ভাষাসৈনিক মো. আব্দুল মতিন ১৯৫২ সালে মাতৃভাষার জন্য লড়াই করে মানুষের কাছে চির স্মরণীয় হয়ে আছেন। তার জীবদ্দশায় তিনি মানুষের পাশে থেকে যেমন গণমানুষের কল্যাণ করে গেছেন তার মৃত্যুর পরও দৃষ্টিহীন এক তরুণীকে দৃষ্টিদান করে দিয়ে গেছেন আলোকিত পৃথিবী।
তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেও যেন তিনি আজও বেঁচে আছেন ঢাকার ধামরাইয়ের তরুণী রেশমার মাঝে। তার দান করে যাওয়া চোখে এখন আলোকিত হয়েছেন ঢাকার ধামরাই উপজেলার সুয়াপুর ইউনিয়নের রেশমা নাসরিনের জীবন।
২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও মহান শহীদ দিবসে ভাষাসৈনিক আব্দুল মতিনকে আনা আয়োজনের মধ্য দিয়ে স্মরণের আয়োজন করেছেন রেশমা নাসরিনের পরিবার ও এলাকাবাসী। সকাল থেকে শুরু করে দিনব্যাপী চলবে ভাষাসৈনিক আব্দুল মতিনের কর্মময় জীবন নিয়ে আলোচনা ও প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন। এ উপলক্ষে গ্রামবাংলা থিয়েটার মঞ্চস্থ করবে ভাষাসৈনিক আব্দুল মতিন নাট্যানুষ্ঠান।
রেশমা নাসরিন (২৮) আবদুল মতিনের মতো মহান মানুষের অনুগ্রহ পেয়ে গর্বিত। আবদুল মতিনের দান করে যাওয়া দুটি চোখের কর্নিয়ার মধ্যে একটি স্থাপন করা হয়েছে এই নারীর চোখে। জন্মগতভাবে চোখের সমস্যা নিয়ে ২৪ বছর অতিবাহিত করার পর আবদুল মতিনের চোখের কর্নিয়ায় জীবনের ছন্দ ফিরে এসেছে তার। এখন তিনি দেখছেন আলোকিত এ পৃথিবী। পুরো অবদানই ভাষাসৈনিক আব্দুল মতিনের।
রেশমা নাসরিন জানান, জন্মের পর চোখের সমস্যা দেখা দেয় আমার। আট বছর বয়স থেকে সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে আমার। অভাবের সংসারে চোখের সমস্যা নিয়ে আমি পড়াশুনা চালিয়ে যেতে থাকি অনেক কষ্ট করে। ২০১৩ সালে ধামরাই সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক শেষ করে মাস্টার্সে ভর্তি হই আমি।
সে বছর আমার চোখের আলো পুরোপুরি নিভে যায়। আমি অন্ধত্ব বরণ করি। দিশেহারা হয়ে চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরতে থাকি।
কিছুতেই কিছু হয় না। কোনো প্রতিকার না পেয়ে আরও দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই। একপর্যায়ে ঢাকার সেন্ট্রাল চক্ষু হাসপাতালের একদল চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আমাকে কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেন। কিন্তু ব্যয়বহুল এই কাজটি আমার পরিবারের পক্ষে মোটেও সম্ভব ছিল না।
২০১৪ সালের ৮ অক্টোবর ইহলোক ছেড়ে চলে যান মহান ভাষাসৈনিক আবদুল মতিন। গণমাধ্যমের সুবাদে আমি আবদুল মতিনের কর্নিয়া দানের বিষয়টি জানতে পারি। সেই দিনই আমি যোগাযোগ করি সন্ধানীর সঙ্গে। তারা আমাকে পরদিনই সেখানে যেতে বলেন।
৯ অক্টোবর বিকাল ৪টার দিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে মহান ভাষাসৈনিক আবদুল মতিনের চোখের কর্নিয়া আমার চোখে প্রতিস্থাপন করা হয়। এতে আমার খরচ হয় মাত্র ১৫ হাজার টাকা। আর আমি ফিরে পাই আলোকিত পৃথিবী। এর সব অবদান মহান ভাষাসৈনিক আব্দুল মতিন স্যারের।
রেশমা নাসরিন সুয়াপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের একজন স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে নিয়োজিত। মহান ভাষাসৈনিক আবদুল মতিনের দানে চোখের আলো ফিরে পেয়ে মানুষের সেবায় ব্রত হয়েছেন তিনি।
বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেবা দেয়ার পাশাপাশি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেন শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গদান করায় জন্য। এভাবে মানুষের উপকার করে আবদুল মতিনের ঋণ কিছুটা শোধ করতে চান তিনি।