জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় দণ্ডিত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসাসম্পর্কিত তিন অবস্থার তথ্য জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ অনুসারে খালেদা জিয়া অ্যাডভান্স থেরাপির জন্য সম্মতি দিয়েছেন কিনা, সম্মতি দিলে চিকিৎসা শুরু হয়েছে কিনা এবং বর্তমান তার কী অবস্থা তা জানিয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। বুধবারের মধ্যে আদালতে এ প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
পরে আদেশের জন্য এটি বৃহস্পতিবার কার্যতালিকায় আসবে। রোববার খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানিতে হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালত বলেন, কোনো ধরনের ব্যর্থতা ছাড়াই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে প্রতিবেদনটি সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের মাধ্যমে দিতে হবে। পরবর্তী আদেশের জন্য বৃহস্পতিবার তা কার্যতালিকায় আসবে।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার এ আদেশ দেন। বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বাংলায় এ আদেশ দেন। খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। এ সময় খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মাহবুব উদ্দিন খোকন, বদরুদ্দোজা বাদল, কায়সার কামাল, সগির হোসেন লিওন ও ফারুক হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এ সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন। দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খানও আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া আদালতের কার্যক্রম দেখতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সকালের দিকে রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বেঞ্চ দুপুর ২টায় জামিন শুনানির সময় নির্ধারণ করেন। আদালতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন (বাপ্পী) বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল এ মামলায় শুনানি করবেন। তিনি এখন অন্য মামলায় ব্যস্ত। এজন্য দুপুর পর্যন্ত সময় প্রয়োজন। তখন আদালত বলেন, অ্যাট টু (দুপুর ২টায়)। এ সময় ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, এটা আদালতের বিষয়।
দুপুরে শুনানিতে জয়নুল আবেদীন বলেন, আমরা একমাত্র স্বাস্থ্যগত কারণে আবার আদালতে এসেছি। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত অবস্থা আগের থেকে অনেক খারাপ। তিনি ৫ মিনিটও দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না। নিজের হাতে খেতেও পারেন না। খাবার খেলেও তিনি প্রায় বমি করেন। খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার পর পরিবারের সদস্যরা গণমাধ্যমকে বলেন, তার অবস্থা অত্যন্ত খারাপ।
এভাবে থাকলে তার কখন কী হয়ে যায় তা বলা যায় না। তাই আমরা তার জামিন প্রার্থনা করছি। খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থার প্রতিবেদন দিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভিসির প্রতি নির্দেশনা চেয়ে করা আবেদন তুলে ধরেন জয়নুল আবেদীন। তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনে তার স্বাস্থ্যগত সর্বশেষ অবস্থা কী, সে বিষয়ে একটা প্রতিবেদন চাইতে পারেন।’
শুনানিতে জামিনের বিরোধিতা করে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, এর আগে এ আদালতে একই আবেদন করা হয়েছে এবং আপিল বিভাগে খারিজ হয়েছে। আপিল বিভাগে খারিজ হওয়া আবেদন এবং এ আবেদন পুনরাবৃত্তি মাত্র। আপিল বিভাগ তো বলেছেন উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হলে তার সম্মতিতে সেটা করা হবে। এছাড়া তার চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ওষুধ বাংলাদেশে রয়েছে।
এরপর হাইকোর্ট খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দিয়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। আদালতের আদেশের পর খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা যতটুকু জানি, উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়া সম্মতি দিয়েছেন। সে অনুযায়ী চিকিৎসাও শুরু হয়েছে। কিন্তু তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না।
উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়ার জামিন চেয়ে মঙ্গলবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদনটি জমা দেয়া হয়। বুধবার খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন আবেদনটি আদালতে উপস্থাপন করেন। দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছরের দণ্ড মাথায় নিয়ে কারাবন্দি খালেদা জিয়া এপ্রিল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দল ও পরিবারের সদস্যরা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে অন্য হাসপাতালে নিতে চাইলে তাতে অনুমতি মেলেনি।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় জামিন চেয়ে এর আগেও হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়া। কিন্তু অপরাধের গুরুত্ব, সংশ্লিষ্ট আইনের সর্বোচ্চ সাজা এবং বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়াসহ অন্য আসামিদের করা আপিল শুনানির জন্য প্রস্তুত- এমন তিন বিবেচনায় হাইকোর্ট বেঞ্চ ৩১ জুলাই সেই আবেদন খারিজ করে দেন। এরপর খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আপিল বিভাগে যান। কিন্তু খালেদা জিয়া জামিন পাননি।
১২ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে জামিন আবেদনটি খারিজ করে দেন। আপিল বিভাগের ওই রায়ে বলা হয়, বিএনপি চেয়ারপারসনের সম্মতি থাকলে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে দ্রুত ‘অ্যাডভান্সড ট্রিটমেন্ট’ দেয়ার পদক্ষেপ নিতে। সেই রায় ১৯ জানুয়ারি প্রকাশিত হওয়ার পর হাইকোর্টে নতুন করে জামিন আবেদন করার উদ্যোগ নেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।
৩৬টি মামলার মধ্যে ৩৪টি মামলায় খালেদা জিয়া জামিনে আছেন বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা। খালেদা জিয়ার সবশেষ মেডিকেল রিপোর্ট চেয়ে আবেদন : জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার জামিন আবেদনে খালেদা জিয়ার লেটেস্ট (সবশেষ) মেডিকেল রিপোর্ট আদালতে দাখিল করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের (বিএসএমএমইউ) ভিসির প্রতি নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী সগির হোসেন লিয়ন জানান, রোববার এ আবেদন করা হয়েছে। আবেদনে বলা হয়, অন্যের সাহায্য ছাড়া তিনি (খালেদা জিয়া) চলতে পারেন না। এমনকি অন্যের সাহায্য ছাড়া তিনি খাবার ও ওষুধও খেতে পারেন না। ১১ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে তাকে তার বোন দেখতে যান। এরপর তার বোন বলেন,
বিদেশে খালেদা জিয়ার অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্ট দরকার। আর তা না হলে অসুস্থতা থেকে তার উন্নতির কোনো সম্ভাবনা নেই। এসব সংবাদ ১২ ফেব্রুয়ারি দেশের সব সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এর আগে আবেদনকারী নতুন মেডিকেল গ্রাউন্ড ও মানবিক যুক্তিতে জামিন আবেদন করেন। তাই এখানে তার লেটেস্ট মেডিকেল রিপোর্ট খুবই প্রয়োজন।