জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষনেতা গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, দেশের মানুষ অন্ধ না, দেশের মানুষের বিচার করার ক্ষমতা আছে। সংবিধান অনুযায়ী দেশ চলছে না। ক্ষমতাসীনরা নিজেদের ভোটে নির্বাচিত বললেও জনগণ তা মনে করে না। সরকারের পক্ষ থেকে যে উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু কত ঋণের বোঝা বাড়ছে? কত টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে?
তারা উন্নয়নের দাবি করছে সেটা করুক, কিন্তু এসব ব্যাপারে সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের জবাবদিহি চাওয়ার অধিকার রয়েছে। আমরা আইয়ুব খানের আমল দেখেছি, উন্নয়নের বক্তব্য শুনতে শুনতে আইয়ুব খানের পতনও দেখেছি। উন্নয়নের কথা বলে বলে যে পতন হয়, এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ ইয়াহিয়া খান ও আইয়ুব খান। রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির কেন্দ্রীয় কাউন্সিল উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব। এর আগে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন তিনি। সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাঈদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট মোহসীন রশিদ, বিকল্প ধারার সভাপতি নুরুল আমীন বেপারী, বিকল্প ধারার মহাসচিব শাহ আহমেদ বাদল, জেএসডির সহ-সভাপতি তানিয়া রব, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি প্রমুখ। দ্বিতীয় পর্বে রুদ্ধদ্বার কাউন্সিল অধিবেশন হয়।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে কামাল হোসেন বলেন, ‘নির্বাচন করে যেন তারা (আওয়ামী লীগ) মজা পেয়ে গেছেন। ভোট না পেয়ে তারা বলে বৈধতা পেয়েছি। দেশের মানুষ তো অন্ধ নয়। এভাবে তারা পার পাবেন না। এসব করে পৃথিবী থেকে কেউ পার পায়নি, এ ধরনের মিথ্যা বলে কেউ পার পায়নি। সরকারকে বলব, আপনারা নির্বাচন দিন।’ প্রথমে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে, নির্বাচন কমিশন হতে হবে সৎ ও স্বচ্ছ। এই দাবিতে জনগণকে আন্দোলনে শামিল করাতে ঐক্যফ্রন্টভুক্ত দলগুলোর নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, বিএনপি, ২০-দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যদি বর্তমান সংসদকে অবৈধ দাবি করে থাকে, তবে ঐক্যফ্রন্টের যে আটজন সংসদে গেছেন তারা কেন অবৈধ হবেন না? তিনি বলেন, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে কোনো ভোট হয়নি। দেশের মানুষ তাদের ভোট দিতে পারেনি। সাড়ে তিন শ সদস্যের এই অবৈধ সংসদ। কাদের সিদ্দিকী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, ‘এই দেশে কেউ চিরস্থায়ী না। শেখ হাসিনাও চিরস্থায়ী না।
আমি এখান থেকে তাদের চ্যালেঞ্জ করলাম, বাংলাদেশের কোনো নির্বাচনে চুরি না করে নৌকা যদি পাস করে, তাহলে আমি সমুদ্রে গিয়ে ডুব দেব।’ জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব আওয়ামী সরকারের পতনের আশাবাদ ব্যক্ত করে দেশে একটি অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য জাতীয় সরকারের দাবি জানান।
তিনি বলেন, স্বৈরশাসনের পতনের পর রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক সংকট নিরসনে জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। এ জন্য রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী ও বুদ্ধিজীবী শক্তির সংলাপের মাধ্যমে তা গঠনের রূপরেখাও তুলে ধরেন তিনি। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘সারা দেশে যে দুঃশাসন চলেছে, সেই দুঃশাসনের ইতিহাস লম্বা।
এই রাত গেলে পরে যে রাত আসবে, সেই রাত (২৯ ডিসেম্বর) বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কালো রাত। ওই রাতে বাংলাদেশের ১০ কোটি ভোটারের ভোট সমস্ত রাষ্ট্র মিলে লুট করে, ডাকাতি করে নিয়ে গেছে। এর বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিবাদ করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘আমি এই সরকার মানি না। আজ মানিনি, কাল মানিনি, যত দিন পর্যন্ত তাদের ক্ষমতা থেকে সরাতে না পারব, ততদিন মানব না।’bdpratidin