প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে একটি যুগোপযোগী, প্রযুক্তিগতভাবে সুসজ্জিত এবং আধুনিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি গতকাল দুপুরে ভাটিয়ারীস্থ বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে ৭৭তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্স সমাপনী উপলক্ষে আয়োজিত ‘রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ-২০১৯’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
সেনাবাহিনীসহ সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে তার সরকারের পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সরকার গঠন করার পর থেকেই নতুর নতুন পদাতিক ডিভিশন, ব্রিগেট, ইউনিটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলি। সশস্ত্র বাহিনী ও সেনাবাহিনীকে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। আমরা সশস্ত্র বাহিনীকে যুগোপযোগী এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করতে চাই।
নবীন সেনা সদস্যদের শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং চেইন অব কমান্ড মেনে চলার আহ্বান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন এবং অভিবাদন গ্রহণ করেন। পরে তিনি কৃতী ক্যাডেটটের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ২৩৪ জন বাংলাদেশী, ২৯ জন সৌদি, একজন ফিলিস্তিনি, একজন শ্রীলঙ্কানসহ মোট ২৬৫ জন ক্যাডেট কমিশন লাভ করেন।
ব্যাটালিয়ন সিনিয়র আন্ডার অফিসার সাবির নেওয়াজ শাওন ৭৭তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্সে সেরা চৌকস ক্যাডেট বিবেচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে গৌরবজনক ‘সোর্ড অব অনার’ লাভ করেন। এ ছাড়া কোম্পানি সিনিয়র আন্ডার অফিসার বরকত হোসেন সামরিক বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য ‘সেনাবাহিনী প্রধান স্বর্ণপদক’ পান।
পরে ক্যাডেটরা আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করেন ও প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে পিতা-মাতা ও অভিভাবকরা নবীন অফিসারদের র্যাংক-ব্যাজ পরিয়ে দেন এবং ক্যাডেটদের সাথে ফটোসেশনে অংশগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে প্রধানমন্ত্রী বিএমএ প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে পৌঁছলে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ তাকে অভ্যর্থনা জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আমরা আমাদের সশস্ত্রবাহিনীকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছি। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, এই মিলিটারি একাডেমি একদিন মানসম্পন্ন হবে এবং বিশ্ব তাকিয়ে দেখবে। আজকে সত্যিই সারা বিশ্বের মানুষ আমাদের মিলিটারি একাডেমির দিকে তাকিয়ে থাকে, প্রশংসা করে এবং অনেক দেশই এখানে প্রশিক্ষণ গ্রহণে আসে।
প্রধানমন্ত্রী বিশ্বশান্তি স্থাপনে জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের দক্ষ অংশগ্রহণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘যেখানেই আমাদের সশস্ত্র বাহিনী যাচ্ছে সেসব দেশই আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর প্রশংসা করে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সশস্ত্র বাহিনীর সাথে আমাদের সেনাবাহিনীকে কাজ করতে হয়। কাজেই আমরা সবসময় চাই, আমাদের সেনাবাহিনী সবসময় আধুনিক জ্ঞান সম্পন্ন হবে, সুপ্রশিক্ষিত হবে।’
ইউনুস আলীর প্রতি প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকালে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় গাইবান্ধা থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ডা: ইউনুস আলী সরকারের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। পরে ডা: ইউনুস আলীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। পরে প্রধানমন্ত্রী দলের প্রধান হিসেবে দলের পক্ষ থেকে সিনিয়র নেতাদের নিয়ে ডা: ইউনুস আলীর কফিনে আর একটি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। প্রধানমন্ত্রী ইউনুস আলীর পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান এবং মরহুমের রূহের শান্তি ও মাগফিরাত কামনা করেন।
এর আগে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদের পক্ষে তার সামরিক সচিব মরহুমের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া এবং চিফ হুইপ ও হুইপরা ইউনুস আলীর কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এর আগে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ইউনুস আলীর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। মন্ত্রীরা, ডেপুটি স্পিকার, চিফ হুইপ, হুইপরা, সংসদ সদস্যরা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ জানাজায় শরিক হন। এ সময় মরহুমের রূহের শান্তি ও মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। গাইবান্ধা-৩ আসন থেকে নির্বাচিত এমপি ডা: ইউনুস আলী শুক্রবার সকালে রাজধানীর এক হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর।নয়া দিগন্ত