায়নি। এখন বিএনপির কঠোর আন্দোলন ছাড়া ভিন্ন কোনো উপায় নেই। অবশ্য একটি সূত্র জানায়, প্যারোল কিংবা সাজা স্থগিতের ব্যাপারে বিএনপি চেয়ারপারসন রাজি নন। তার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় পরিবারের সদস্যদের খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘তিনি কোনো অপরাধ করেননি।