
মুহাম্মদ আবু তালেব :
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে সবচেয়ে বড় অপ্রিয় সত্যটি হলো চলমান নাশকতা ও দুর্বৃত্তির বিরুদ্ধে কথা বলা হয় না। তাছাড়া দুর্বৃত্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধটি তো অবিরাম; তাই সে যুদ্ধে তাদের বিরুদ্ধে সত্য কথাটি বার বার বলতে হয়। তাতে যেমন সত্য বলার সওয়াব মিলে, তেমনি বাঁচা যায় সত্য লুকানোর কবিরা গুনাহ থেকে। বাংলাদেশ প্রসঙ্গে অতি অপ্রিয় সত্য কথাটি হলো, দেশটিতে জুলুম-নির্যাতনের সবচেয়ে নৃশংস ও সবচেয়ে বড় অপরাধী শক্তিটি পেশাদার চোর-ডাকাত বা খুনি-সন্ত্রাসীগণ নয়। বরং সেটি খোদ রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সমূহ। সভ্য দেশের সরকারি প্রশাসন, পুলিশ, সেনাবাহিনী ও আদালত জনগণকে অপরাধী দুর্বৃত্তদের হাত থেকে জনগণের জান, মাল ও ইজ্জতকে প্রতিরক্ষা দেয়। এবং অসভ্য দেশে এরাই জনগণের উপর চড়াও হয় জঘন্য অপরাধী রূপে। তখন জনগণ এসব রাষ্ট্রীয় আপরাধীদের হাতে জিম্মি হয়। রাজপথে ও জেলে তাদের উপর নির্যাতন করা হয়। বিচার-বহির্ভুত ভাবে হত্যা করা হয়। এবং ফাঁসিতে ঝুলানো হয়। বাংলাদেশে এরূপ নৃশংস রাষ্ট্রীয় দুর্বৃত্তির মূল নায়ক হলো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীগণ। তাদের নেতৃত্বে দেশের পুলিশ, প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও আদালতবাহিনী পরিণত হয়েছে নাশকতা ও দুর্বৃত্তির হাতিয়ারে।
নাশকতার কাজে ও নিরস্ত্র মানুষ হত্যায় পুলিশ, সেনাবাহিনী, র্যাব ও বিজিবি যে কতটা জোটবদ্ধ, নৃশংস ও বর্বর হতে পারে সেটির প্রমাণ মেলে ২০১৩ সালের ৫’মের রাতে। সে রাতে ঢাকার মতিঝিলের শাপলা চত্ত্বরে তারা শত শত নিরস্ত্র মানুষ নিহত ও আহত করেছিল। এটি ছিল নিরেট গণহত্যা্। বাংলাদেশের সকল ডাকাত বা সকল খুনি-সন্ত্রাসী সারা বছরে যত মানুষকে হত্যা করতে পারিনি সেখানে সরকারি এ খুনি বাহিনীগুলি একরাতে তা করেছে। ৫/০৫/১৩ তারিখে ছিল হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচী। এ অবরোধ কর্মসূচী ছিল শান্তিপূর্ণ। তাদের উদ্দেশ্য ছিল ১৩ দফা দাবী আদায়। অথচ শান্তিপূর্ণ সমাবেশের উপর চাপিয়ে দেয়া হয় নৃশংস গণহত্যা। দৈনিক যুগান্তর ১২/০৫/২০১৩ তারিখে খবর ছেপেছিল, শেখ হাসিনার সরকার ৭, ৫৮৮ জন্য অস্ত্রধারি সেপাইকে এ কাজে নামিয়েছিল। তাদের ১,৩০০ জন এসেছিল র্যাব থেকে, ৫,৭১২ জন পুলিশ থেকে এবং ৫৭৬ জন বিজিবী থেকে। যেন প্রকাণ্ড এক যুদ্ধ। পত্রিকাটি আরো লিখেছে, তারা এক লাখ ৫৫ হাজার গোলাবারুদ ব্যবহার করেছে। প্রশ্ন হলো ১৯০ বছরের ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ আমলে বা ২৪ বছরের পাকিস্তান আমলে কোনদিনও কি এতবড় বাহিনী জনগণের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামানো হয়েছে? এবং এতগুলি ছোড়া হয়েছে? সরকারি বাহিনী আরেকটি অপরাধ কর্ম ঘটালো ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরে। এবং সেটি নির্বাচনে চুরির ক্ষেত্রে। বাংলাদেশের সকল চোর মিলে যতবড় চুরির কর্ম এ অবধি করতে পারিনি -তা করলো দেশের সরকারি বাহিনী। তাতে চুরি হয়ে গেছে সকল দেশবাসীর ভোটদানের স্বাধীনতা।
বনেজঙ্গলে মানুষের জীবনের জানমালের নিরাপত্তা থাকে না। কারণ সেখানে চলে পশুর রাজত্ব। সেখানে কোটকাচারি যেমন থাকে না, তেমনি পুলিশও থাকে না। খুনের দায়ে বন্য বাঘ-ভালুককে হাজতে তোলা বা তাদের বিরুদ্ধে বিচার বসানোর রীতিও বনে জঙ্গলে নাই। পশু তাই অন্যের প্রাণনাশ করেও হুংকার দিয়ে চলা ফেরা করে। কিন্তু মানুষ তো পশু নয়; নিজেদের জান ও মালের নিরাপত্তা দিতে তারা রাষ্ট্র গড়ে। পুলিশ এবং সেনাবাহিনীও পালে। সে রাষ্ট্র পরিচালনায় সভ্য ও দায়িত্ববান সরকারও নির্বাচন করে। কিন্তু বাংলাদেশে কোথায় সে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা? বাংলাদেশ কি জঙ্গল থেকে আদৌ ভিন্নতর? জঙ্গলে যেমন খুন হলে বিচার হয় না, সেটি বাংলাদেশেও হয় না। তাই শাপলা চত্ত্বরে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করা হলেও কোন খুনিকে আদালতে তোলা হয়নি। কারো কোন শাস্তিও হয়নি। জঙ্গলে তো সেটিই হয়।
একটি সরকার কতটা সভ্য বা অসভ্য -সেটি কোন সরকারেরই গায়ে লেখা থাকে না। সেটি নির্ভূল ভাবে ধরা পড়ে জনগণের জানমাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা দিতে সরকার কতটা তৎপর ও সফল তা থেকে। তাই যে কোন সভ্য সরকারের রীতি হয়, কোন নাগরিক দেশে বা বিদেশে, গভীর সমুদ্রে বা গহীন জঙ্গলে হঠাৎ হারিয়ে গেলে -তার জীবন বাঁচাতে দিবারাত্র তল্লাশী করা। তেমনি কোন ব্যক্তি খুন হলে সে খুনের বিচারে বছরের পর বছর -এমন কি দশকের পর দশক ধরে লাগাতর তদন্ত করে। সরকার কতটা সভ্য ও জনদরদী, সে বিচার হয় জনগণের নিরাপত্তায় এরূপ আপোষহীন অঙ্গিকারে। কিন্তু যে দেশের সরকার লক্ষাধিক মানুষের সমাবেশে পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবী ও র্যাবকে রাতের আঁধারে ব্রাশফায়ারে নির্বিচারে মানুষ হত্যার অনুমতি দেয়, তাকে কি আদৌও সভ্য বলা যায়? এমন রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীকে কি আদৌও সুস্থ্য বলা যায়? এমন সরকার প্রধান ও তার মন্ত্রীদের পশু বললেও তো পশুর অবমাননা হয়। কারণ আফ্রিকা বা আমাজানের গহীন বনে সকল বন্য পশুরা মিলেও কি কোন কালে এক রাতে এতো মানুষকে বধ করেছে? তাছাড়া পশু ক্ষুধার্ত না হলে শিকার ধরে না। ধরলেও এক সাথে একটার বেশী নয়। তাই মতিঝিলে যেরূপ শত শত লাশ পড়ে থাকতে দেখা গেল -সেটি কোন জঙ্গলে কোন কালেই দেখা যায়নি। বিশ্বের কোন জঙ্গলে এ অবধি এরূপ অসভ্য বর্বরতাটি ঘটেনি। অথচ সেটিই বাংলাদেশে প্রকান্ড ভাবে ঘটালো হাসিনা সরকার।
ডাকাত দলের সর্দার তো নিজ দলের ডাকাতের বিচার করে না। সেটি করলে তো তার দল বাঁচে না। বরং ডাকাত সর্দারের এজেন্ডা হয়, দলের সদস্যদের ডাকাতির পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া এবং সবচেয়ে বড় ডাকাতদের আরো পুরস্কৃত করা। সে অভিন্ন রীতি দুর্বৃত্ত শাসকদের। হালাকু-চেঙ্গিসেরা কি তাদের দলের কোন খুনিকে বিচার করেছে? শেখ মুজিবের আমলে ৩০ হাজারের অধিক মানুষ খুন হলেও একটি খু্নেরও কি বিচার হয়নি। বরং সিরাজ শিকদারকে খুন করার পর শেখ মুজিব সংসদে দাঁড়িয়ে উল্লাসভরে বলেছেন, “কোথায় আজ সিরাজ সিকদার?” সে অভিন্ন নীতি শেখ হাসিনারও। ফলে হাসিনার দলীয় ক্যাডারগণ পেয়েছে গুম, খুন, ধর্ষণ, ও নির্যাতনের পূর্ণ স্বাধীনতা। ফলে জাহাঙ্গির নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রলীগ ক্যাডার ধর্ষণে সেঞ্চুরি করলেও হাসিনা তার বিচার করেনি। বিনা বিচারে বিদেশ যাওয়ার সুযোগ করে দেয়। ফলে এরূপ দুর্বৃত্তদের শাসনে প্লাবন আসে দুর্বৃত্তিতে। সমগ্র রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো তখন গুম, নির্যাতন ও মানব খুনের হাতিয়ারে পরিণত হয় । প্রতিযুগের হালাকু-চেঙ্গিজ-হিটলারেরা বেছে বেছে সমাজের সবচেয়ে ভয়ানক চরিত্রের খুনিদের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বসিয়েছে। সেটি ঘটেছে মুজিব ও হাসিনার আমলেও। তাই নিরীহ নাগরিক হত্যার কাজটি এখন আর শুধু পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী বা বিজিবীর মধ্যে সীমিত নয়। বরং নৃশংসতায় নেমেছে প্রশাসনের কর্মকর্তা, দলীয় নেতানেত্রীর সাথে আদালতের বিচারকগণও। বিচারে সরকারি দলের কোন ক্যাডারের শাস্তি হলে দেশের প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টের কাজ হয়েছে তাকে মাফ করে দেয়া এবং দ্রুত জেলের বাইরে নিয়ে আসা। সম্প্রতি (ফেব্রেয়ারি, ২০২১) সেটির এক প্রামাণ্য দলিল তুলে ধরেছে আল-জাজিরা টিভি চ্যানেল। কোন সভ্য দেশে কি এমনটি ভাবা যায়?
দেশে এতো খুন, এতো গুম, এতো জুলুম, পত্রিকা ও টিভি অফিসগুলোতে এতো তালা ও এতো চুরিডাকাতির পরও শেখ হাসিনার দাবী, দেশ চলছে মদিনা সনদ অনুযায়ী। মশকরা আর কাকে বলে! প্রশ্ন হলো, মদিনা সনদ কি -সেটি কি তিনি বুঝেন? গণতন্ত্রের সাথে তার পিতার মশকরা জনগণ দেখেছে। গণতন্ত্রের কথা বলে ১৯৭০’য়ে ও ১৯৭৩’য়ে ভোট নিয়েছিলেন শেখ মুজিব। অথচ উপহার দিয়েছিলেন একদলীয় বাকশালী স্বৈরাচার। নিষিদ্ধ করেছিলেন সকল বিরোধী দল ও বিরোধী পত্র-পত্রিকা। স্বাধীনতার নামে মুজিবের মুখে খই ফুটতো। অথচ তিনিই ডেকে এনেছিলেন ভারতীয় সামরিক বাহিনীর অধীনতা। দেশের অভ্যন্তরে হাজার হাজার বিদেশী সৈন্য থাকলে কি স্বাধীনতা থাকে? মুজিব স্বাক্ষর করেছিলেন ভারতের সাথে ২৫ সালা দাসত্ব চুক্তি। সে চুক্তির বদৌলতে ভারত পেয়েছিল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যখন ইচ্ছা তখন সৈন্য সমাবেশের অধিকার। একমাত্র সে অধিকার পাওয়ার পরই ভারত ১৯৭২ সালে নিজ সৈন্য বাংলাদেশের অভ্যন্তর থেকে সরিয়ে নিতে রাজী হয়। ইসলামের বিরুদ্ধে মুজিবের বিশ্বাসঘাতকতা কি কম? ১৯৭০ সত্তরের নির্বাচনে মুজিব ভোট নিয়েছিলেন এ ওয়াদা দিয়ে যে, কোরআন সুন্নাহর বিরুদ্ধে কোন আইন প্রণয়ন করা হবে না। অথচ ক্ষমতায় এসেই সে ওয়াদা তিনি ভূলে যান। কোরআন সুন্নাহর প্রতি সম্মান প্রদর্শণ দূরে থাক, কোরআনী বিধানের প্রতি অঙ্গিকার নিয়ে রাজনীতিকেই তিনি নিষিদ্ধ করেন। তালা ঝুলিয়ে দেন জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলামী এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলামসহ সবগুলো ইসলামী দলের অফিসে। অপর দিকে হাসিনাও তার পিতার ন্যায় গণতন্ত্রের নিজস্ব মডেল পেশ করে। সেটি হলো, নির্বাচনের আগের রাতের ভোট ডাকাতি। সেটি হয়েছে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে।
অসভ্য ভাবে বাঁচায় খরচ লাগে না। এটি স্রোতের টানে গা ভাসিয়ে দেয়ার মত। কিন্তু স্বাধীনতা ভাবে ও সভ্য ভাবে বাঁচার খরচটি বিশাল। তখন জনগণের সভ্য রুচি ও ঈমানের পরীক্ষা হয়। পরীক্ষায় পাশের তাড়নায় মুসলিম জীবনে তাই জিহাদ আসে। এবং সে জিহাদে জান ও মালের বিনিয়োগও আসে। তাই একটি দেশে দুর্বৃত্তদের অসভ্য শাসন দেখেই বলা যায়, সে দেশের মানুষ সভ্য শাসন প্রতিষ্ঠার খরচটি দেয়নি। এরই ফলে বাঁচছে অসভ্য শাসনের যাতনা নিয়ে। প্রাথমিক যুগের মুসলিমগণ যেরূপ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতার জন্ম দিয়েছিলেন তার খরচটি ছিল বিশাল। শতকরা ৬০ ভাগের বেশী সাহাবাকে সে কাজে শহীদ হয়েছেন। বুঝতে হবে, মানব সভ্যতার সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ তাজমহল, পিরামিড বা চীনের দেয়াল গড়া নয়। বরং সেটি সভ্য মানুষ, সমাজ ও সভ্যতার নির্মাণ। একাজের জন্যই পরাকালে জান্নাত মিলবে। এবং সমগ্র মানব ইতিহাসে এ কাজে মুসলিমদের তূলনা নেই। লাগাতর জিহাদ এবং সে জিহাদে জান ও মালের বিপুল কোরবানীর মাধ্যমে নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবাগণ সমগ্র আরব ভূমিকে দুর্বৃত্ত শক্তির অধিকৃতি থেকে পূর্ণভাবে মুক্তি দিয়েছিলেন। নিজে রাষ্ট্রপ্রধানের আসনে বসে খোদ নবীজী (সা:) সে জিহাদে নেতৃত্ব দিয়েছেন। রাজনীতির অঙ্গণে এটিই হলো নবীজী (সা:)’র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সূন্নত।
দলিল জনগণের ব্যর্থতার
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্তি ও নাশকতার খতিয়ানটি বিশাল। তবে জনগণের ব্যর্থতাও কি কম? দেহ থাকলে রোগভোগ থাকে। তেমনি দেশ থাকলে দেশের শত্রুও থাকে। জনগণকে তাই শুধু প্রাণনাশী বিষ, বিষাক্ত শাপ ও হিংস্র পশুদের চিনলে চলে না। চিনতে হয় দেশের ভয়ানক শত্রুদেরও। এবং লাগাতর লড়তে হয় সেসব শত্রুদের বিরুদ্ধেও। জাতি তো এভাবেই শত্রুদের হাতে অধিকৃত হওয়া থেকে বাঁচে। এজন্যই আমৃত্যু লড়াই দেখা গেছে নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবীদের জীবনে। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে সে চেনার কাজটি হয়নি। লড়াইয়ের কাজটিও হয়নি। চেনার কাজটি হলে কি যে ব্যক্তি ও যে দল জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিল, প্রতিষ্ঠা দিল নৃশংস বাকশালী স্বৈরাচার, হত্যা করলো ৩০ হাজারের বেশী বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী, প্রতিষ্ঠা দিল ভারতের গোলামী এবং নাশকতা ঘটালো ইসলাম ও ইসলামী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে -তাকে কি জনগণ কখনো জাতির পিতা ও বঙ্গবন্ধু বলতো? অনেকে আবার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালীও বলে। সভ্য জনগণ তো এমন নৃশংস অপরাধীদের ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে ফেলে; মাথায় তোলে না। মুখের কথার মধ্য দিয়ে তো ব্যক্তির কথা বলে। কথার মধ্যেই তো মানুষের ঈমানদারী ও বেঈমানী। তখন ধরা পড়ে চেতনার অসুস্থ্যতা। শত্রু ও চিহ্নিত অপরাধীকে পিতা ও বন্ধু বলার মধ্যে কোথায় সে বিবেকবোধ? কোথায় সে ঈমানদারী? কোথায় সে চেতনার সুস্থ্যতা? এটি তো শয়তানকে মহাত্ম বলা! আর লড়াইয়ের কাজটি হলে তো দুর্বৃত্ত শাসনের বিরুদ্ধে জিহাদ শুরু হতো।
গরু-ছাগলের পানাহার ছাড়া কোন সামাজিক বা নৈতিক দায়িত্ব নাই। কিন্তু মানুষের দায়িত্ব তো বিশাল। তাকে তো বহুবিধ নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব পালন করতে হয়। যার জীবনে সে দায়িত্বপালন নাই -তাকে কি গরু-ছাগলের চেয়ে উন্নততর বলা যায়? ইসলামে দায়িত্ব পালনের সে মূল হাতিয়ারটি হলো জিহাদ। এ ইবাদতে ঈমানদার ব্যক্তি লাগাতর বিনিয়োগ ঘটাতে হয় তাঁর মেধা, শ্রম, সময়, অর্থ ও রক্তের। নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাত ও তাসবিহ-তাহলিলে এমন নিবিড় বিনিয়োগ হয় না। এজন্য জিহাদই হলো ঈমানদারের সর্বোচ্চ ইবাদত। ঈমানের আসল পরীক্ষা হয় জিহাদের এ অঙ্গণে। এ পবিত্র ইবাদতের মাধ্যমেই ঈমানদারগণ রাষ্ট্র থেকে দুর্বৃ্ত্তদের নির্মূল করে এবং প্রতিষ্ঠা দেয় ইনসাফ ও ন্যায়ের। এবং বিজয় আনে ইসলামের। তখন নির্মিত হয় সভ্যতর ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র। যে সমাজে জিহাদ নাই সে সমাজে প্রতিষ্ঠা পায় দুর্বৃত্তদের শাসন। তখন বিজয়ী হয় শয়তানের এজেন্ডা। বাংলাদেশ তো তারই প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। তাই বাংলাদেশ শুধু আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্তি ও নাশকতার দলিলই নয়, এটি জনগণের বেঈমানী ও নিদারুন ব্যর্থতার দলিলও।