দেশে প্রাদেশিক ব্যবস্থা প্রবর্তনসহ ১৮ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের দলের নবম কাউন্সিলে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় এসে ১৮ দফা কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন।
৯ বছর ক্ষমতায় থেকে সেই কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে উন্নয়ন-সমৃদ্ধির নতুন বাংলাদেশ উপহার দিয়েছিলেন। অতীতের সেই অভিজ্ঞতার আলোকে নতুন প্রজন্মের জন্য যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুনভাবে ১৮ দফা কর্মসূচি প্রণয়ন করেছি। হয়তো সময়ের দাবিতে আরও কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।
শনিবার রাজধানীর রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন চত্বরে জাতীয় পার্টির নবম কাউন্সিলে ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ১. প্রাদেশিক ব্যবস্থা প্রবর্তন- জাতীয় পার্টি এরশাদ প্রণীত প্রাদেশিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে চায়। এর মাধ্যমে প্রশাসন ও ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে। এ সংস্কার ব্যতীত সমস্যাসংকুল বিশাল জনসংখ্যার এ দেশে সুষ্ঠুভাবে প্রশাসন পরিচালনা করা সম্ভব নয়। যদিও এটা দেশের মূল কাঠামোর/প্রশাসনিক ব্যবস্থায় আমূল সংস্কারের বিষয়- এরপরও মনে করি এটা বাস্তবায়ন সম্ভব।
২. নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার- নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার করে আনুপাতিক ভোটের ভিত্তিতে প্রতিনিধি নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে। এক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতি পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত সব সদস্য যেমন- সংসদ সদস্যরা দেশের ভোটারদের ভোটের ভিত্তিতে নির্বাচিত হবেন, শুধু একটি নির্দিষ্ট এলাকার মানুষের ভোটে নয়। এ বিষয়ে বেশ কয়েকটি পদ্ধতি আছে। পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশে এখন এ ‘আনুপাতিক হারে প্রতিনিধিত্ব নির্বাচন’ ব্যবস্থা প্রচলন করা হয়েছে। নতুন নতুন দেশ এ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
৩. শান্তি ও সহাবস্থানের রাজনীতি প্রবর্তন- সব ধর্ম-শ্রেণির মানুষের ও বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের দলের মতামতের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনায় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিকাশ ত্বরান্বিত করা হবে। ৪. পূর্ণাঙ্গ উপজেলা ব্যবস্থা প্রবর্তন- উপজেলা আদালত ও পারিবারিক আদালতসহ পূর্ণাঙ্গ উপজেলা ব্যবস্থা চালু করতে চায় জাতীয় পার্টি। নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানদের কাছে উপজেলার সব নির্বাহী ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
৫. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা/বিকেন্দ্রীকরণ- বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে। বিচার বিভাগকে বিকেন্দ্রীকরণ করে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে হাইকোর্টের বেঞ্চ স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হবে। ৬. ধর্মীয় মূল্যবোধ- ধর্মীয় মূল্যবোধকে প্রাধান্য দেয়া হবে। ইমাম-মোয়াজ্জিন, মন্দিরের পুরোহিত ও গির্জার ধর্মযাজকদের জন্য ভাতা প্রদান করা হবে।
৭. কৃষকের কল্যাণসাধন- কৃষক পর্যায়ে কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা হবে। কৃষি উপকরণের কর-শুল্ক মওকুফ করা হবে। সহজ শর্তে কৃষিঋণ সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। ৮. সন্ত্রাস দমনে কঠোর ব্যবস্থা-সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও দুর্নীতি দমনে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
৯. জ্বালানি ও বিদ্যুৎ- সারা দেশে পর্যায়ক্রমে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। ১০. ফসলি জমি সংরক্ষণ- একমাত্র জাতীয় অর্থনৈতিক স্বার্থের বিবেচনায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান ব্যতীত- কৃষিজমি বা ফসলি জমি নষ্ট করে কোনো স্থাপনা কিংবা আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা বন্ধ করা হবে
১১. খাদ্য নিরাপত্তা- খাদ্যে ভেজাল কিংবা খাদ্যে বিষাক্ত পদার্থ মেশানো বন্ধ করা হবে। ১২. শিক্ষাপদ্ধতির সংশোধন- শিক্ষাপদ্ধতি সংশোধনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের টিউশন নির্ভরতা কমানোসহ কোচিং ব্যবসা বন্ধ করা হবে। সুলভ মূল্যে শিক্ষাসামগ্রী সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে। øাতক শ্রেণি পর্যন্ত নারী শিক্ষা অবৈতনিক করা হবে।
১৩. স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণ- স্বাস্থ্যসেবা খাত উন্নত করা হবে। সবার জন্য স্বাস্থ্য কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। ইউনিয়নভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র কার্যকর করে সেখানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করা হবে। ১৪. সড়ক নিরাপত্তা- সড়ক দুর্ঘটনা রোধকল্পে করণীয় নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন করা হবে।
১৫. গুচ্ছগ্রাম পথকলি ট্রাস্ট পুনঃপ্রতিষ্ঠা- গুচ্ছগ্রাম, পথকলি ট্রাস্ট পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে। যারা অভাবের তাড়নায় কিংবা নদীভাঙনে ছিন্নমূল হয়ে পড়েছে- তাদের গুচ্ছগ্রামে পুনর্বাসন করা হবে। ১৬. পল্লী রেশনিং- পল্লী অঞ্চলের মানুষের ন্যূনতম নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির জন্য পল্লী রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা হবে। গ্রামের মানুষের কাছে রেশনিং ব্যবস্থায় চাল-ডাল-তেল-চিনি পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে- যাতে গ্রামের মানুষ নিয়মিতভাবে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পেতে পারে।
১৭. শিল্প ও অর্থনীতির অগ্রগতি সাধন- দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। দেশের অঞ্চলে অঞ্চলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস করার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। শিল্পঋণ সহজলভ্য এবং নতুন শিল্প স্থাপন করা হবে। বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা হবে। পুঁজিবাজারে আস্থা ফিরিয়ে এনে ক্ষুদ্র বিনিয়োগ সম্প্রসারিত করার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে এবং
১৮. ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষা- ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর স্বার্থে তাদের জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে সংসদে সংরক্ষিত আসন এবং আনুপাতিক হারে সরকারি চাকরি, উচ্চশিক্ষা সুযোগ নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে।jugantor