Breaking News

‘এ দেশে থাকতে না চাইলে পাকিস্তানে যাও’, পুলিশ সুপারের মন্তব্যে উত্তপ্ত ভারত

বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে তাদের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছিল আগেই। সেই বিতর্কের রেশ কাটতে না কাটতেই আরও এক বার প্রশ্ন উঠে গেল উত্তরপ্রদেশ পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। এ বার তাদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক মন্তব্যের অভিযোগ উঠল। আর সেই অভিযোগ উঠেছে মেরঠের পুলিশ সুপার অখিলেশ নারায়ণের বিরুদ্ধে।

হিংসা চলাকালীন তার সেই মন্তব্যের একটি ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। সেই ভিডিয়োকে ঘিরেই এখন শোরগোল পড়ে গিয়েছে। ২ মিনিটেরও কম সময়ের সেই ভিডিয়োতে কয়েক জনকে শাসাতে দেখা গিয়েছে পুলিশ সুপারকে। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে গত কয়েক দিন ধরে উত্তরপ্রদেশের নানা প্রান্তে হিংসা ছড়ায়। বিক্ষোভকারী-পুলিশ সংঘর্ষে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় রামপুর,

সম্ভলপুর, লখনউ-সহ রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলা। গত শুক্রবার সেই হিংসার আঁচ সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছিল মেরঠে। সেই ঘটনায় পুরো রাজ্যের মধ্যে এই মেরঠেই হিংসার বলি হয়েছেন ৬ জন। সেই হিংসার চলাকালীন গত শুক্রবার মেরঠের সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বিশাল বাহিনী নিয়ে বেরিয়েছিলেন অখিলেশ নারায়ণ। তাঁর নেতৃত্বে পুরোদস্তুর প্রস্তুতি নিয়ে বেরিয়েছিল জেলা পুলিশের একটি দল।

টহল দেয়ার সময় একটি গলিতে এসে দাঁড়িয়ে যান পুলিশ সুপার। গলিতে তখন ফেজ টুপি পরা কয়েক জন দাঁড়িয়ে ছিলেন। হঠাত্ই তাঁদের শাসিয়ে পুলিশ সুপারকে বলতে শোনা যায়, ‘কোথায় যাবে? এই গলিকে আমি ঠিক করে ছাড়ব!” দাঁড়িয়ে থাকা ওই ব্যক্তিদের মধ্যে থেকে এক জন উত্তর দেন, ‘আমরা নমাজ পড়তে গিয়েছিলাম।’ উত্তরে আবার হুমকির সুর শোনা যায় পুলিশ সুপারের গলায়।

তিনি বলেন, ‘ঠিক আছে। তবে কালো ও নীল রঙের যাদের ব্যাজ বুকে লাগিয়েছ তোমরা, বলে দিও তারা যেন পাকিস্তান চলে যায়।’ এখানেই থামেননি পুলিশ সুপার। আরও বলেন, ‘যদি এ দেশে না থাকতে ইচ্ছা হয়, তা হলে চলে যাও ভাই। এখানে আসবে, কিন্তু গুণগান গাইবে অন্য দেশের, এটা চলবে না!”এই বলে দলবল নিয়ে কিছুটা এগিয়ে গিয়েছিলেন পুলিশ সুপার।

আবার ফিরে এসে ওই ব্যক্তিদের ফের শাসিয়ে তিনি বলেন, ‘গলির এক এক ঘর থেকে এক এক জনকে জেলে ভরব। শেষ করে দেব সবাইকে।’পুলিশ সুপারের এই ভিডিয়ো নিয়ে ইতোমধ্যেই চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে বিভিন্ন মহলে। তবে কেন তিনি এমন কথা বললেন, সে বিষয়টি স্পষ্ট নয়। তাঁর এমন মন্তব্যে হতবাক হয়েছেন অনেকেই।

যদিও পুলিশের তরফে এর ব্যাখ্যা দিয়ে দাবি করা হয়েছে, বেশ কিছু দুষ্কৃতী ওই এলাকায় আছে, যারা পাকিস্তানের হয়ে নানা রকম বিবৃতি দিচ্ছে। তাই পুলিশ সেখানে গিয়েছিল সেই সব দুষ্কৃতীদের খুঁজে বার করতে। শুধু তাই নয়, পাশাপাশি তারা এটাও দাবি করেছে, হিংসার সময় ওই এলাকা থেকেই পুলিশকে লক্ষ্য করে ব্যাপক ইট-পাথর ছোড়া হয়েছিল। বহু পুলিশকর্মী আহত হয়েছিলেন তাতে।

এই প্রথম নয়। হিংসা চলাকালীন কানপুরের বাবু পুরওয়া এলাকাতেও পুলিশকে এমন মন্তব্য করতে দেখা গিয়েছিল। ওই এলাকায় হিংসা থামাতে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে বিক্ষোভকারীরা পাথর ছুড়তে থাকেন। তখনই পুলিশকে বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক মন্তব্য এবং গালিগালাজ করতে শোনা যায় বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, এলাকার বাসিন্দাদের শাসিয়ে বলতে শোনা যায়, ‘এই দেশ ছাড়া করব তোদের।’ সেই ঘটনার একটি ভিডিয়োও প্রকাশ্যে আসে।

শুক্রবারই মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ দাবি করেন, রাজ্য প্রশাসন বিক্ষোভকারীদের যে ভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে, তাতে তারা চুপ হয়ে গিয়েছেন। তিনি আগেই সতর্ক করেছিলেন, যারা সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করছেন, তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে সরকার ক্ষতিপূরণ করবে। উত্তরপ্রদেশ পুলিশ জানিয়েছে, তারা ইতিমধ্যেই ৪৯৮ জনকে চিহ্নিত করেছে, যাদের মধ্যে ১৪৮ জন শুধু মেরঠের। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে হিংসার ঘটনায় গোটা রাজ্য থেকে হাজারেরও বেশি লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। আনন্দবাজার পত্রিকাdailynayadiganta.com

Check Also

গুম হওয়া পরিবারের আকুতি ওদের ফিরিয়ে দিন

এক হাতে স্বামীর ছবিসংবলিত একটি প্ল্যাকার্ড বুকে জড়িয়ে আর অন্য হাতে ছোট্ট সন্তানকে কোলের কাছে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *