Breaking News

অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ এবং কিছু অজানা তথ্য

আপনি জানেন কি অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের দলের জয়ের হার ৭২%, কেবল মাত্র ইন্ডিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ থেকে এগিয়ে এবং প্রত্যেকবারই আকবর আলী, মাহমুদুল হাসান জয়, রাকিবুল হাসানদের মতো অনেক তারকা উঠে আসে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে তারা কোথায় হারিয়ে যায়?

২০১২ সালের অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ। অস্ট্রেলিয়ার বাউন্সি উইকেটে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক কে ছিল জানেন? আনামুল হক বিজয়। ৬ ম্যাচে ৩৬৫ রান। আর কেউ ৩০০ এর বেশি রান করতে পারে নি। অথচ আজ বিজয় বাংলাদেশের কোন ফরমেটেই চান্স পায় না। কি আফসোস হয়? আফসোসটা আরও কয়েক গুণ বেড়ে যাবে যখন জানতে পারবেন ওই বিশ্বকাপেই ২য় এবং ৪র্থ সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিল বাবর আজম এবং কুইন্টন ডি কক!!!

২০১৪ সালের অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ। সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক বাংলাদেশের সাদমান ইসলাম। ৬ ম্যাচে ৪০৬ রান। অথচ সেই বিশ্বকাপেই সাদমানের থেকে অনেক পিছিয়ে থাকা প্লেয়ারদের তালিকাটা দেখুন। শ্রেয়াস আইয়ার, নিকোলাস পুরান, শিমরন হেটমায়ার, কুসাল মেন্ডিস, সানজু স্যামসন!!!

২০১৬ সালের অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ। বাংলাদেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত হওয়া সেই বিশ্বকাপে সিরিজ সেরা মেহেদী হাসান মিরাজ, যার কিনা এখন সাকিব, মুশফিক, সাইফুদ্দিন বিহীন বাংলাদেশের সর্বশেষ খেলা টেস্ট, টি টুয়েন্টি কোন ম্যাচই একাদশে সুযোগ হয় নি! অথচ সেই বিশ্বকাপে পারফর্মেন্সে মিরাজের থেকে পিছিয়ে থাকা রশীদ খান, শাদাব খান, রিসাব পান্ট, সন্দ্বীপ লামিচানেরা এখন কতদূর চলে গেছে।

এ তো গেলো সমসাময়িক কিছু উদাহরণ। এবার আরেকটু পিছিয়ে ২০০৪ এ ফিরে যাওয়া যাক। বাংলাদেশে হওয়া সেই অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে প্রথম ২জন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন শেখর ধাওয়ান এবং এলাস্টার কুক। চারে ছিল আমাদের নাফিস ইকবাল, যে কিনা ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছে ২০০৬ সালে! নাফিস ইকবালের থেকে রানের দিকে পিছিয়ে থাকা নাম গুলো দেখেন। মরগান, রায়না, সিমন্স, উথাপা, দিনেশ কার্তিক!!

তাহলে আমাদের প্লেয়াররা শুরুতে এতো এগিয়ে থেকেও পরে গিয়ে এতো পিছিয়ে কিভাবে পড়ে??? একটা উদাহরণ দিই।

মনে করেন সামনে জিম্বাবুইয়ে সিরিজে অনূর্ধ্ব ১৯ এর ক্যাপ্টেন আকবর আলীর অভিষেক হয়ে গেলো। বাংলাদেশের ক্রিকেটে যেকোন দুঃসময়ে জিম্বাবুইয়ের মতো ত্রাতা হয়ে এখন পর্যন্ত কেউ আসে নি। যখন খারাপ সময় যায়, জিম্বাবুইয়েকে দেশে আমন্ত্রণ জানিয়ে বাংলাওয়াশ করে বাংলাদেশের খারাপ ফর্মটা ধামা চাপা দেয়।

মনে করেন সেরকম এক মাচে অভিষেকে একটা ফিফটি করে ফেললো আকবর আলী। তাহলে তো আর কথায় নেই। অনলাইন পেপারে বড় বড় করে শিরোনাম“জেনে রাখুন আকবর আলীর ৫ টি রেকর্ড, যা করতে পারে নি বিরাট কোহলী, রোহিত শর্মার, স্টিভেন স্মিথরাও!!!” মিডিয়া এবং আমরা ফ্যানরা তাকে ক্যাপ্টেন কুল ধোনি বানিয়ে ফেলবো, যেভাবে আমরা নাসিরকে মাইকেল বেভান, সৌম্যকে এডাম গিলক্রিস্ট, মুস্তাফিজকে ওয়াসিম আকরাম, মিরাজকে আরেক সাকিব আল হাসান বানিয়ে ফেলছিলাম।

এভাবে আকবর আলী কয়েকদিন রীতিমতো উড়তে থাকবে। তারপর মনে করেন ইন্ডিয়ার সাথে টেস্ট খেলা। আকবর আলী মাঠে নামলো। প্রথমেই ১৪৫-১৫০ বেগে বুমরার বাউন্স আর ইয়র্কার, খুব দেখেশুনে খেললো। তারপর আসলো ইশান্ট শর্মার বাউন্স, বুক বরাবর বল। বসে পড়ে, শরে গিয়ে, ছেড়ে দিয়ে কোনভাবে পার করলো। এরপর সামি। এরকম বিধ্বংসী পেস এটাকের পর আকবর আলী ভাবলো আচ্ছা কোন রকম পেস এটাকটা পার করি, স্পিন আসলে তারপর শট খেলবো।

যথারীতি স্পিন এটাক আসলো, এক পাশ থেকে অসিন, আরেক পাশ থেকে জাদেজা। উপমহাদেশের স্পিনিং পিচে তাদের বল খেলা আরও দুর্বোধ্য। এই মনে করেন আকবর আলীর খারাপ খেলা শুরু হইলো। অনূর্ধ্ব ১৯ এর ফাইনালে না হয় এক রবি বিষ্ণুর ঘূর্ণি বল দেখে শুনে পার করে, বাকিদের টার্গেট করে খেলেছে। আর এখানেতো ৫ জনই এক একটা গোলা। ঠিক তেমনি যখন ধীরে ধীরে মিচেল স্টার্ক, স্টেইন, কামিন্স, নাথান লায়ন, আমীর, রশিদ খান, জফ্রা আরচারদের ফেস করবে, তখন কি আপনার মনে হয় অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালের মতো কুল হয়ে এতো সুন্দর করে শট খেলতে পারবে?

জিনিসটা অনেকটা এরকম আপনার ছেলে ক্লাস ফাইভে বাংলাদেশে গণিত অলিম্পিয়াডে চ্যাম্পিয়ন হলো, আর আপনি তাকে এখন পাঠিয়ে দিয়েছেন বিশ্ব গণিত অলিম্পিয়াডের মঞ্চে!! কি অবস্থা হবে একবার ভাবুন।

এভাবে আস্তে আস্তে ফর্ম নিচের দিকে যাবে। মিডিয়া তার পিছে লাগবে, আমরাও তাকে ইমরুল ব্রো এর মতো আরেক ব্রো বানিয়ে ট্রল করবো। আকবরও আস্তে আস্তে মানসিকভাবে ভেঙে যাবে। আরে ভাই ২৯ বছর বয়সে এসেও বস একটু জোরে শাউট করলে আমাদেরই তো মন ভেঙে যায়, আর সে তো কেবল ১৯ বছরের ছেলে। এতোকিছুর চাপে তার মানসিকভাবে ভেঙে পড়াটা অস্বাভাবিক না। নাফিস ইকবাল, আফতাব আহমেদ, এনামুল হক বিজয়, মিরাজ, সৌম্য সরকার, লিটন দাস দের সাথে আরেকটা নাম যোগ হবে আকবর আলী।

২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত টেস্টে বাংলাদেশের ১৫ জন প্লেয়ারের অভিষেক হয়েছে। এই সময়ের মাঝে বাংলাদেশ ২৩ টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে, কিন্তু কিছুটা আশ্চর্যজনক হলেও সত্য এই ১৫ জনের মধ্যে একজন প্লেয়ারও এখন পর্যন্ত ১০টি টেস্ট ম্যাচও খেলতে পারে নি!!! উত্তরটা খুব সোজা। পারফর্মেন্স ভাল না। তাই ঘন ঘন পরিবর্তন। কিন্তু কথা হচ্ছে আপনি একজন প্লেয়ারকে সঠিকভাবে প্রিপেয়ার্ড না করে, গ্রুমিং না করে কেনই বা টেস্টে অভিষেক করে দিচ্ছেন?

২০০৭ সালে ওডিআই তে অভিষেক হওয়া রোহিত শর্মার টেস্ট অভিষেক হয়েছিল কিন্তু ৬ বছর পর ২০১৩ সালে। আর যেহেতু দলে এতো তাড়াতাড়ি সুযোগ দিচ্ছেনই, তাহলে কেনই বা গুটি কয়েক বাদে বেশিরভাগকেই পর্যাপ্ত সুযোগ না দিয়েই দল থেকে ছুড়ে ফেলে দিচ্ছেন। অনেকটা মমতাজের লোকাল বাসের গানের মতো, আদর কইরা ঘরে তুলোস, ঘাড় ধইরা নামাস।

২০০৭ সালে বাংলাদেশের সাথে হেরে গ্রুপ রাউন্ডে বাদ পড়া ইন্ডিয়া আলাদিনের চেরাগ পেয়ে ২০১১ সালে চ্যাম্পিয়ন হয় নি। ২০১৫ সালে বাংলাদেশের সাথে হেরে গ্রুপ রাউন্ডে বাদ পড়া ইংল্যান্ড কিন্তু ২০১৯ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। সবকিছুর জন্য দরকার সঠিক প্ল্যান এবং বাস্তবায়ন। বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ডের আদৌ কি কোন লং টার্ম প্ল্যান আছে?

যে দেশে ১৬ বছর আগে অভিষেক হওয়া মুশফিক এখনো দলের সেরা ব্যাটসমান, ১৪ বছর আগে অভিষেক হওয়া সাকিব এখনো দলের সেরা খেলোয়াড়, ১৩ বছর আগে অভিষেক হওয়া তামিম এখনো দেশের সেরা ওপেনার, সেই দেশের ক্রিকেট কি আদৌ এগুচ্ছে? গত ১৫ বছরে সাকিব, মাশরাফি, মুশফিক, তামিমদের অর্ধেক মানের একটা প্লেয়ারও বের হয়ে আসতে পারে নি, সেই দেশের ক্রিকেট নিয়ে সত্যিই কি ভাল কিছু আশা করা যায়।

Check Also

এক সুনিল ছেত্রীর কাছেই হেরে গেল বাংলাদেশ

২০২২ বিশ্বকাপ আর ২০২৩ এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের লড়াইয়ে আজ কাতারের দোহায় মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ আর …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *