না ফেরার দেশে চলে গেছেন জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নায়েবে আমির ও প্রভাবশালী নেতা মাওলানা আব্দুস সোবহান। শুক্রবার দুপরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বর্ষীয়ান এ নেতা। দীর্ঘ ৭ বছর যাবত কারাগারে বন্দী থাকার পর ৯০ বছর বয়সে তার মৃত্যু হয়। এই বর্ষীয়ান নেতার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির।
কথিত যুদ্ধাপরাধের মামলায় ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। এরপর তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লেও তাকে কোন উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করিনি ক্ষমতাসীন সরকার।
এর আগে ২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সকালে টাঙ্গাইলে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্ত থেকে মাওলানা সোবহানকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ওই রাতেই তাকে পাবনা কারাগারে নেয়া হয়। ২৬ সেপ্টেম্বর পাবনা কারাগার থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানাস্তর করা হয় তাকে। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। ৩০ সেপ্টেম্বর প্রসিকিউশনের আবেদন আমলে নিয়ে মাওলানা সোবহানকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
কে এই আব্দুস সোবহান?
দুনিয়ার নানা স্বার্থ নিয়ে পরিচালিত কর্মকান্ডের নেতৃত্ব দেয়ার উপযোগী লোকের অভাব সমাজে নেই। কিন্তু সততা ও যোগ্যতার সাথে নেতৃত্ব দেয়ার মতো লোকের অভাব আছে নিঃসন্দেহে। সমাজ পরিচালনার উপযোগী অন্য সব যোগ্যতার পাশাপাশি যখন একজন মানুষের মধ্যে দ্বীনি জ্ঞান, খোদাভীতি, জনদরদী মন ও মানবতাবোধের সংমিশ্রণ ঘটে তখন তিনি একজন প্রকৃত মানুষ এবং উত্তম নেতা হতে পারেন। মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুস সোবহান এমনই একজন ব্যক্তিত্ব হিসেবে পাবনার সর্বস্তরের মানুষের কাছে পরিচিত। তিনি পাবনাবাসীর সুখে-দুঃখে, সুদিনে-দুর্দিনে সব সময় সাথে ছিলেন। তিনি শুধু পাবনারই নেতা ছিলেন না তিনি একজন প্রবীন জাতীয় নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে তিনি বরাবরই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে আসছিলেন এই নেতা।
শুধু তাই নয় তিনি পাবনা সদর থেকে ৫ বার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৬২ এবং ১৯৬৫ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং তার পরবর্তী মেয়াদে বিরোধী দলের সিনিয়র উপ-নেতার ভূমিকা পালন করেন। এরপর ১৯৯১ সালে পাবনা -৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই সংসদে তিনি জামায়াতের সংসদীয় দলের উপ-নেতা ছিলেন। ২০০১ সালে তিনি আবার পাবনা -৫ আসন থেকে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসাবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে তার নির্বাচনী এলাকায় ৫৬.৭৮% ভোট পেয়ে বিজয়ী হন এই বর্ষীয়ান জামায়াত নেতা।
জন্ম শৈশবঃ
মাওলানা আব্দুস সোবহান ১৯২৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পাবনা জেলার সুজানগর থানাধীন মোমিনপাড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতা মরহুম মুন্সী নঈমউদ্দীন আহমদ একজন দ্বীনদার ও পরহেজগার আলেম ছিলেন। মাওলানা আব্দুস সোবহান ১৯৬৫ সাল থেকে পাবনা শহরের গোপালপুরে (পাথরতলা) স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। বর্তমানে তিনি পরিবার পরিজন নিয়ে সেখানেই থাকছেন।
শিক্ষাজীবনঃ
তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় রামচন্দ্রপুর মক্তবে। পরে তিনি মানিকহাট ও মাছপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। ১৯৪১ সালে তিনি উলট মাদ্রাসায় ভর্তি হন এবং প্রায় সাত বছর এ মাদ্রাসায় পড়াশুনা করে ১৯৪৭ সালে জুনিয়র পাস করেন। তিনি শিবপুর মাদ্রাসা থেকে ১৯৫০ সালে আলিম পাস করেন। তিনি সিরাজগঞ্জ আলীয় মাদ্রাসা থেকে ১৯৫২ সালে ফাজিল ও ১৯৫৪ সালে কামিল পাশ করেন। মাওলানা আব্দুস সোবহান অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তিনি জুনিয়র (মেট্রিকুলেশন সমমান), আলিম ও ফাজিল পরীক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। কামিল পরীক্ষায় মাদ্রাসা বোর্ড থেকে হাদীস গ্রুপে প্রথম শ্রেণীতে সপ্তম স্থান অধিকার করেন।
শিক্ষকতাঃ
মাদ্রাসা বোর্ড থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি ১৯৫২ সালে হেড মাওলানা হিসেবে পাবনা আলীয়া মাদ্রাসায় যোগদান করেন। অতপর তিনি গোপালচন্দ্র ইনস্টিটিউট, আরিফপুর উলট সিনিয়র মাদ্রাসায় সুপারিনটেনডেন্ট ও মাগুরার বড়রিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। তিনি ১৯৫২ থেকে ১৯৬২ পর্যন্ত দীর্ঘ ১০ বছর সুনামের সাথে শিক্ষকতার মহান দায়িত্ব পালন করেন।